বায়ুদূষণে বাংলাদেশ প্রথম
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/air.jpg?itok=LWKdwQSD×tamp=1582699313)
বিশ্ব বায়ুমান প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের বায়ুর গুণমান সবচেয়ে খারাপ ছিল এবং ঢাকা ছিল দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ২১তম স্থানে।
তবে, রাজধানীর হিসেবে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা ছিল দ্বিতীয়।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “জনসংখ্যার গড় ব্যবহার করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছে।”
আইকিউ এয়ার গ্রুপ এবং গ্রিনপিসের যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের পরেই রয়েছে পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান এবং ভারত।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাস্থ্যকর বায়ুর হিসেবে বাহামাস, ইউএস ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং এস্তোনিয়া তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বায়ুদূষণ। বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষ শ্বাস নেবে অনিরাপদ বায়ুতে।
২০১৮ সালেও বিশ্ব বায়ু মানের তালিকায় দূষিত দেশের মধ্যে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, ঢাকায় বায়ুর গুণমান খারাপ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে, মাত্র কয়েকটি মেশিন ব্যবহার করে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া বায়ু মান দিয়ে বাংলাদেশেকে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর তালিকায় প্রথমে রাখাকে তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন।
বায়ুবাহিত দূষণের সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায় হচ্ছে বায়ুতে দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোন আকারের ধূলিকণা থাকা। যা মানুষের চুলের প্রস্থের প্রায় ৩০ ভাগের এক ভাগের সমান।
এই ধূলিকণাগুলো এতটাই ছোট যে তা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে রক্তের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এর কারণে হতে পারে অ্যাজমা, ফুসফুস ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক ব্যাধি।
বিশ্বের এক কোটি বা তারও বেশি মানুষ বসবাস করে এমন রাজধানী শহরের হিসেবে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ভারতের নয়াদিল্লির। এর পরেই আছে ঢাকা।
বায়ুদূষণ গবেষক আবদুস সালাম বলেছেন, আইকিউ এয়ার তথ্য সংগ্রহের জন্য ঢাকার ভেতরে ও বাইরে বেশ কয়েকটি সরঞ্জাম স্থাপন করেছিল। তারা উপগ্রহ থেকেও তথ্য নিয়েছে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “তথ্যের মান ভালো। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তথ্যগুলো মানসম্পন্ন সরঞ্জাম দিয়ে বৈধ করা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুস সালাম আরও বলেন, অন্য কোনো সংস্থার তথ্যই দেশের বায়ুর মানের ভালো অবস্থা দেখায়নি।
বায়ু মানের সূচক অনুযায়ী, শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে বায়ুর মান থাকলে তা স্বাস্থ্যকর, ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত সংবেদনশীল মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত বিপদজনক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। বায়ুদূষণের কারণে হওয়া হৃদরোগ, ক্যানসার এবং শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণ থেকে এই মৃত্যুহার বাড়ে।
ধারণা করা হয়, শহরাঞ্চলে বসবাসরত ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলো।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বায়ু দূষণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের ৩০টি দূষিত শহরের মধ্যে ২৭টি রয়েছে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু মানের তথ্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় বায়ুদূষণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হতে পারে। এর ফলে বাড়তে পারে বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড এবং বালি ঝড়ের তীব্রতা।
Comments