করোনাভাইরাস

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ইউরোপ

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল এখন ইউরোপ— এমনটিই বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইউরোপের দেশগুলোতে এটির সংক্রমণ বাড়ছে।
Coronavirus
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জার্মানির একটি বিমানবন্দরে মাস্ক পরে আছেন যাত্রীরা। ছবি: রয়টার্স

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল এখন ইউরোপ— এমনটিই বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইউরোপের দেশগুলোতে এটির সংক্রমণ বাড়ছে।

এর প্রভাব পড়ছে ইউরোপের অর্থনীতিতে। অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ছে ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্য।

এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ৩৭ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এ ছাড়া, সদস্য দেশগুলোর এক লাখ প্রতিষ্ঠানকে ৮ বিলিয়ন ইউরো ঋণ সহায়তা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন। ইউরোপের অনেক দেশ তাদের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহতায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। স্থগিত করা হচ্ছে ফ্লাইট, বাতিল করা হচ্ছে জনসমাগম হয় এমন সব কর্মসূচি। একইসঙ্গে অনেক দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দোকান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নাগরিকদের পেশাগত কাজ, হাসপাতালে যাওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা কিংবা জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

শেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৯০১ জন। মারা গেছেন ৫ হাজার ৮০১ জন।

আজ রোববার সিএনএন, ফোর্বস ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চীনের পর ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৫২ জন। একদিনে মৃত্যুর এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড। মোট মারা গেছেন ১ হাজার ৪৪১ জন এবং আক্রান্ত ২১ হাজার ১৫৭ জন।

আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটির সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। ওষুধ ও খাবারের ছাড়া অন্য সব ধরনের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্পেনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৭৫৩ জন, মারা গেছেন ১৮৩ জন। ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার, মারা গেছেন ৯১ জন। জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৮৫ জন, মারা গেছেন নয় জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ১ হাজার ১৪০ জন, মারা গেছেন ২১ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১ হাজার ১৮৯ জন, মারা গেছেন ১১ জন। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ৯৫৯ জন, মারা গেছেন ১০ জন। সুইডেনে আক্রান্ত ৭৭৫ জন, মারা গেছেন একজন। ডেনমার্কে আক্রান্ত ৮২৭ জন, মারা গেছেন একজন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৫৫৯ জন, মারা গেছেন তিন জন। অস্ট্রিয়ায় আক্রান্ত ৫০৪ জন এবং মারা গেছেন একজন।

স্বাভাবিক হচ্ছে চীন

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই মাস অস্থিতিশীল থাকার পর চীনের পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে চীনের জনগণ। এক মাস আগেও প্রায় পুরো দেশই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। বেশিরভাগ মানুষকে নিজ ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হয়েছিল। বন্ধ করে রাখা হয়েছিল গণপরিবহন।

এখন সেখানকার এসব নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। আগে দেশটির ১ হাজার ১১৯টি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ বন্ধ থাকলেও এখন দুইটি ছাড়া সবগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরের বন্ধ করে রাখা সড়কগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। হাইওয়েতে স্থাপন করা ১২ হাজার ২৮টি কোয়ারেন্টিন সেন্টারের মধ্যে ১১ হাজার ১৯৮টিই তুলে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কাজে ফিরতে শুরু করেছে কর্মমুখী মানুষেরা।

চীনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে দেশটিতে মারা গেছেন ৩ হাজার ১৯৯ জন এবং আক্রান্ত ৮০ হাজার ৮৪৪ জন। এর মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২০, মৃতের সংখ্যা ১০।

স্প্যানে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজের স্ত্রী ডোনা বেগোনা গোমেজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।

মৃত বাড়েছে ইরানে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক থেকে চীনের পর তৃতীয় অবস্থোনে রয়েছে ইরান। সেখানে মোট আক্রান্ত ১২ হাজার ৭২৯ জন এবং মারা গেছেন ৬১১ জন। এর মধ্যে নতুন মৃত্যুর সংখ্যা ৯৭।

যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতোমধ্যে সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৩ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২ হাজার ৮০০ জন। মারা গেছেন ৫৮ জন। দেশটির ৫০টি রাজ্যের ৪৯টিতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

নিউজার্সির হোবোকেনে কারফিউ

করোনাভিাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির হোবোকেন শহরে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে শহরটির মেয়র ভাল্লা জানান, রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ শহরের অধিবাসীদের নিজ ঘরে থাকতে হবে। তবে, যাদের এ সময়ের মধ্যে পেশাগত কাজ থাকবে, তারা বের হতে পারবেন।

ফিলিপাইনের রাজধানী অঞ্চলের আংশিক অবরুদ্ধ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ফিলিপাইনের মেট্রো ম্যানিলা অঞ্চলের আংশিক অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ অঞ্চলের সমুদ্র, স্থল ও আকাশ পথে ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছে। যা আজ থেকে কার্যকর হবে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানকার স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছড়া, কোম্পানিগুলো যাতে কর্মীদের ঘর থেকে কাজ করার অনুমতি দেয়, তাও বলা হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কনসার্ট, ক্রীড়া কর্মসূচিসহ বিবিন্ন অনুষ্ঠান।

ফিলিপাইন স্ট্যাটিসটিকস অথরিটির তথ্য অনুযায়ী, ১৬টি শহর নিয়ে মেট্রো ম্যানিলা বা জাতীয় রাজধানী অঞ্চল গঠিত। যেখানে বাস করছেন ১ কোটিরও বেশি মানুষ।

দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১১১ জন। মারা গেছেন আট জন।

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করলেই ১৪ দিনের সেলফ-কোয়ারেন্টিন

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করলেই সবাইকে ১৪ দিনের সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। গতকাল তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন, যা আগামীকাল মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে।

মরিসন বলেন, ‘এখনই সব স্কুল বন্ধ করার পরিকল্পনা নেই। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ আলোচনা করবে।’

এ ছাড়া, অস্ট্রেলিয়ায় আসা সব ধরনের জাহাজেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এর আগে, জনসমাগম ও খেলাধুলাসহ বেশকিছু কর্মসূচি বাতিল করেছে দেশটি।

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৯ জন। মারা গেছেন তিন জন।

সংক্রমণ কমছে দক্ষিণ কোরিয়ায়

করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে চীনের পর সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়। কিন্তু, বিগত কয়েকদিনে সেখানে ভাইরাসটির সংক্রমণ কমছে বলে জানা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ১৬২ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ৭৬ জন। মারা গেছেন ৭৫ জন।

Comments