বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বাড়ছে ৭২ শতাংশ

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা করা হয়েছে।
ছবি: স্টার গ্রাফিক্স

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়।

যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর কয়েকশ গজ উত্তরে এই রেলসেতুটি নির্মিত হবে। সংশোধিত প্রকল্পের সময়সীমা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা ছাড়াই একনেক প্রকল্পটির অনুমোদন দিলেও এর কাজ এখনও শুরু হয়নি। প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিস্তারিত নকশা তৈরির পরে ব্যয় বাড়ল।

এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ, জমি লিজ ও জাদুঘর নির্মাণের ব্যয় এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণেও ব্যয় বেড়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে থাকা নথি থেকে দেখা যায়, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির জন্য বর্ধিত ভ্যাট এবং বহিশুল্কও কারণ। 

ডুয়েলগেজ ডাবল-ট্র্যাকের এই সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করবে। এছাড়া, ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এই সেতু সহায়তা করবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোফাজ্জেল হোসেন গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে এই মাসের মধ্যেই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনের জন্য ১৪ মার্চ সম্ভাব্য তারিখ নিধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, রেলসেতুর নির্মাণ কাজ আগামী মাসে শুরু হবে।

মূল সেতুটি দুটি প্যাকেজের আওতায় নির্মিত হবে। নির্মাণ ব্যয়ের সিংহ ভাগ (৭২%) ঋণ সহায়তা দেবে জাপান।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সেতুটির পূর্ব অংশ নির্মাণ করবে ওবায়শি কর্পোরেশন, টিওএ কর্পোরেশন এবং জেএফই। এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ব্যয় ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। আইএইচআই এবং এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে পশ্চিম অংশ। এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। সবগুলো কোম্পানি জাপানের।

ব্যয় বৃদ্ধির কারণ

জানুয়ারির শুরুর দিকে প্রকল্পটি মন্ত্রিপরিষদ কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয় এবং তারা শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেয়। ফলে, একনেকে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে গতকাল পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) একটি জরিপ চালিয়ে প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন এবং নতুন কিছু বিষয় যুক্তের সুপারিশ করেছিল।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এর নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করতে প্রকল্প উন্নয়ন পরিকল্পনার (ডিপিপি) অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, প্রকল্পটির বিস্তারিত নকশা তৈরির পরে এটি সংশোধন করা হবে বলে ডিপিপিতে উল্লেখ ছিল।

মূল ডিপিপিতে দুটি প্যাকেজের ব্যয় ৭ হাজার ৯১১ দশমিক ২ কোটি টাকা ধরা হলেও নতুন ডিপিপিতে তা ১২ হাজার ৯৫০ কোটি উল্লেখ করা হয়েছে।

জাইকার জরিপে ৪১টি পিয়ারের প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং স্প্যানের আকার ধরা হয় ১২০ মিটার। সেই অনুযায়ী প্রাথমিক ডিপিপি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু, বিস্তারিত নকশায় বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো ১০০ মিটার স্প্যানের কথা বলা হয়েছে। এ কারণে, পিয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০টিতে, যা প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করেছে।

মূল ডিপিপি তৈরির সময় আয়কর এবং ভ্যাট হার যথাক্রমে পাঁচ শতাংশ এবং পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে সাত দশমিক ৫ শতাংশ। এ কারণে প্রকল্প ব্যয় আরও প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও, মূল ডিপিপিতে জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনও তহবিল বরাদ্দ করা হয়নি। কারণ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বিনা খরচে জমি দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু, আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৭০ একর জমি কিনতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৩৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা এবং ২৬৩ একর জমির ভাড়া বাবদ ১১ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা দেবে।

নথিতে বলা হয়েছে, ‘এই সেতু নির্মাণ কাজের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং জাপান-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে এর পাশেই একটি জাদুঘর তৈরি করা হবে।’

নতুন সেতু কেন?

রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের ট্রেনগুলোর শিডিউল বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ বর্তমান সেতুর ওজন এবং গতিজনিত সীমাবদ্ধতা।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সেতুতে অনুমোদিত গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার। ফলে, একটি ট্রেনের সেতুর পূর্ব পাশের স্টেশন থেকে পশ্চিম পাশের স্টেশন যেতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লাগে।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন একাধিকবার বলেছেন, জয়দেবপুর এবং ঈশ্বরদীর মধ্যে রেল সেতু ও দ্বৈত লাইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।

জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত একটি সিঙ্গেল লাইনের রেলপথ রয়েছে। ১৭৪ কিলোমিটার এ রেলপথে ৪২টি ট্রেন চলাচল করে। যা বঙ্গবন্ধু সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে দেশের পশ্চিম অঞ্চলকে যুক্ত করেছে।

অথচ এই রুটে সর্বোচ্চ ২২টি ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে বলে জানান কর্মকর্তারা। 

তারা আরও বলেন, এই প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মালবাহী পরিবহনের সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই, জাতীয় ও আঞ্চলিক দাবি অনুযায়ী একটি রেলসেতু প্রয়োজন। 

এসব বিবেচনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি রেলসেতু ও জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়ালগজ ডাবল লাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago