করোনাভাইরাস

চীনে কাঁকড়া-কুচে রপ্তানি বন্ধ, দৈনিক ক্ষতি ৪ কোটি টাকা

খুলনায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া ও কুচে (ইল) চাষ করা হয়। এগুলো রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার চীন। কিন্তু, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কাঁকড়া ও কুচে আমদানি স্থগিত রেখেছে দেশটি। এতে দৈনিক প্রায় চার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের চাষি এবং ব্যবসায়ীদের।

খুলনায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া ও কুচে (ইল) চাষ করা হয়। এগুলো রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার চীন। কিন্তু, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কাঁকড়া ও কুচে আমদানি স্থগিত রেখেছে দেশটি। এতে দৈনিক প্রায় চার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের চাষি এবং ব্যবসায়ীদের।

মূলত সুন্দরবন অঞ্চলে চাষ করা কাঁকড়া ও কুচে রপ্তানি করা হয় চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ায়। উৎপাদিত কাঁকড়ার ৮৫ শতাংশই যায় চীনে।

খুলনায় তিনটি বড় আড়তে গিয়ে দেখা যায়, কাঁকড়া ও কুচের বেচাকেনা না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকগাছার কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দেবব্রত দাস দাবু জানান, বিদেশি বাজারে বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় গত চার-পাঁচ বছরে এ এলাকায় কাঁকড়ার চাষ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। খুলনা অঞ্চল থেকে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ২৫ টন কাঁকড়া পাঠানো হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা থেকে আট টন, বাগেরহাট থেকে ছয় টন ও খুলনা থেকে পাঠানো হয় সাত টন।”

তিনি আরও জানান, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ২১ হাজারেরও বেশি কাঁকড়া চাষি রয়েছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার ৪৩০ জনই তালিকাভুক্ত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তারা এখন ক্ষতির সম্মুখীন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন মাসের মধ্যেই কাঁকড়া রপ্তানির উপযোগী হয়ে যায়।

২০০ গ্রাম ওজনের মাদী কাঁকড়া বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২,৫০০ টাকায় এবং ১৮০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রামের কম ওজনেরগুলো বিক্রি হয় ২,২০০ টাকা দরে। অন্যদিকে, ৫০০ গ্রামেরও বেশি ওজনের পুরুষ কাঁকড়া কেজি প্রতি ১,৮০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছে, চার-পাঁচ বছর হলো খুলনার বাটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রা, বাগেরহাটের মোল্লাহাট, রামপাল, মংলা ও শরণখোলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও তেবহাটা উপজেলায় কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়েছে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইনজচার্জ আবু সাঈদ জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপসহ অন্যান্য উপজেলার ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়েছে।

খুলনা রপ্তানি প্রচার ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শেষ পাঁচ মাসে দুই দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়েছে। কাঁকড়া রপ্তানি করে গত বছরের জুনে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার ডলার, জুলাইয়ে প্রায় চার লাখ ডলার, আগস্টে পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে নয় লাখ ২৫ হাজার ডলার এবং অক্টোবরে প্রায় ছয় লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

বাগেরহাট মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাগেরহাটের সদর, রামপাল ও মোংলা উপজেলার ৬০০ হেক্টর জমিতে দুই হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়েছে। অন্যদিকে, একই সময়ে সাতক্ষীরা জেলার ৩০৭ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ২০০ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন উৎপাদিত হয়েছে।

নিউ মামা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী এবং সুন্দরবন কাঁকড়া ও মৎস্য সমবায় সমিতির সহসভাপতি মৃনাল কান্তি দে বাবু জানান, খুলনা অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ মেট্রিক টন কাঁকড়া ঢাকায় পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, “আগে আমি প্রতিদিন ৮০০-৯০০ কেজি কুচে কিনতাম। কিন্তু এখন চীনসহ বিদেশি বাজারে এটির চাহিদা না থাকায় ২০০-২৫০ কেজির মতো কিনি। খুলনা অঞ্চলে ২০০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী কুচে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।”

“গত ২৫ জানুয়ারি থেকে আমি এজেন্টদের কাছে কুচে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। আগে ছোট আকারের কুচে কেজি প্রতি ৩৮০ টাকায় এবং বড় আকারের কুচে ২৮০ টাকায় কিনতাম। কিন্ত এখন এটি বাজারে গড়ে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে” যোগ করেন তিনি।

মৃনাল বাবু আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কুচে ব্যবসায় সংকট দেখা দিয়েছে।”

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago