জীবিত দেখিয়ে মৃত নারীর জমি কেনার অভিযোগ
মৃত্যুর ৩৫ বছর পরে এক নারীকে জীবিত দেখিয়ে তার নামে থাকা ৫০ শতাংশ জমি গোপনে রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায়। বিষয়টি জানার পরে রাজীবপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, দলিল লেখক এবং দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
তারা জানান, ৩৫ বছর আগে মারা গেছেন উপজেলার বদরপুর গ্রামের মৃত নহর শেখের স্ত্রী দৌলত বি নেছা।
রাজীবপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্র জানায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি দৌলত বি নেছা তার নামে থাকা ৫৪ শতাংশ জমির মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি করেছেন বলে দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিল নম্বর ১৩১/২০২০। জমির দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। জমিটির ক্রেতা দেখানো হয় গোল্ডেন লাইফ একাডেমি নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।
দৌলত বি নেছার নাতি আব্দুল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “১০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। গোল্ডেন লাইফ একাডেমির অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন দলিল লেখক নুরুন্নবীর সঙ্গে যোগসাজশ করে সাব-রেজিস্ট্রারকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমরা জমি ফেরত চাই। সেই সঙ্গে এই জালিয়াতিতে জড়িতদের শাস্তি চাই।”
বদরপুর গ্রামের কৃষক মোবারক আলী বলেন, “এভাবে মৃত মানুষকে জীবিত দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হলে কেউ আর নিরাপদ থাকবে না। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে দালালরা।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলিল লেখক নুরুন্নবী বলেন, “আমি এত কিছু জানতাম না। ইসমাইল হোসেন নিজেই এক নারীকে দৌলত বি নেছা সাজিয়ে এনেছিলেন। তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে আমাকে ভুল বুঝিয়েছেন। সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে তিনিই যোগাযোগ করেছেন। আমি শুধু দলিলটি লিখে দিয়েছি। দলিলের খরচ হিসেবে ১৫ হাজার ছাড়া বাড়তি একটি টাকাও আমি নেইনি।”
জমির ক্রেতা গোল্ডেন লাইফ একাডেমির অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রসারণের জন্য জমির প্রয়োজন ছিলো, তাই জমিটি কিনেছি। একটু সমস্যা হয়েছে, মৃত দৌলত বি নেছার স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।”
তবে জালিয়াতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, “এ প্রসঙ্গে পরে কথা হবে।”
রাজীবপুর উপজলা সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম বলেন, “দলিল সম্পাদনের আগে বিষয়টি আমি জানতাম না, পরে জানতে পেরেছি। ওই দলিল লেখকের নিবন্ধন বাতিলসহ শাস্তিমূলক সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন দৌলত বি নেছার স্বজনরা— এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, “এটি একেবারে মিথ্যা অভিযোগ। আমি কখনো ঘুষ নেই না আর ঘুষকে প্রশ্রয়ও দেই না। আমি দৌলত বি নেছাকে চিনতাম না। দলিল লেখক ভুয়া কাগজপত্র এবং ভুয়া ব্যক্তি দেখিয়ে জমিটি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন।”
Comments