করোনাভাইরাস: যা জানা জরুরি

কোভিড-১৯ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ পৌঁছেছে বাংলাদেশেও। রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ বিষয়ে বেশকিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং সেগুলোর উত্তর দেয়া হয়েছে সংস্থার ওয়েবসাইটে।

করোনাভাইরাস কী?

করোনাভাইরাস হলো ভাইরাসের এক বিশেষ পরিবার, যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির বিভিন্ন রোগের কারণ। মানবদেহে এর আগে মার্স করোনাভাইরাস, সার্স করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা গেছে।

কোভিড-১৯ কী?

কোভিড-১৯ হলো সবশেষ আবিষ্কৃত করোনাভাইরাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া রোগ। নতুন এই ভাইরাস এবং রোগটি গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত অজানা ছিল।

কোভিড-১৯ এর লক্ষণ কী?

সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- জ্বর, ক্লান্তি এবং শুকনো কাশি। কোনো রোগীর গায়ে ব্যথা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা বা ডায়রিয়া হতে পারে। এসব লক্ষণ শুরুতে খুব হালকা মাত্রায় থাকতে পারে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে পারে। আবার কোনো লক্ষণ বা অসুস্থতা বোধ না করলেও আক্রান্তের ঘটনা ঘটতে পারে। আক্রান্তদের বেশিরভাগ (প্রায় ৮০ শতাংশ) কোনো বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হন। প্রতি ৬ জনের মধ্যে মাত্র একজনের ক্ষেত্রে রোগটি জটিল হতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ অথবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরির ঝুঁকি বেশি।

জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।

কীভাবে ভাইরাসটি ছড়ায়?

কোভিড-১৯ আক্রান্তের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। হাঁচির অণুকণা যেখানে পরে সেখান থেকে অন্য কারো হাতে ভাইরাস ছড়ায়। এরপর সেই হাতে নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ করলে তার শ্বাসতন্ত্রেও সংক্রমণ ঘটে।  এমনকি আক্রান্তের হাঁচি-কাশির সময় সেখানকার বাতাস গ্রহণ করেও অন্য কেউ ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন।

এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরে থাকা উচিত।

ভাইরাসটি কি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়?

এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, নতুন করোনাভাইরাসটি কেবল আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট ইনফেকশন বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়।

যিনি আক্রান্ত নন, তার মাধ্যমে কী ছড়াতে পারে?

কোভিড-১৯ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি। এছাড়া যেসব আক্রান্তের ক্ষেত্রে সংক্রমণের লক্ষণ এখনো প্রকাশ পায়নি তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা খুবই কম।

আক্রান্তের মল থেকে কি ছড়াতে পারে?

আক্রান্ত ব্যক্তির মল থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি সামান্য। তবে প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মলে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে।

নিজেকে রক্ষার উপায় কী?

খুব সাধারণ কিছু সতর্কতা নিলেই প্রতিরোধ করা যায়।

       নিয়মিত ও ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।

       যারা হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্বে থাকা।

       চোখ-নাক-মুখে হাত না দেওয়া।

       হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি তা মেনে চলা।

       অসুস্থতা বোধ করলে বাড়িতে থাকা। যদি জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

       কোরোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এমন এলাকা এড়িয়ে চলা।

করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে এমন এলাকা থেকে যারা এসেছেন তাদের করণীয়

       অসুস্থ বোধ, বিশেষ করে হালকা জ্বর (৯৯.১ ফারেনহাইট), মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়লে বাড়িতে সেল্ফ আইসোলেট বা আলাদা থাকা। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে থাকতে হবে। খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা।

       জ্বর, কাশি ও শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

আপনি কতটা ঝুঁকিতে?

এটি নির্ভর করে আপনি কোথায় আছেন। আরও স্পষ্ট করে যেখানে আছেন সেখানে কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস তা বিবেচনা করতে হবে।

বেশিরভাগ জায়গাতেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হার খুব কম। তবে যেসব জায়গায় দ্রুত এটি ছড়িয়েছে সেখানে যারা থাকেন, ভ্রমণ করেছেন তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

এখনও পর্যন্ত এটি নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী বয়স্ক ব্যক্তি এবং যারা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, ফুসফুসের জটিলতার মতো রোগে ভুগছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অ্যান্টিবায়োটিক কি কাজ করে?

অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো কাজ করে না। কেবল ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে কাজ করে। কোভিড-১৯ যেহেতু ভাইরাস থেকে ছড়ায়, তাই অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করবে না।

চিকিৎসায় টিকা বা ওষুধ কি আছে?

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় এখনও কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের লক্ষণ দেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিৎ। বেশিরভাগই সহায়ক যত্নেই ভালো হয়েছেন।

তবে কোভিড-১৯ এর টিকা ও ওষুধ তৈরির চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে ক্লিনিকাল টেস্টও হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা ও ওষুধ তৈরিতে সর্বাত্মক সহায়তা করছে।

মাস্ক পরা কি উচিৎ?

কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলো দেখা গেলে এবং অসুস্থতা বোধ করলেই কেবল মাস্ক পরুন। একবার ব্যবহারের পর সেই মাস্ক নষ্ট করে ফেলতে হবে। তবে যদি অসুস্থ বোধ না করলে মাস্ক ব্যবহারের দরকার নেই।

কীভাবে মাস্ক পরবেন, খুলবেন এবং তা ধ্বংস করতে হবে?

১. মনে রাখতে হবে কেবল স্বাস্থ্যকর্মী, কেয়ারটেকার এবং যাদের কোরোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে তারাই মাস্ক ব্যবহার করবেন।

২. মাস্ক ধরার আগে অবশ্যই হাত ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

৩. মাস্কে কোনো ছেড়া-ফাটা আছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে।

৪. মাস্কের কোনটি ওপরের দিক (মেটাল স্ট্রিপ) তা নিশ্চিত হতে হবে।

৫. মাস্কের বাইরের দিক (রঙিন অংশ) নিশ্চিত হওয়া দরকার।

৬. মাস্ক মুখে পরা এবং মেটাল স্ট্রিপের অংশ নাকে ঠিকমতো লাগানো উচিত।

৭. মুখ ও থুঁতনি ঢেকে থাকে এমনভাবে মাস্কটিকে পড়তে হবে।

৮. ব্যবহারের পর মাস্কটি খুলে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে কানের একপাশ থেকে মাস্কটি খুলতে হবে। যতটা সম্ভব মুখ এবং পোশাকের সঙ্গে যাতে স্পর্শ না লাগে এমনভাবে খুলতে হবে।

৯. মাস্কটি খুলে ফেলার পর বন্ধ কোনো ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।

১০. মাস্ক খোলার পর হাত ভালো করে সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

কোভিড-১৯ এর লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার সময় কতটা?

ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ও এর লক্ষণ প্রকাশের মাঝের সময়কে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কভিড-১৯ এর  ইনকিউবেশন পিরিয়ড এক থেকে ১৪ দিন।

প্রাণির মাধ্যমে মানুষ কতটা আক্রান্ত হতে পারে?

আগেই বলা হয়েছে করোনাভাইরাস ভাইরাসের একটি বিশাল পরিবার। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণি এতে আক্রান্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ অন্য কোনো প্রাণির মাধ্যমে ছড়িয়ে কিনা তা জানা যায়নি।

পোষা প্রাণি থেকে কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে?

পোষা প্রাণির মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কোনো জায়গায় কতদিন টিকে থাকতে পারে ভাইরাস?

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কোনো কোনো জায়গায় কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে সেখানে কতদিন টিকে থাকতে পারে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে অন্য করোনাভাইরাসের মতোই এটি আচরণ করে। কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের নিয়ামকের ওপর।

যা করা উচিৎ নয়

কোভিড-১৯ এর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে--

ধূমপান

একাধিক মাস্ক পরিধান

নিজে নিজে ওষুধ সেবন বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam, associates laundered money thru shell firms

Mohammed Saiful Alam and his family have acquired vast wealth at home and abroad, using money siphoned off through loans taken in the name of front companies

9h ago