করোনাভাইরাস সম্পর্কে যা জানি, যা জানি না
চীন ছাড়া আরও ২৪টিরও অধিক দেশ কিংবা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা যা জানি এবং যা জানি না, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এই ভাইরাস কতোটা বিপজ্জনক?
করোনাভাইরাস গোত্রের ভাইরাসগুলোর প্রভাবে সাধারণ সর্দি ছাড়াও সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ও মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (মার্স) পর্যন্ত হতে পারে।
নতুন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের অনেকেই বয়স্ক ছিলেন এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল দুর্বল।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পায়।
চীন থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানুষের মধ্যে প্রায় দুই শতাংশ মারা গেছেন।সার্সে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশই মারা গিয়েছিল। আর ২০১২ সালে দেখা দেয় মার্সের প্রাদুর্ভাব। সেটিতে আক্রান্তদের ৩৫ শতাংশই মারা গিয়েছেল।
বিজ্ঞানীরা নতুন ভাইরাসকে ‘২০১৯-এনকভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
কীভাবে ছড়ায় ও কীভাবে প্রতিরোধ করতে হবে?
কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস নেওয়া কিংবা কাশি বা হাঁচি থেকে এটি ছড়াতে পারে। এছাড়া, দরজার হাতলের মতো দূষিত জায়গা থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সার্স ভাইরাসের চেয়ে আরও সহজে সংক্রমিত হয়। এ ভাইরাস কারো শরীরে প্রবেশ করলে সেটি ছড়াতে ১৪ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। যেকারণে কোনো ধরনের উপসর্গ প্রকাশ হওয়ার আগেই এটিতে আক্রান্ত একজন থেকে সেটি অন্যজনে ছড়াতে পারে।
করোনাভাইরাস এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।সেখানে বলা হয়েছে, ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, হাঁচি বা কাশির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে এবং অসুস্থদের সান্নিধ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
মাস্ক কতোটা কার্যকর
চিকিত্সাবিদ সিলভি ব্রায়ানড বলেছেন, “যেসব মানুষের মধ্যে ভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গ দেখা গেছে, আমরা তাদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।”
তবে, মাস্ক পরলেই যে এটির সংক্রমণ এড়িয়ে চলা যাবে, সেটির নিশ্চয়তা নেই।
ব্রায়ানড বলেছেন, “যাদের মধ্যে ভাইরাসের কোনো ধরনের উপসর্গ নেই, তাদের জন্য মাস্ক কার্যকরী নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের ফেস মাস্ক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
করোনাভাইরাসের চিকিত্সা আছে?
ডব্লিউএইচও’র তথ্যানুযায়ী, নতুন করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা নেই।
চীনের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পেরেছেন। আর অস্ট্রেলিয়ায় বিজ্ঞানীরাও ভাইরাসটির প্রতিষেধক তৈরির কাজ করছেন।
এছাড়া, বিশ্বের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো আগামী তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করতে বলে জানিয়েছে।
কোথায় ছড়িয়েছে?
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশই চীনে। সেখানে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া, চীনের বাইরে আরও ২৭ স্থানে এ পর্যন্ত ২৩০ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বছরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা দেয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে এখন পর্যন্ত ৬০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, চীনের বাইরে হংকং ও ফিলিপাইনে একজন করে মারা গেছেন। এই দুইজনও উহান ভ্রমণ করেছিলেন।
চীনের বাইরে এ ভাইরাসের বেশি সংক্রমণ দেখা গেছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও জাপানে।
প্রথম এক হাজার মানুষকে সংক্রমিত করতে এই ভাইরাস সময় নিয়েছে ৪৮ দিন। যেখানে সার্সের ১৩০ দিন এবং মার্সের প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছিল।
চীনা কর্তৃপক্ষ কী করছেন?
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানসহ পুরো প্রদেশই একপ্রকার অবরুদ্ধ করে রেখেছে চীন সরকার।
বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত করেছে। যেকারণে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হওয়ার মুখে চীন।
এছাড়া, সম্প্রতি চীন ভ্রমণকারী বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া।
অনেক দেশই নিজ নাগরিকদের হুবেই প্রদেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
কিন্তু, চীনে ভ্রমণ বা তাদের সঙ্গে বাণিজ্যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দেয়নি ডব্লিউএইচও।
ভাইরাসটির উদ্ভব হলো কীভাবে?
ধারণা করা হয়, উহানের একটি খাদ্য বাজার থেকে এই ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে। ওই বাজারে বেআইনিভাবে বন্যপ্রাণী বিক্রি করা হতো।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাদুড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে। যেটি পরে অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। যদিও এসব তথ্যের কোনটি প্রকৃত কারণ, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Comments