সাদামাটা বোলিং, নাজুক ফিল্ডিংয়ে হতাশায় মোড়া দিন

সাদামাটা বোলিং, ক্যাচ ফসকানো, দৃষ্টিকটু ভুলে পরা বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং মাড়িয়ে দারুণ এক দিন পার করেছে পাকিস্তান।
ছবি: এএফপি

সাদামাটা বোলিং, ক্যাচ ফসকানো, দৃষ্টিকটু ভুলে পরা বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং মাড়িয়ে দারুণ এক দিন পার করেছে পাকিস্তান। শান মাসুদ আর বাবর আজমের সেঞ্চুরিতে অনায়াসে লিড নিয়ে বড় সংগ্রহের পথে তারা। ভুলে ভরা হতাশায় মোড়া দিনে মুমিনুল হকরা পুড়ছেন প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতায়।

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে  ৩ উইকেটে ৩৪২  তুলেছে পাকিস্তান। হাতে  ৭  উইকেট নিয়ে এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১০৯  রানে এগিয়ে গেছে তারা। ৮৬ রানে দৃষ্টিকটু ভুলে বেঁচে গিয়ে শান ১০০ রানে ফিরে গেলেও,  ২ রানে জীবন পাওয়া বাবরকে আর ফেরাতেই পারেনি বাংলাদেশ। দিনশেষে ১৪৩ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। তার সঙ্গে  ১৩৭ রানের  জুটি গড়ে  ৬০ রান নিয়ে ব্যাট করছেন আসাদ শফিক।    

উইকেটে পেসারদের জন্য কিছু রসদ থাকলেও ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল বেশ ভালো। তবে পাকিস্তানিদের ব্যাটিং আরও জৌলুসময় হয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের কারণে। ভাল জায়গায় বল করতে না পারায় তৈরি করা যায়নি চাপ। তাও ফাঁকফোকরে যেসব সুযোগ মিলছিল তাও মুঠোবন্দি করতে পারছিল না দল।

অথচ দিনের শুরুটা বেশ ভালো ছিল বাংলাদেশের। পেসার আবু জায়েদ রাহি ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আগের দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করা আবিদ আলিকে। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়ায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। ২ রানেই স্বাগতিকরা হারিয়েছিল প্রথম উইকেট।

কিন্তু বাকি দুই পেসার ইবাদত হোসেন আর রুবেল হোসেনের এলোমেলো বোলিংয়ে এই চাপ আর ধরে রাখা যায়নি। শান মাসুদ আর আজহার আলির জুটিতে বাড়তে থাকে রান। রুবেল, ইবাদত একের পর এক আলগা বল দিয়ে মার খেতে থাকেন। এক পর্যায়ে ওয়ানডে গতিতেই রান আনতে থাকেন শান।

লাঞ্চের আগে রাহি এসে ফের এনে দেন ব্রেক থ্রো। অধিনায়ক আজহারকে ড্রাইভে প্রলুব্ধ করে স্লিপে বানান ক্যাচ। আরেক পাশে তখন চাপ দিতে পারছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও। রানও থমকে গিয়েছিল। লাঞ্চের পর সেই চাপ সরাতে ভুল করে বসেন বাবর। তাইজুলকে এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড়। ক্যাচ উঠে যায় আকাশে। লং অফ থেকে বা দিকে ছুটে বলের কাছে গিয়েও সবচেয়ে দামি সুযোগ মাটিতে ফেলে দেন ইবাদত।

তখন তা নিতে পারলে ২ রানেই ফিরতে হতো বাবর। দিনের প্রেক্ষাপটও হতে পারত ভিন্ন। জীবন পাওয়ার পর আর ভুল  নয়। দ্যুতি ছড়াতে থাকেন বাবর। দারুণ সব কাভার ড্রাইভে মুগ্ধতা ছড়ান, দলকে যোগান ভরসা।

এই জুটি তিন অঙ্কে যাওয়ার আগে আবার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সহজ সুযোগ নিলে শান মাসুদ করতে পারতেন না সেঞ্চুরি। ৪৫তম ওভারে রুবেলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। লিটন দাস সেই ক্যাচ নিয়েও ছিলেন। কিন্তু বোলার রুবেল আর কিপার লিটন কেউই বুঝতে পারেননি বল যে শানের ব্যাটে লেগে এসেছে। পরে আল্ট্রা এজের রিপ্লে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখে আক্ষেপ বাড়ে বাংলাদেশ।

তখন ৮৬ রানে থাকা শান ঠিক ১০০ রানে গিয়ে থেমে যান। ভেতরে ঢোকা বলে তাকে বোল্ড করেন তাইজুল। ভাঙে বাবর-শানের ১১২ রানের জুটি।

ওটাই দিনের শেষ সাফল্য। শেষ সেশনে আসাদ শফিককে নিয়ে আর কোন বিপর্যয় নয়। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা বাবর তুলে নেন পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি। শেষ পাঁচ টেস্টেই এর চারটি করলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এদিন ১৯২ বলের ইনিংসে এখন পর্যন্ত ১৯ চার, ১ ছক্কায় ১৪৩ করেছেন তিনি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে নিয়ে যাওয়ার বড় সুযোগ তার সামনে।

বাবরের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশকে হতাশায় পুড়িয়েছেন শফিকও। বড় জুটি গড়ে সেঞ্চুরি পথে আছেন তিনিও। পুরো দিনে মুমিনুলের অধিনায়কত্বও ছিল অর্ডিনারি। আসাদ শফিক প্রায় ৫০ শতাংস রান থার্ড ম্যান দিয়ে আনলেও ফিল্ডিং পজিশনে দেখা যায়নি নতুনত্ব। পুরনো বলে কিছুই হচ্ছিল না, ৮০ ওভার পেরুনোর পর দ্বিতীয় নতুন বল নিতেও করেন দেরি। সতীর্থদের নেতিয়ে পড়া শরীরী ভাষাও জাগাতে পারেননি তিনি।

টেস্টের দুই দিন পর বাংলাদেশ আছে সেই পুরনো কক্ষপথে। বড় লিড নিয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংস ঘোষণা আর পরের ইনিংসে নিজেদের ফের অল্প রানে গুটিয়ে ইনিংস হারের সব প্রেক্ষাপটই যেন তৈরি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(দ্বিতীয় দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৩৩

পাকিস্তান  প্রথম ইনিংস: ৮৭.৫ ওভারে ৩৪২/৩ (শান ১০০  , আবিদ ০, আজহার ৩৪, বাবর ব্যাটিং ১৪৩*, আসাদ ব্যাটিং ৬০* ;  ইবাদত ০/৭৮, জায়েদ ২/৬৬, রুবেল ০/৭৭, তাইজুল ১/১১১, মাহমুদউল্লাহ ০/৬)

Comments

The Daily Star  | English
Onion price  Tk204 per kg | Onion prices surge in Dhaka after India’s export ban extension

Onion prices surge in Dhaka after India’s export ban extension

Retailers were selling the homegrown variety of onion at Tk 204 a kg at Karwan Bazar today, compared with Tk 130 on Thursday

1h ago