ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিততে যুবাদের সহজ লক্ষ্য
প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ম্যাচের মাঝপথে পাচ্ছে শিরোপার সুবাস। তিন পেসার শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব আর অভিষেক দাস মিলে করলেন আগুন ঝরানো বোলিং। স্পিনার ও ফিল্ডাররা তাদের দিলেন পূর্ণ সহায়তা। তাতে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে দুইশোর অনেক আগে অলআউট করে দিলেন আকবর আলিরা। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়তে তারা পেলেন সহজ লক্ষ্য।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে বাংলাদেশের পেসারদের সামনে পাত্তা পায়নি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৭.২ ওভারে তারা গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৭৭ রানে।
বাঁহাতি পেসার শরিফুল ১০ ওভারে ২ উইকেট নেন ৩১ রানে। নতুন বলে তার সঙ্গী ডানহাতি পেসার সাকিব ৮.২ ওভারে ২ উইকেট পান ২৮ রান দিয়ে। স্পিনার হাসান মুরাদের পরিবর্তে ফাইনালের একাদশে জায়গা করে নেওয়া পেস অলরাউন্ডার অভিষেক বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল। ৯ ওভারে ৩ উইকেট নিতে তার খরচা ৪০ রান। ভারতের হয়ে লম্বা সময় টিকে থেকে একাই লড়াই করেন ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল। ১২১ বল খেলে ৮৮ রান করেন এই বাঁহাতি। তার ইনিংসে ছিল ৮ চার ও ১ ছক্কা।
বাংলাদেশের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। যুবাদের শরীরী ভাষাতেও ছিল ঝাঁজ আর উত্তাপ। ক্রিকেটের যে কোনো পর্যায়েই বাংলাদেশের পেসারদের আগ্রাসী বোলিংয়ের উদাহরণ বেশ কম। তাই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের শুরুতে শরিফুল-সাকিবদের হাতের জাদু মুগ্ধতা আর বিস্ময় ছড়ায়। প্রথম ওভারেই সুইং ও বাউন্সের সমন্বয়ে জয়সওয়ালকে দুবার চমকে দেন শরিফুল। সাকিবও লাইন-লেংথের নিখুঁত প্রদর্শনী দেখান। ফলে রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে হয় ভারতের দুই ওপেনারকে। ইনিংসের ১৪তম ডেলিভারিতে গিয়ে দলীয় রানের খাতা খুলতে পারে ভারত। সাকিব নিজের প্রথম দুই ওভারেই নেন মেডেন। পরের ওভারে একমাত্র রানটি দেন ওয়াইডে।
আঁটসাঁট বোলিং করা আকবর আলির দল প্রথম সাফল্য পায় সপ্তম ওভারে। অভিষেক ফিরিয়ে দেন দিব্যানশ সাক্সেনাকে। একের পর এক ডট বল খেলা এই বাঁহাতি ওপেনার অফ স্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন। ক্যাচ দেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো মাহমুদুল হাসান জয়ের হাতে। তখন ভারতের সংগ্রহ মোটে ৯ রান।
এরপর ৯৪ রানের জুটি গড়ে চাপ সামলে নেন জয়সওয়াল ও তিলক ভার্মা। তবে রানের গতিতে দম দিতে পারেননি তারা। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে আসরে নিজের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন জয়সওয়াল। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভেঙে অল্প সময়ের মধ্যে দুবার উইকেট উৎসব করে বাংলাদেশ। ৬৫ বলে ৩৮ করে সাকিবের বলে সীমানার কাছে ক্যাচ দেন ভার্মা। দারুণভাবে বল লুফে নেন দীর্ঘদেহী শরিফুল। এরপর প্রিয়ম গার্গকে তানজিদ হাসানের ক্যাচে পরিণত করেন স্পিনার রাকিবুল হাসান। ভারতীয় অধিনায়ক করেন ৯ বলে ৭ রান।
ইনিংসের শুরুতে আগ্রাসী বোলিং করলেও উইকেট পাননি শরিফুল। তার অপেক্ষার অবসান হয় ৪০তম ওভারে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে টানা দুবার উল্লাস করেন তিনি, ভেঙে দেন জয়সওয়াল-জুরেলের ৪২ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। পাশাপাশি ভারতের বড় সংগ্রহের স্বপ্নেও তিনি দেন জোর ধাক্কা। শরিফুলের শর্ট বল ঠিকভাবে পুল করতে না পেরে শর্ট মিডউইকেটে জয়সওয়াল ক্যাচ দেন তানজিদকে। পরের বলটি ফুলটস হলেও ঠিকঠাক খেলতে না পেরে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ নিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান সিদ্ধেশ বীর।
শেষ ৬ উইকেট ভারত হারায় মাত্র ২১ রানে। জয়সওয়াল-জুরেল উইকেটে থাকা অবস্থায় ৩৯.৪ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ১৫৬ রান। এরপর বাংলাদেশের যুবারা ঘুরে দাঁড়ানোয় ১৬ বল বাকি থাকতেই শেষ হয় দলটির ইনিংস। তাদের মাত্র তিন ব্যাটসম্যান পৌঁছাতে পারেন দুই অঙ্কে।
ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে জুরেল রানআউট হন ৩৮ বলে ২২ রান করে। কার্তিক তিয়াগিকে উইকেটের পেছনে অধিনায়ক আকবরের তালুবন্দি করিয়ে তৃতীয় শিকার ধরেন অভিষেক। আর সুশান্ত মিশ্রকে আউট করে ভারতীয়দের লড়াইয়ের ইতি ঘটান সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ (জয়সওয়াল ৮৮, সাক্সেনা ২, ভার্মা ৩৮, গার্গ ৭, জুরেল ২২, বীর ০, আনকোলেকার ৩, বিষ্ণই ২, মিশ্র ৩, তিয়াগি ০, সিং ১*; শরিফুল ২/৩১, সাকিব ২/২৮, অভিষেক ৩/৪০, শামিম ০/৩৬, রকিবুল ১/২৯, হৃদয় ০/১২)।
Comments