লিটন-সৌম্যের ঝড়ের জবাব দিতে পারল না জিম্বাবুয়ে
ওয়ানডের ছন্দ ধরে রেখে টি-টোয়েন্টিতেও ঝড় তুললেন লিটন দাস। বিয়ের ছুটির পর ফিরে সৌম্য সরকার টি-টোয়েন্টিতে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছুটিয়ে আসর মাতালেন দুজনে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবার দুইশ স্পর্শ করল বাংলাদেশ। পরে শন উইলিয়ামসদের তালগোল পাকানো রান তাড়ায় বাংলাদেশ জিতল অনায়াসে।
সোমবার (৯ মার্চ) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লড়াই হয়েছে একপেশে। আগে ব্যাটিং পেয়ে ২০০ রান করা বাংলাদেশ সফরকারীদের গুটিয়ে দিয়েছে ১৫২ রানে। ৪৮ রানে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর দল।
করোনাভাইরাসের কারণে এদিন টিকিট বিক্রিতে কিছুটা সীমাবদ্ধতা এনেছিল বিসিবি। তবু অন্তত সাত-আট হাজার দর্শকের উপস্থিতি দেখা গেছে গ্যালারিতে। লিটন, সৌম্যের ঝড়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে হেসেখেলে জিততে দেখার তৃপ্তি নিয়ে ফিরেছেন তারা।
উইকেটে প্রচুর রান। টস জিতে উইলিয়ামস তবু বাংলাদেশকেই দিলেন ব্যাটিং। রান তাড়া করতে নামা হবে আরও সহজ এই ভাবনায়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নেমে যা করলেন, তাতে রান আর নাগালে থাকল না জিম্বাবুয়ের।
লিটন-তামিম ইকবাল জুটি বাংলাদেশকে পাইয়ে দিল দারুণ আরেকটি শুরু। টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে ওপেনিং জুটিতে নিজেদেরই করা রেকর্ড ৭৪ রানের জুটি ছাপিয়ে গেলেন তারা। এবার দুজনে যোগ করলেন ৯২ রান। স্বাভাবিকভাবে জুটিতে উত্তাল ছিল লিটনের ব্যাট। একাদশ ওভারে অফ স্পিনার ওয়েসলি মাধেভেরেকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৩৩ বলে ৪১ রান করে তামিম থামলে ভাঙে তাদের জুটি।
লিটন ততক্ষণে ফিফটির ধারে। হাফসেঞ্চুরি পেরিয়ে অবশ্য বেশিদূর এগোয়নি তার ইনিংস। আরেক অফ স্পিনার সিকান্দার রাজার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিটন। ৩৯ বলের ইনিংসে বাংলাদেশের ওপেনার ৫ চার, ৩ ছক্কায় করেছেন ৫৯ রান।
লিটন যেখানে থেমেছিলেন, সৌম্যের শুরু যেন সেখানেই। বিয়ের জন্য ছুটি নেওয়ায় ছিলেন না টেস্ট ও প্রথম দুই ওয়ানডের দলে, তৃতীয় ওয়ানডেতে ফিরলেও খেলা হয়নি। এদিন তার ব্যাটে দেখা গেল বিস্ফোরণ।
উইলিয়ামসকে এগিয়ে এসে তেড়েফুঁড়ে মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কায় তার শুরু। পরে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড টিরিপানো, ক্রিস্টোফার এমপোফুর ওপর। জায়গা বের করে লং অফ দিয়ে উড়িয়েছেন, মেরেছেন দারুণ পুল শট। তার ব্যাট থেকে এসেছে মোট ৫ ছক্কা। ২৯ বলে ফিফটি পেরুনোর পর টানা দুই ছক্কায় চলে যান ৬২ রান। দলকে পৌঁছে দেন দুইশ রানে।
রান তাড়ায় চাপ ছিল প্রবল। তবে উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ হওয়ায় একেবারে অসম্ভব ছিল না। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ব্যাট করতে নামল যেন পরিকল্পনাহীনভাবে। পুরো সিরিজে তাদের হতাশার নাম ব্রেন্ডন টেইলর আবার ফেরেন দ্রুত। শফিউল ইসলামের বলে সহজ ক্যাচ তুলে বিদায় তার।
ক্রেইগ আরভিন আর মাধেভেরেও বিদায় দেন দ্রুত। ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউই থিতু হয়েছিলেন, অধিনায়ক উইলিয়ামসও তার সঙ্গে মিলে যোগাচ্ছিলেন আশা। লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব পর পর দুই বলেই ফিরিয়ে দেন দুজনকে।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খুইয়ে ধসে পড়া জিম্বাবুয়ে আর টিকতে পারেনি ম্যাচে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দারুণ খেলা টিরিপানোকে নামানো হয় নয়ে। তার করার ছিল সামান্যই। চার্ল মুম্বা আর টিরিপানো মিলে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ২০০/৩ (তামিম ৪১, লিটন ৫৯, সৌম্য ৬২*, মুশফিক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৪*; রাজা ১/৩১, মুম্বা ০/২৪, টিরিপানো ০/৩৯, এমপোফু ১/৫৮, মাধেভেরে ১/১৫, উইলিয়ামস ০/৩১)।
জিম্বাবুয়ে: ১৯ ওভারে ১৫২ (কামুনহুকামউই ২৮, টেইলর ১, আরভিন ৮, মাধেভেরে ৪, উইলিয়ামস ২০, রাজা ১০, মুটুমবামি ২০, মুটমবোডজি ২, টিরিপানো ২০, মুম্বা ২৫, এমপোফু ২*; মোস্তাফিজ ৩/৩২, শফিউল ১/১৯, সাইফউদ্দিন ১/১৯, মেহেদী ০/২৯, বিপ্লব ৩/৩৪, আফিফ ১/১৮)।
ফল: বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী।
Comments