খালেদা জিয়ার মুক্তির চেষ্টায় পরিবার ও বিএনপি

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হচ্ছে জানিয়ে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তার মুক্তির জন্য নতুন করে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন।
Khaleda Zia Final.jpg
খালেদা জিয়া। স্টার ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হচ্ছে জানিয়ে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তার মুক্তির জন্য নতুন করে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। এমন পরামর্শ দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।

তিনি গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউ উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে এই চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত একজন।

বোন সেলিমা ইসলাম গত ১১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তিনি উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এর প্রায় দুবছর পর তাকে কারামুক্ত করার জন্য পরিবারের প্রচেষ্টাগুলো চোখে পড়ছে সবার। এখন পর্যন্ত তাকে মুক্ত করার জন্য বিএনপির প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি।

শামীম ইস্কান্দার তার চিঠিতে লিখেছেন, “খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হচ্ছে। যেকোনো ধরনের অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে এখনই আধুনিক সরঞ্জামসহ বিদেশি হাসপাতালে তার চিকিৎসা করা দরকার।”

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন এবং তার পরিবার চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে ফোন করে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে কথা বলেছেন।”

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনিই (কাদের) এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। আমাদের একমাত্র উদ্বেগ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো উচিত।”

গত ১১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলামসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য তাকে দেখতে বিএসএমএমইউতে যান।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর সেলিমা বিএসএমএমইউ চত্বরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমি সরকারকে তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা এবং বয়স বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। তাকে মুক্তি দেওয়া উচিত কিংবা মানবিক কারণে জামিন দেওয়া উচিত।”

সেলিমা বলেছিলেন, “তার বোন খেতে পারছেন না, জ্বরে ভুগছেন এবং তার ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসা করা না হলে খারাপ কিছু ঘটবে।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেছিলেন, “আমরা মনে করি মানবিক কারণে তাকে এখনই মুক্তি দেওয়া উচিত।”

যোগাযোগ করা হলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, “তিনি খালেদার ভাই শামীম ইস্কান্দারের চিঠি পেয়েছেন।”

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ডকে তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে কি করনীয় তা সুপারিশ করার জন্য বলেছেন।

তিনি বলেন, “মেডিকেল বোর্ড আদালতে আগেই বলেছে যদি তিনি চিকিৎসা নিতে রাজি হন তাহলে এখানেই তার চিকিৎসা সম্ভব। চিকিৎসকরা প্রতিদিন তাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। আশাকরি আগামী সপ্তাহে আমরা মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে থেকে একটি প্রতিবেদন পাবো।”

বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা আগামী সপ্তাহে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আবেদন করবেন।

আইনজীবী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, “আশাকরি আমরা ন্যায়বিচার পাবো এবং তিনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাবেন।”

বিএনপির অনেক নেতা বিশ্বাস করেন যে আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব না। কারণ সরকার তাকে মুক্তি দেওয়ার বিচারিক প্রক্রিয়াকে ‘প্রভাবিত’ করছে।

নেতারা আরও মনে করেন বর্তমানে দলটির রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা এবং সরকারের ওপর খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করার শক্তি নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “তাকে (খালেদা জিয়া) অনেক আগেই মুক্তি দেওয়া হতো। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তিনি জামিন পাচ্ছেন না। তবে তাকে মুক্ত করার জন্য আমরা ধীরে ধীরে আন্দোলন শুরু করবো।”

গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তাকে আরও একটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দুটি মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি বিএনপির।

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

13h ago