জনস্বাস্থ্য হুমকি মোকাবিলায় সার্ক প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি ‘শক্তিশালী কৌশল’ তৈরি এবং নিবিড়ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই জনস্বাস্থ্যের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সার্কের ব্যাপক কৌশল অবলম্বন করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার বিকেলে গণভবন থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঠিক কর্মকৌশল গ্রহণে নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারী মোকাবেলার জন্য সব সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা এবং সহায়তা করা দরকার। ‘আমাদের সম্মিলিত সক্ষমতা, দক্ষতা এবং সম্পদের সাহায্যে এই সহযোগিতা তৈরি করতে হবে,’ তিনি বলেন।
এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সার্কভুক্ত দেশগুলোর যৌথ কর্মকৌশল নির্ধারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্ক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে এই ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি নিজ নিজ দেশের পক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। পাকিস্তানের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাফর মীর্জা নিজ দেশের পক্ষে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ তার সক্ষমতা এবং দক্ষতা ভাগ করার জন্য প্রস্তুত, পাশাপাশি প্রয়োজনে যৌক্তিক সহায়তা প্রদানসহ সার্ক দেশগুলোর সাথে সর্বোত্তম অনুশীলনের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে।‘
তিনি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে যে কোনও জনস্বাস্থ্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও লড়াই করার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে যে কোনও জনস্বাস্থ্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও লড়াইয়ের জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা যদি সবাই একমত হন তবে বাংলাদেশ এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাগতিক হতে খুশিই হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক দেশগুলোতে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিবিড় সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে কাজ করা দরকার।
‘আসুন আমরা কীভাবে আজকের বিশ্বে একে অপরের সাথে সংযুক্ত রয়েছি তা ভুলে যাব না,’ বলেন তিনি ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যকর ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগ গ্রহণ করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।
‘আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগের অপেক্ষায় আছি, সম্মানিত মহোদয়গণ, যেমনটি প্রয়োজন এবং আশাকরি সম্মিলিতভাবেই আমরা এই মহামারি পরিস্থিতিতে আমাদের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব, ’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের সংলাপ কারিগরি পর্যায়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এই জাতীয় ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে সহযোগিতার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালককে এই ভিডিও কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে,’ বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় (পৃথক অবস্থায়) ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সাথে চীনের উহান থেকে ২৩ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আনা এবং হোস্টিংয়ের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯’র বিস্তার রোধে তার সরকারের পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে শক্তিশালী নজরদারি ও কঠোর চেক-আপের মাধ্যমে ভাইরাসটির প্রবেশ সফলতার সঙ্গে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে মাত্র ৩টি কোভিড-১৯ আসার ঘটনা রয়েছে (বিদেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে আসা)। তারা ইতোমধ্যেই সেরে উঠেছেন। ইউরোপ থেকে আরো দুটি আক্রান্ত ব্যক্তির আগমনের (করোনা ভাইরাস আক্রান্ত) ঘটনা ঘটেছে। আমাদের এখানে কোনও কোভিড-১৯ সংক্রমণ স্থানীয় বা সম্প্রদায় পর্যায়ে ঘটেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সকল স্তরের সকল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সোশ্যাল মিডিয়াসহ সকল মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক সচেতনতা তৈরিতে প্রচারণাও চালাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দলের কর্মীরা সকল স্তরে সচেতনতা বাড়াতে সক্রিয়, অন্যদিকে স্থানীয় সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রয়োজনে হোম কোয়ারেনটাইন (পৃথক ব্যবস্থা) প্রয়োগ করতে সচেতন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ঢাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালসহ নবনির্মিত চারটি হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছে।
এরসঙ্গে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতেও একটি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়াও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আমরা সকল জেলা হাসপাতালগুলোতে পৃথক শয্যার ব্যবস্থা রেখেছি, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এমন কিছু ফাঁকা ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে প্রয়োজনে সাময়িক হাসপাতাল তৈরী করেও চিকিৎসা চলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং স্কুলের ছেলে-মেয়েদেরকেও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, সরকারের কাছে টেস্টিং কিট, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, বিচ্ছিন্নতা গাউন এবং মুখোশের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
Comments