মধ্যরাতে তুলে নিয়ে সাংবাদিককে ‘মাদকের দায়ে’ ১ বছরের জেল দিল ভ্রাম্যমাণ আদালত

কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এক সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর মাদক রাখার দায়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা টাস্কফোর্সের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
Ariful Islam-1.jpg
আরিফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এক সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর মাদক রাখার দায়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা টাস্কফোর্সের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভোকেশনাল মোড় এলাকার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই সাংবাদিককে আটক করা হয় বলে জানান কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন।

দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম (৩৬) অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন-এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তার বাড়িতে এক বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন সুলতানা পারভীন।

তবে আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মানসারিনা মিতু সাংবাদিকদের জানান, তিন জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আট জন আনসার সদস্যের একটি দল গতরাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বাড়িতে আসে। এরপর তারা আরিফুলকে মারধর করে। পরে তাকে আটক করে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানেও তাকে মারধর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে প্রতিবেদন করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। এ ছাড়া সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এতে আরিফুলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হয় প্রশাসন। যে কারণে তাকে মাদক রাখায় দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুলতানা পারভীন। তার দাবি, আরিফুলের বাসায় অভিযান চালানোর বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। পরে বিষয়টি অবগত হয়েছেন।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘যে মানুষকে কোনোদিন ধূমপান করতে দেখিনি, তার বাড়ি থেকে মাদকদ্রব্য পাওয়ার ঘটনা অবিশ্বাস্য। আমরা তার জামিন নয়, নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরিফুল ইসলামের মুক্তি চেয়েছেন তিনি। না হলে কঠোর আন্দোলন করারও ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এক যৌথ বিবৃতিতে আরিফুলকে মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে জেলে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও রিপোর্টার আল-আমীনের মামলা সাংবাদিক সমাজের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া বেশ কয়েকদিন যাবত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ থাকলেও তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো বক্তব্য না পাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাংবাদিক সমাজ। সর্বশেষ কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাসভবন থেকে একটি মহল তুলে নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে।

তারা আরও বলেন, এসব ঘটনার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে সাংবাদিক সমাজের দ্বন্দ্ব তৈরি করার অপচেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো। এসব ঘটনার মাধ্যমে বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যাহত করার চক্রান্তে ব্যস্ত নানা চিহ্নিত মহল।

নেতারা এ ধরনের অপচেষ্টাকারীদের সতর্ক করে দিয়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দাবি করেন। নতুবা কঠোর আন্দোলন করা হবে বলেও জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now