‘বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা, ভারতের কমিশনও এতো ক্ষমতার অধিকারী নয়’

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, সংবিধান বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, ভারতের কমিশনও সে পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী নয়। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে অপরিমেয় ক্ষমতা দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সদ্য যোগ দেওয়া উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে আজ এই কথা বলেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, “কিন্তু ক্ষমতা থাকলেই কেবল হবে না, ক্ষমতার প্রয়োগ না হলে সে ক্ষমতা অর্থহীন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতার কতটুকু প্রয়োগ করতে পেরেছে, তা সময়ই বিচার করতে পারবে।”
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যে অপরিমেয় ক্ষমতা দিয়েছে, পৃথিবীর খুব কম দেশের কমিশন এমনকি ভারতের নির্বাচন কমিশনও এমন ক্ষমতার অধিকারী নয়।”
নতুন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অংশে বলা হয়েছে, “প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।” গণতন্ত্র ও নির্বাচন অভিন্ন সূত্রে গাঁথা বলেই একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য নির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ। ‘ভোট’ দুই অক্ষরের একটি ছোট শব্দ হলেও এর পরিসর ও ব্যাপ্তি বহুবিস্তৃত ও ব্যাপক। আমরা কোনো অবস্থাতেই মানুষের ভোটাধিকার লঙ্ঘিত ভূলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, “অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে আমি পাঁচটি ‘নি’ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছি। প্রথম ‘নি’ হচ্ছে নিশ্চয়তা: এটা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা। এ নিশ্চয়তার অর্থ ভোটার ও রাজনৈতিক দলে আস্থা সৃষ্টি। দ্বিতীয় ‘নি’ হচ্ছে নিরপেক্ষতা: নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান ও ভোট কার্যক্রম চালানোর প্রতিশ্রুতি। কমিশনের পক্ষে এই নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। তৃতীয় ‘নি’ হচ্ছে নিরাপত্তা: এই নিরাপত্তা ভোটার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকরভাবে নির্বাচনকালে কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা দরকার। চতুর্থ ‘নি’ হচ্ছে নিয়ম-নীতি: নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে বিধিবিধান পরিপালনের আওতায় আনা প্রয়োজন। পঞ্চম ‘নি’ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ: নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। স্বনিয়ন্ত্রণই নির্বাচন কমিশনের মূল কথা। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নিশ্চয়তা, নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা, নিয়মনীতি, ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
“আজ এই বিশেষ দিনে আমি একটি কথাই বিশেষভাবে বলতে চাই, আপনারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন, নির্বাচন কমিশন সর্বদাই আপনাদের পাশে থাকবে,” নতুন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন মাহবুব তালুকদার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ারর জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. নুরুজ্জামান তালুকদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
Comments