ঢাকা সিটি নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের কম
গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি নির্বাচনের ৭০৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশেরও কম। গতকাল নির্বাচন কমিশন দুই হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রের তথ্য প্রকাশ করে।
এই তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ২৯ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে এই হার ২৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে এতো কম ভোট গণতন্ত্রের জন্য অশুভ লক্ষণ। সেই সঙ্গে এটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থারও প্রকাশ।
২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে ২০ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছিলো এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৮০টি। এর মধ্যে ৭৫টি ছিলো ডিএনসিসি অঞ্চলে।
কেন্দ্রভিত্তিক হিসাবে এই নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে কাফরুলের শহীদ পুলিশ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিলো দুই হাজার ১১ জন।
ডিএনসিসি অঞ্চলে ৫৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১০ শতাংশেরও কম।
ডিএসসিসি নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে কামরাঙ্গীরচরের লিলি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। সেখানে মাত্র ৪ দশমিক ১২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
তথ্যে দেখা যায় বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইশরাক হোসেনের চেয়ে বেশি কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন তাবিথ আউয়াল। তাবিথ ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইশরাক ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন।
বিএনপির এই দুই নেতাই মেয়র নির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত।
সিটি নির্বাচন চলাকালে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতারা দুই হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০০টিরও বেশি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
মিরপুরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে তারা সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত খুবই কম ভোটারকে আসতে দেখেছেন।
প্রথম ঘণ্টায় মাত্র তিনজন ভোট দিয়েছেন। সংখ্যাটি সকাল ১০টায় ১৮তে পৌঁছেছিলো। সকাল ১১টায় ৩৭ এবং দুপুরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪। বিকাল ৩টায় কেন্দ্রে ভোট পড়েছিলো মাত্র ১০০টি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এই কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ নেতারাও নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম নিয়ে খুশি নন।
৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভোটারদের উদাসীনতা গণতন্ত্রের জন্য ভালো না।
তিনি বলেন, “এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমরা আমাদের পক্ষে আরও বেশি ভোট আশা করেছিলাম। আওয়ামী লীগের ভোটারদের কথা বিবেচনা করলে ভোটের হার কম ছিলো।”
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, “মাত্র ১০ বা ১৫ শতাংশ মানুষের ভোটের ভিত্তিতে গণতন্ত্র পরিচালিত হতে পারে না। এই ধরনের কম ভোট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি।”
ভোটারদের কম উপস্থিতির চারটি কারণ চিহ্নিত করে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের ফল অশুভ হবে এবং প্রত্যেককেই এই ভার বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন কারণ এটি একটি নতুন বিষয় ছিলো।”
তবে বড় কারণ হিসেবে একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার প্রতি জনগণের আস্থার অভাব ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, “পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে তাদের বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত।”
ভোটারদের নিরাপত্তার হুমকিও ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোটকেন্দ্রের ভিতরে ও বাইরে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের উপস্থিতি ছিলো। অন্যান্য দলের পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিতিও ছিলো তাৎপর্যপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “সম্ভবত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা থাকার সবচেয়ে বড় কারণটি হলো, তারা তাদের ভোট দিতে পারবে এই নিশ্চয়তার অভাব।”
“ভোটাররা আশঙ্কা করেছিলো যে পোলিং এজেন্টরা তাদের হয়ে ভোট দিয়ে দেবে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য তাদের প্রভাবিত করা হবে।”
গতকাল গুলশানের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তাবিথ আউয়াল দাবি করেছেন, ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীনদের দাপটের সঙ্গে কম ভোট পড়া সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগ নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তারা ভোটকেন্দ্রগুলো দখলে রাখবেন। নির্বাচনের দিন তাদের ক্যাডাররা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেয় এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি।”
Comments