শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে সিটি করপোরেশন কিনছে প্লাস্টিক বর্জ্য
শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে প্লাস্টিক বর্জ্য কিনতে করতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। সংগ্রহ করা প্লাস্টিক চুল্লিতে পুড়িয়ে তৈরি হবে জ্বালানি তেল ও গ্যাস। নগর কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, এতে পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি আবর্জনা বিক্রি করে নগদ অর্থ পাবেন নগরবাসী।
সোমবার দুপুরে শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় প্লাস্টিক-পলিথিন ক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে যুক্ত ‘মেঘা অর্গানিক বাংলাদেশ লিমিটেড’ এসব প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করছে।
কার্যক্রম উদ্বোধন করে কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, প্রায় এক বছর ধরে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। দেখলাম শহর অপরিচ্ছন্ন থাকার অন্যতম কারণ যত্রতত্র পলিথিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা। ড্রেনে পলিথিন জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। তাই এ ওয়ার্ডের আবর্জনার পলিথিনগুলো আমরা কিনে নেব। যেসব দোকানদার এখানে বর্জ্য জমা দিবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য কিনে নেওয়ার এটাই প্রথম উদ্যোগ। ধীরে ধীরে প্রতিটি ওয়ার্ডে এ উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এভাবেই শহর পলিথিনমুক্ত করব।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক শ্যামল পাল জানান, ফতুল্লার পঞ্চবটী এলাকায় সিটি করপোরেশনের ‘জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। সেখানে বাজারের উচ্ছিষ্ট সবজি ও বাসা বাড়ির আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি হয়। এই সার কারখানার দায়িত্বে রয়েছে মেঘা অর্গানিক বাংলাদেশ লিমিটেড। ওরাই সার কারখানার পাশাপাশি আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে তেল তৈরি করবে।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি তাদের লোক দিয়ে আবর্জনা কিনবে। নগরবাসীর কাছে আহ্বান যেখানেই পলিথিন থাক সেটা সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে এখানে বিক্রি করবেন। এতে আর্থিক লাভের পাশাপাশি পরিবেশের উপকার হবে।
মেঘা অর্গানিক বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কয়েক বছর ধরে এখানে আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছিল। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পলিথিন-প্লাস্টিক থেকে তেল উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তেল পরিশোধন মেশিন না থাকায় এতদিন পলিথিন সংগ্রহ করতে পারিনি। এখন মেশিন আছে তাই সংগ্রহ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ১২ জনের কাছ থকে প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৮৫ কেজি পলিথিন বর্জ্য কেনা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহের শনিবার সকাল ১১টায় দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় পলিথিন কেনা হবে। শহরের যে কেউ এখানে অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক-পলিথিন দিয়ে যেতে পারবেন।
তেল তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রথমে বর্জ্য প্লাস্টিক পরিচ্ছন্ন করা হয়। পরে রিঅ্যাক্টরে লোড করে চুল্লি বন্ধ করা হয়। ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ৩৫০ থেকে ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর পলিথিন অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসে পরিণত হয়।
মিজানুর রহমান জানান, “প্রতিদিন ৫০ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ২৫ লিটার তেল পাওয়া যায়। ওই তেল পরিশোধন করে ১৫ লিটার ফার্নেস অয়েল, আট লিটার ডিজেল, দুই লিটার পেট্রোল, ২০ কেজি কার্বন পাওয়া যায়। যে গ্যাস পাওয়া যায় সেটা সংরক্ষণ করার মতো যন্ত্র না থাকায় ওই গ্যাস আবার পলিথিন পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অপচয় হয় ১০ ভাগ।”
তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে আমরা পলিথিন থেকে তৈরি তেল বিক্রি করেছি। আমরা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিদিন ৫০০ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে তেল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিভিন্ন সময় পলিথিনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হয়। এমনকি বিভিন্ন কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হওয়ায় এর ব্যবহার কমছে না। মানুষকে সচেতন করতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।
Comments