লালমনিরহাটে ইটভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট

শুষ্ক মৌসুমেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ধাইরখাতা গ্রামের রাস্তা। বর্ষাকালে এই রাস্তার ওপর জমে যায় এক হাঁটু কাঁদা। তখন এ রাস্তায় পায়ে হাঁটাই দুষ্কর হয়ে উঠে। গ্রামের আড়াই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি প্রতিবছরই নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় একটি ইটভাটার কারণে।
ইটভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের রাস্তাঘাট। ছবি: স্টার

শুষ্ক মৌসুমেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ধাইরখাতা গ্রামের রাস্তা। বর্ষাকালে এই রাস্তার ওপর জমে যায় এক হাঁটু কাঁদা। তখন এ রাস্তায় পায়ে হাঁটাই দুষ্কর হয়ে উঠে। গ্রামের আড়াই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি প্রতিবছরই নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় একটি ইটভাটার কারণে।

ধাইরখাতা গ্রামের মতোই জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গড়ে ওঠা ৪৭টি ইটভাটার কারণে করুণ অবস্থা হয়েছে গ্রামের রাস্তাঘাটের। কোথাও কোথাও পাকা রাস্তা থাকলেও ইটভাটার কারণে সেগুলোর অবস্থাও লক্কর-ঝক্কর। উঠে যাচ্ছে কারপেটিং আর সৃষ্টি হচ্ছে খানাখন্দ।

এসব রাস্তার ওপর দিয়ে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গ্রামবাসীর। অনেক ইটভাটার কাছে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তা দখলে নিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ইট তৈরির মাটি। ফলে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার আসেনি। উল্টো ইটভাটার মালিকদের হয়রানির শিকার হতে হয় প্রতিবাদী গ্রামবাসীকে। ইটভাটার মালিকদের বিপুল অর্থ থাকায় এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা গ্রামের মানুষের কোনো প্রতিবাদ আমলে নেন না বলে জানিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা।

ধাইরখাতা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রামে ইটভাটা চালু হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে তারা গ্রামের রাস্তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে চলাচল করতে পারছেন না। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তাটি ধুলোয় ভরে যায়। আর বর্ষাকালে জমে যায় হাঁটু পরিমাণ কাঁদা।

তিনি বলেন, “আমরা একাধিকবার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। উল্টো ইটভাটার মালিকদের রক্তচক্ষু সহ্য করতে হয়েছে।”

আদিতমারী উপজেলার দৈলজোড় গ্রামের কৃষক জোবেদ আলী বলেন, “গ্রামের রাস্তার ওপর ইট তৈরির মাটি রাখা হয়েছে। ফলে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। এছাড়া, ইটভাটার ট্রাক্টর সবসময় রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করায় রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম নওদাবাঁশ গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “বহু বছর পর গ্রামের রাস্তাটি পাকা হলেও ইটভাটার ট্রাক্টরের কারণে তা অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাকা রাস্তার ওপর তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। বর্ষা আসার আগেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।”

আদিতমারী উপজেলার বামনের বাসা এলাকার ইটভাটার মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা সরকারকে অনেক টাকা ট্যাক্স দেই। তাই গ্রামের রাস্তাঘাট আমাদের মতো করে ব্যবহারে কোনো বাধা নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যে ভাটার পরিত্যক্ত ইট গ্রামের রাস্তার ওপর ফেলে দেই। এতে রাস্তা মজবুত থাকে। আর সবসময় রাস্তার ওপর ট্রাক্টর চলাচল করলে রাস্তাঘাট তো একটু নষ্ট হবেই।”

ইটভাটার কারণে গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ইটভাটাগুলো গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহারের নিয়ম মানছে না। ইচ্ছেমতো ট্রাক্টর চালানোর কারণে অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি রাস্তা পরিদর্শন করে ইটভাটার মালিকদের ট্রাক্টর ব্যবহারে নিষেধ করা হলেও তারা মানছেন না।”

পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতিপূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইটভাটার মালিককে নোটিশ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 

Comments