দক্ষিণ কোরিয়ায় যেভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে

চীনের পর সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। আজ শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ১৫০ জন। কেবল শনিবারেই আক্রান্ত হয়েছে ৮১৩ জন।
রয়টার্স ফাইল ফটো

চীনের পর সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। আজ শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ১৫০ জন। কেবল শনিবারেই আক্রান্ত হয়েছে ৮১৩ জন।

নতুন করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সন্দেহের তীর এখন দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের শহর দেগুর দিকেই। ধারণা করা হচ্ছে সেখানকার একটি গির্জা থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।

উহান ফেরত গির্জার ৪২ জনের কাছ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যারা সবাই খ্রিস্ট ধর্মের শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের।

শিনচিওনজির সাবেক সদস্য দুয়েন কিম মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘শিনচিওনজিদের কাছে অসুস্থতা কখনও ধর্মীয় কাজে যোগ না দেয়ার কারণ হতে পারে না। এটি এমন এক সংঘ যেখানে সদস্যদের স্কুলের মতো নাম ধরে ডাকা হয়। কারো অনুপস্থিতি ভালো চোখে দেখা হয় না, লিখে রাখা হয়। যদি আপনি রোববারের প্রার্থনায় উপস্থিত থাকতে না পারেন, তবে অবশ্যই সপ্তাহের অন্য যে কোনো দিন আপনাকে উপস্থিত থাকতেই হবে।’

দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষের ধারণা, এভাবেই একটি বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।  

তবে শিনচিওনজির পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রতিবেদন করা হচ্ছে, যে আমাদের ব্যতিক্রমি সেবাদান পদ্ধতির জন্যই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এটি ঠিক নয়।’

তবে কিম বলছিলেন, ‘গির্জায় মাস্ক এমনকি চশমা পড়াতেও কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা ছিল। ঈশ্বরের সামনে মুখে মাস্ক পড়াকে তারা অসম্মানের বলে জানিয়েছিল।’

সিএনএন জানিয়েছে, প্রায় আড়াই লাখ সদস্য রয়েছে শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের। যাদের মধ্যে ৩১ হাজার দক্ষিণ কোরিয়ার বাইরের।

তবে শুরুতেই শিনচিওনজি ও করোনাভাইরাস সংযোগ পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার ৩১তম কোরোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগির মাধ্যমেই এর যোগ পাওয়া যায়। যখন ৬১ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। যার কোনো বিদেশ ভ্রমণ কিংবা কোনো কোরনাভাইরাস আক্রান্তের সঙ্গে মেলামেশার ঘটনা ছিল না।

৩১ থেকে কোরোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫৬ তে পৌঁছায়, মারা যায় একজন। তখনই প্রথম দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-- চার্চের সঙ্গে করোনাভাইরাসের যোগসূত্র খুঁজে পায়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত সেই নারী দেগুর চার্চে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।

আর তারপরই যারা সেই চার্চে প্রার্থনায় যোগ দিয়েছিলেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

একই সঙ্গে এই সম্প্রদায়ের সব কার্যকলাপ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। শিনচিওনজি অনুসারীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এজন্য ৬০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে দেগু কর্তপক্ষ।

শিনচিওনজির বিলুপ্তি ঘটাতে অনলাইনে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন

সিউল পরিস্থিতি

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন বাংলাদেশের এম এন ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে  জানিয়েছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সব স্কুলের ছুটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। ২ মার্চ শীতকালীন ছুটির পর সব স্কুল খোলার কথা থাকলেও আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে। সব প্রাক-প্রাথমিক স্কুল ও ডে কেয়ার  বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি জানান, সিউলের শপিং মলগুলোতে খুব একটা ভীড় নেই। তবে অফিস-আদালত স্বাভাবিকভাবেই চলছে। সরকারিভাবে হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস শনাক্ত ও রোগিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বড় আকারে সবারই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে। চীন কিংবা দেগু ফেরত কিনা সেসব তথ্যও নেয়া হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

15m ago