দুর্ভাগ্যের চক্রে ৮০ পরিবার
কষ্টের শেষ নেই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী ডিগ্রীচর গ্রামের ৮০টি পরিবারের। একটি সেতুই তাদের কষ্টের কারন।
চারশ মানুষের এই গ্রামের একদিকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, একদিকে প্রবাহমান ধরলা ও গিরীধারী নদী, আর একদিকে রয়েছে ধরলা নদীর শাখা খাল। এই খালের ওপরে থাকা সেতুই তাদের গ্রাম থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ। কিন্তু গত বছর জুলাই মাসের বন্যায় সেতুটি ভেঙ্গে যায়। সেই সঙ্গে ভেঙ্গে যায় তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কখনো পানি, কখনো কাঁদা পাড়ি দিয়ে তাদের আসতে হচ্ছে হাট বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা সদরে।
স্থানীয়রা বলছেন, ১০ বছর আগে গ্রামটির পশ্চিম পার্শ্বে সৃষ্টি হয় ধরলা নদীর একটি শাখা খাল। এর দুই বছর পর সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটির উপর ২৫ ফিট দীর্ঘ পায়ে হাটা একটি সেতু নির্মান করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। লাঘব হয় গ্রামবাসীর কষ্ট।
এ সৌভাগ্য বেশী দিন স্থায়ী হয় না। মাত্র দুই বছর পর সেতুটি বন্যায় ভেঙ্গে যায়। আবারো বর্ষাকালে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেটে খালটি পাড়ি দিতে হলো দীর্ঘ তিন বছর। বাঁশের সাঁকো বানিয়ে তা দিয়ে পার হলো আরও এক বছর।
২০১৮ সালে লোকাল গভর্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) সাড়ে ৮ লাখ টাকা অর্থায়নে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ওই খালে নির্মান করা হয় ৩২ ফিট দৈর্ঘ্যের পায়ে হাটার সেতু। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে গত বছর জুলাই মাসের বন্যায় এটিও ভেঙ্গে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন চরম বিড়ম্বনার মধ্য দিয়েই প্রতিদিন বাঁচতে হচ্ছে এই গ্রামের অধিবাসীদের।
গ্রামের বাসিন্দা কবির মিয়া (৬২) অভিযোগ করে বলেন, বিএডিসি সেতুটি ঠিকভাবে তৈরি করেনি। তাই অল্প সময় পরই এটা ভেঙ্গে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের বেলাতেও তাই হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেকও খরচ করা হয়নি সেতু তৈরিতে।
তিনি আরও বলেন, “সঠিকভাবে সেতুটি তৈরি করা হলে তা অল্প কিছু দিন পরই তা পানির স্রোতে ভেঙ্গে যেতো না। আর আমরাও যাতায়াতের দুর্ভোগে পড়তাম না। আমরা এখন ভাগ্যের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছি।”
“আমাদের গ্রামের প্রবেশ পথে যাতায়াত ব্যবস্থার চরম দুর্ভোগ থাকায় আত্মীয় স্বজনও বেড়াতে আসেন না। এমনকি নতুন আত্মীয় তৈরিতেও এই অবস্থা অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে,” জানালেন গ্রামের বাসিন্দা ইউনুছ আলী (৫৮)।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানরা পরেছে চরম বিপাকে। গ্রামের অনেকেই সন্তানদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে রেখে পড়াশুনা করাচ্ছেন।”
গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন (৬২) জানান, তারা উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজে হাট-বাজারে নিতে পারেন না যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কারণে।
তিনি বলেন, “ধরলা নদীর শাখা খাল আর তার উপর ভাঙ্গা সেতু আমাদের দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।”
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুস সাত্তার জানান, সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে গ্রামবাসীর। খালটির উপর মজবুত ও স্থায়ী একটি সেতু তৈরি করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দিয়েও কোন কাজে আসছে না। এই ইউপি সদস্য বলেন, “সেতু তৈরি না হলে এবছর বর্ষায় বাঁশের সাঁকোই হবে গ্রামবাসীর একমাত্র উপায়।”
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান প্রামানিক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যার পানির স্রোতে সেতু ভেঙ্গে গেলে কারো কিছুই করার থাকে না।
খালটির উপর এলজিইডির সেতু তৈরির প্রস্তাবনা রয়েছে এবং এর প্রক্রিয়া এ বছরই সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
Comments