করোনাভাইরাসের প্রভাবে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম

চীনে করোনাভাইরাসের প্রভার দীর্ঘায়িত হবে এমন আশঙ্কায় ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। যদিও চীনে নববর্ষের ছুটির কারণে গত ২০ জানুয়ারি থেকেই দেশটির আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
স্টার ফাইল ছবি

চীনে করোনাভাইরাসের প্রভার দীর্ঘায়িত হবে এমন আশঙ্কায় ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। যদিও চীনে নববর্ষের ছুটির কারণে গত ২০ জানুয়ারি থেকেই দেশটির আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীন থেকে পণ্য আমদানি ব্যাহত হবে এমন গুজব ছড়িয়েই এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে মনে করেন ক্রেতারা।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সব ধরনের পেঁয়াজ ৩০ টাকা, আদা ৪০ টাকা এবং রসুন ৬০ টাকা করে দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে।

পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। তাছাড়াও চীনা পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা এবং তুরস্কেও পেঁয়াজ ৩০ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও মিয়ানমার আদা প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। বাজারে এখন চীনা আদা পরিমাণে কম হলেও এ পণ্যটির দামও ৩৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে।

এছাড়া চীনা রসুনের দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।

পাইকারী বাজারে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের কাজির দেউরি, চকবাজার, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাটসহ সব খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারেও এসব পণ্য কেজিতে আরো ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চকবাজার কাঁচা বাজারের সওদাগর ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী আলম হোসেন।

একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্যই বাজারে গুজব ছড়িয়েছে যে চীন থেকে পণ্য আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। এভাবে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গত এক সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কয়েক ধাপে বাড়িয়েছেন।  

এদিকে বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেশকিছু ভোগ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লেও এ বিষয়ে এখনও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বকসি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে অবশ্যই বাজার মনিটারিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত চীন আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। ১০ ফেব্রুয়ারির পরে জানা যাবে পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসাইন একই দাবি করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা আসে তাহলে আমরা অবশ্যই বাজার মনিটরিংয়ে নামব।

মেসার্স মেহের ট্রেডার্সের ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হতে পারে এমন আশঙ্কায় সব ধরনের চীনা পণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে।

তিনি বলেন, চীনে ২০ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নববর্ষের ছুটি। এজন্য এ সময়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন চীনের ব্যবসায়ীরা। তার ওপর দেশটিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ছুটি শেষেও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অদূর ভবিষ্যতে সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা থেকেই ব্যবসায়ীরা পণ্যের মজুদ বাড়িয়ে চলেছেন।

তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই বলে মনে করছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চীনের করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘ হলে সব সেক্টরেই এর প্রভাব পড়বে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোন প্রভাবের কথা আমরা জানি না। আগামী রমজানকে ঘিরে আমরা চীন থেকে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খুলেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। ১০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে বেশকিছু চালানের শিপমেন্ট শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে কম প্রভাব পড়বে। এককভাবে এসব ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের খুব একটা নেই। আবার বিকল্প বাজার থেকেও এসব পণ্য আমদানি করে থাকি।

তিনি বলেন, চীনে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাব পড়েছে। চীন বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল ও গম আমদানি করে থাকে। চীনের আমদানি কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে বিশ্ব বাজারে তেল ও গমের দাম এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে।

ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, করোনাভাইরাসের গুজব ছড়িয়ে বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানিয়েছি বাজার মানিটরিংয়ের জন্য। প্রশাসনের আচরণ দেখে মনে হয় বাজার মানিটরিং করা তাদের কাজ না। রমজানের মতো সারা বছর বাজার মনিটরিং করা হলে তবেই বাজার স্বাভাবিক থাকবে।  

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৪০ হাজার ৩৮৩ টন। রসুন আমদানি হয়েছে ১৯ হাজার ২০০ টন এবং আদা আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ১৬৬ টন। এর মধ্যে চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ২৮৭ টন, রসুন ১৮ হাজার ৬৩৮ টন এবং আদার পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৪৫০ টন।

Comments

The Daily Star  | English

Wage growth still below inflation

Unskilled workers wage grew 8.01% in September this year when inflation was 9.92%

3h ago