শীর্ষ খবর
পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

২৪ ঘণ্টায় ‘২ দিন’

যতোদূর মনে পড়ে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব উদযাপিত হতো ১৩ ফেব্রুয়ারি… তাই নয় কি?

যতোদূর মনে পড়ে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব উদযাপিত হতো ১৩ ফেব্রুয়ারি… তাই নয় কি?

দেখা যাচ্ছে, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করি বলেই, আমরা দিনটিকে সবসময় একটি নির্দিষ্ট তারিখে পালন করি। কিন্তু, বাংলা ক্যালেন্ডারের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, গত দুই বছর এবং এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পহেলা ফাল্গুন পড়েছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারি।

এই দুটি পঞ্জিকার অমিল কোথায় তা ব্যাখ্যা করে বাংলা একাডেমির অভিধান ও জ্ঞানকোষ বিভাগের কর্মকর্তা রাজীব কুমার সাহা বলেন, “আগে বৈশাখ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত ৩১ দিনে আর আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত ৩০ দিনে মাস ধরা হতো। লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষে ফাল্গুন ধরা হতো ৩১ দিনে।”

“কোন উৎসবের জন্য কোন ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তি দেখা গেছে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার দেখে তারিখ ধার্য করা সবার জন্যই সহজ। কিন্তু, এর ফলে অনেক সময়ই বাংলা পঞ্জিকার সঠিক তারিখকে আমরা উপেক্ষা করি,” রাজীব বলেন।

“উদাহরণস্বরূপ, ২১ ফেব্রুয়ারি কখনও কখনও ৯ ফাল্গুন পড়ে। আবার কখনও পড়ে এর আগের দিনে। পহেলা বৈশাখের ক্ষেত্রেও এমন ঘটে। কখনও কখনও ১৪ এপ্রিল আবার কখনও তা পড়ে এর পরের দিন,” যোগ করেন তিনি।

এই বিষয়টি সমাধানের জন্য, বাংলা একাডেমি এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছর দেশের জন্য একটি সংশোধিত বাংলা ক্যালেন্ডার চালু করে। এতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন ৩১ দিনে এবং ফাল্গুন বাদে বাকি ছয় মাস ৩০ দিনে হিসাব করার কথা বলা হয়। অধিবর্ষে ফাল্গুন হবে ৩০ দিনে।

“এই সংশোধনীর ফলে, আমাদের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলি একটা নির্দিষ্ট বাংলা তারিখে উদযাপন করা সম্ভব হবে। যেমন, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর এখন থেকে সবসময়ই ৮ ফাল্গুন, ১২ চৈত্র এবং ১ পৌষে পড়বে। এটা ১৯৫২ এবং ১৯৭১ সালের ঐ দিনগুলোর বাংলা তারিখকে অনুসরণ করবে। বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্র জয়ন্তী এবং নজরুল জয়ন্তীর জন্যও তারিখগুলি সবসময় একই থাকবে,” যোগ করেন রাজীব।

যদিও এই সংশোধনটি আমাদের উৎসবগুলো উদযাপনের জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ অনুসরণ করবে। কিন্তু, পহেলা ফাল্গুন আর কখনোই ১৩ ফেব্রুয়ারিতে পড়বে না।

পরিবর্তিত তারিখের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া অনেক সময়ই মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, বিশ্বব্যাপী উদযাপিত ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে এখন থেকে পহেলা ফাল্গুন উদযাপিত হবে। যদিও, সাংস্কৃতিকভাবে, উদযাপনের প্রকৃতি অনুসারে, মূল বিষয় এবং রঙ সবই এই দুটি উৎসবের ক্ষেত্রে পুরোপুরিই আলাদা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা খান গতকাল পহেলা ফাল্গুন উদযাপনের জন্য ফাল্গুনী সাজে সেজেছিলেন। তিনি বলেন, “পহেলা ফাল্গুন বরাবরই আমার প্রিয় উৎসবগুলির মধ্যে একটি। ১৪ ফেব্রুয়ারি শহরে কোলাহল থাকবে, প্রচুর গাড়িঘোড়া থাকবে রাস্তায়। কে, কী উদযাপন করছেন তা নিয়েও কিছুটা বিভ্রান্তি থাকবে। ক্যালেন্ডারে যাই থাকুক না কেনো, আমি আজই (১৩ ফেব্রুয়ারি) বসন্তকে স্বাগত জানাতে চাই।”

“আমি মনে করি, আমি প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালন করে যাবো,” বলেই নাফিসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুশিমনে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। সঙ্গে ছিলেন তারা, যারা তার মতো নতুন ক্যালেন্ডার উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নাফিসার মতোই ছিলো অন্য অনেকের অনুভূতি। তারা মনে করেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমের দেশগুলোতে ভালোবাসা দিবস বা ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ হিসেবে উদযাপন হয়। আর বসন্তকে স্বাগত জানানোর জন্য নানা রঙের সাজ নিয়ে আসে পহেলা ফাল্গুন। দুটোর মূল ভাব পুরোপুরিই আলাদা।

দুটি ভিন্ন দিবস উদযাপনের মিলগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলের প্রতি অনুরাগ। শাহবাগে ফুলের দোকানদার এনামুল হক বলেন, “অফ-সিজনে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার বেচাকেনা হলেও, ফেব্রুয়ারির এই দুই দিনেই তা দ্বিগুণ হয়।”

অপর দুই দোকান মালিক মাহফুজ চৌধুরী ও মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, চাহিদা যেমন থাকবে তার উপর তারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে, প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি ভিন্ন উৎসব একই দিনে পালন হওয়ায় মুনাফা বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া ও অন্তি গতকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি) হলুদ শাড়ি পড়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে দেখা গিয়েছিলো। “আমরা আজ বসন্তবরণ করতে এসেছি। মা হয়তো আগামীকাল বাইরে যেতে দিতে রাজি হবেন না। তারা এখনও মনে করেন এটা কেবল ভালোবাসা দিবস,” জানালেন ফারিয়া। আর ফারিয়ার কথায় সায় দিলেন অন্তি।

এদিকে, ঢাবিতে তানভীর আহমেদ অপেক্ষা করছিলেন তার বান্ধবীর জন্য। তিনি জানালেন, আজ দুটি অনুষ্ঠান একসঙ্গে উদযাপন করতে পারায় তিনি খুশি। “এটি অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী। একদিনে দুটি দিবস উদযাপনে টাকা খরচ কম হবে,” মুচকি হেসে নিজের মত জানালেন তানভীর।

তার বন্ধু ইশতিয়াক শহরের যানজটের কথা উল্লেখ করে বললেন, “এর আগে টানা দুদিন যানজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হতো। এখন এটা কেবল ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই হবে।”

সাধারণত এই উদযাপনগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে তরুণরাই। তারিখের এই পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় বোঝা যাচ্ছে যে দিবস দুটি একসঙ্গে পালন করা নিয়ে এখনও অনেক বিষয়েই সামঞ্জস্য বাকি।

এর কার্যকারিতা আমরা দেখতে পাবো পরের বছরগুলোতে। হয়তো, দুটি উৎসবই একসঙ্গেই উদযাপিত হবে। একটি অন্যটির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে কিংবা সংশোধিত ক্যালেন্ডারকে বাদ দিয়ে দুই দিনে দুটি উৎসব উদযাপিত হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

3h ago