রাজসিক ইনিংসে অস্বস্তি উড়ালেন তামিম
সমালোচনা ধেয়ে আসছিল, চাপ বাড়ছিল ক্রমশ। বেশ কিছু দিন থেকে খোলসবন্দি থাকা তামিম ইকবাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও ছিলেন বিবর্ণ। খোলস থেকে বেরুতে ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনও খেটেছিলেন। সব চাপ ঠেলে সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর তীব্রতা টের পাওয়া যাচ্ছিল তখনই। হলোও তাই। রাজসিক এক সেঞ্চুরিতে তামিম যাবতীয় অস্বস্তি উড়িয়ে দিলেন যেন কাছের মেঘালয় পাহাড়ে ওপারে।
মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তামিম গড়েছেন নতুন রেকর্ড। ১৩৬ বলে ২০ চার, ৩ ছক্কায় করে ফেলেছেন ১৫৮ রান। ওয়ানডেতে বাংলাদেশে কোন ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের ১৫৪ রানও ছিল তার, প্রতিপক্ষও ওই জিম্বাবুয়েই।
দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন তামিমই ছিলেন মূল আলোচনায়। প্রথম ম্যাচে ৪৩ বলে ২৪ রান করার পর তামিমকে ঘিরে বেড়ে যাওয়া অস্বস্তির ব্যাখ্যা দিতে হলো ব্যাটিং নিল ম্যাকেঞ্জিকে। জানালেন নতুন তথ্য, তার ধরে খেলার পরামর্শ দেওয়া নেই টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে। অর্থাৎ নিজের খেলার দায় তামিমের নিজেরই। এরপর একই ধাঁচে খেললে তুমুল তেতো কথার ঢেউ আসত তার দিকে।
ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে তাই সমস্যা খুঁজতে তামিম পার করেন লম্বা সময়। তা যেন কাজেও লাগল বেশ। স্টান্স নিতে গিয়ে ডান কাঁধ একটু বেশিই ভেতরে রাখেন তামিম। ম্যাকেঞ্জি বোঝালেন এমন রাখলে তো রান বের করা মুশকিল। কাঁধ একটু খোলা রাখলে তবেই শরীর কথা বলবে সাবলীলভাবে।
ম্যাকেঞ্জির দেওয়া এই টুটকা অনুসরণ করে নেটে বেশ ভালো চালালেন। আজ ম্যাচেও হয়ত সেই ছাপই দেখা গেল তার ব্যাটে।
গত ১২ ম্যাচে ৬৭.৭৩ স্ট্রাইকরেট আর ২৩.৩৭ গড়ে মাত্র ২৩৫ রান করেছিলেন। এবার খোলস থেকে বেরুলেন। মুক্তবিহঙ্গের মতো উড়লেন। ৪২ বলে স্পর্শ করলেন ফিফটি। ম্যাকেঞ্জি বলেছিলেন পাওয়ার প্লেতে দুএকটা বেশি বাউন্ডারি বের করতে। এদিন তামিম বের করলেন অনেকগুলো। চার্ল মুম্বাকে দারুণ পুলে চার মেরে তার শুরু। ওই শটে পাওয়া আত্মবিশ্বাস যেন জ্বালানি হলো গোটা ইনিংসে। অনেকদিন পর তামিমকে দেখা গেল সাবলীল স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে।
সেঞ্চুরির পথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ছুঁলেন সাত হাজার রান। ১০৬ বলে ১৪ চারে তিন অঙ্কে পৌঁছান তামিম। সেঞ্চুরির পর খোলে যায় আরও বাধন। সব শেষ ২০ ম্যাচেও কোন ছক্কা আসেনি তামিমের ব্যাট থেকে। এদিন টেনোটেন্ডা মুতুম্বুদজি আর শন উইলিয়ামসকে বেরিয়ে এসে উড়ান বিশাল দুই ছয়। মুম্বাকে ছক্কা মেরে নিজের আগের ১৫৪ রানও ছাড়িয়ে যান তিনি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান নিয়ে যান আরও উপরে। যে স্ট্রাইকরেট নিয়ে এত কথা। এবার ইনিংসে শেষে তা দাঁড়াল -১১৬.১৭। প্রতিপক্ষ ছিল সহজ, উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ। সবই ঠিক। কিন্তু তামিম মানসিকভাবে যে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছিলেন। তা থেকেই এমন এক ইনিংসের মাজেজা বেড়ে যাচ্ছে অনেকখানি।
Comments