সিলেটের ক্রিকেট মাঠে রাখতে এনামুলদের বিশেষ উদ্যোগ
মূলত ক্রিকেটাররা মাঠে খেলবেন, সংগঠকরা ব্যবস্থা করে দেবেন বাকি সবকিছুর, করবেন সার্বিক দেখভাল। কিন্তু বাংলাদেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বাস্তবতা যেন ভিন্ন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিত্তি ঢাকাকেন্দ্রিক এবং ক্রিকেট বোর্ডের ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দুতেও জাতীয় দল। ঢাকার বাইরে কী হচ্ছে, তার খবর আর কজন রাখেন! ক্রিকেট বিকেন্দ্রীকরণের কাজটাও তাই অনেকদিন থেকেই বড় আক্ষেপের জায়গা হয়ে আছে। সিলেটে যেমন এবার প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু না হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। সেই শঙ্কা অবশ্য উবে গেছে। তাতে সংগঠকদের ভূমিকার পাশাপাশি আছে ক্রিকেটারদের চাপও।
যথাসময়ে লিগ শুরু নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দেনদরবার চালান সিলেটের নামকরা বর্তমান ক্রিকেটাররা। আগামীতেও এমন সংকটে পড়তে হবে সেই শঙ্কায় তারা এবার তৈরি করে ফেলেছেন সিলেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। নবগঠিত এই সংগঠন চালাবেন বর্তমান ক্রিকেটাররাই। প্রথমবার এই কমিটির সভাপতি হয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র, ব্যাটসম্যান ইমতিয়াজ হোসেন তান্নাকে করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠনে আছেন অলক কাপালীসহ সিলেটের খ্যাতিমান সব তারকাই।
গত জানুয়ারি মাসে বিপিএল চলাকালীন এনুমলই খেলা কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের কাছে সিলেটের লিগ নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, সেই লিগ এবার আর হবেই না।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সব সময় স্থানীয় লিগের জন্য পাওয়া যায় না। প্রথম বিভাগ লিগ তাই হয়ে আসছিল জেলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেই মাঠটিতে আবার কেবল ক্রিকেটই চলে না, একইসঙ্গে ফুটবলও হয়। ক্রিকেটের উইকেট আর আউটফিল্ড ঠিক রাখা তাই কঠিন। এই মার্চেই যেমন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যাচ আছে এখানে। ৮ মার্চ লিগের তারিখ ঠিক হলেও উইকেট নিয়ে ছিল অস্বস্তি। শুরুতে ঠিক হয়েছিল, ম্যাটের উইকেটে হবে খেলা। তাতে ক্রিকেটারদের ছিল আপত্তি।
পরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সিলেট আসায় হয়েছে সমাধান। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের প্রথম ওয়ানডের দিন স্থানীয় সংগঠকদের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে গেছেন তিনি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন সেলিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের আর কোনো সংকট থাকছে না, ‘বিসিবি সভাপতি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম দিয়ে গেছেন, লিগ তাই ওই ভেন্যুতেই হবে। সামনের বছর আউটার স্টেডিয়ামও প্রস্তুত হয়ে যাবে। মাঠে খেলা চালু নিয়ে সিলেটে আর কোনো সংকট থাকবে না।’
বাংলাদেশকে প্রথম টেস্ট জেতানো সিলেটের তারকা এনামুল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দেরিতে হলেও লিগ ঠিকভাবে শুরু হওয়ায় তারা খুশি। আগামীতে নির্দিষ্ট সময়ে লিগ নিয়মিত করতে সংগঠকদের পাশাপাশি ভূমিকা থাকবে তাদেরও, ‘অবশেষে লিগ শুরু হচ্ছে, এটাই বড় কথা। একই সময়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থাকায় আমরা এলিট খেলোয়াড়রা সিলেট লিগে যদিও খেলতে পারব না। কিন্তু স্থানীয় তরুণদের জন্য লিগটা ভীষণ দরকার ছিল। আগামী বছর যেন আরও আগে লিগ শুরু হতে পারে, সেজন্য আমরাও সক্রিয় থাকব।’
সিলেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে লিগের আগে দেওয়া হয়েছে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টও। এনামুল জানালেন, বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই টুর্নামেন্টে। সিলেটের ক্রিকেট মাঠে রাখার জন্য এই সংগঠন থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে থাকবেন তারা।
এনামুল-অলকদের আশা, নিয়মিত খেলা চালু থাকলে, সিলেট থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে যাবে দেখা যাবে আরও অনেককেই।
Comments