আমাদের আরও পরীক্ষা প্রয়োজন

বাংলাদেশে এখনও করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (যেখানে সংক্রমণের উৎস জানা যায় না) শুরু হয়নি। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের এমন দাবি আমাদের বিহ্বল করে। আমাদের মতো এত বিশাল জনসংখ্যার দেশে হাতে গোনা কয়েকজনকে পরীক্ষা করে তার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ এর বাস্তব চিত্র পাওয়া সম্ভব না।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, খুবই কম মানুষকে পরীক্ষা করা হচ্ছে এর ফলে সত্যিকারের পরিস্থিতি অবমূল্যায়িত হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে সেখানে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন থেকে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কীভাবে এতটা নিশ্চিত হতে পারে যে বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নেই?
আইইডিসিআর কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মাত্র ৭১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভয়াবহভাবে করোনায় সংক্রমিত ইতালি এবং অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশিরা ফিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরেছেন কোয়ারেন্টিন বিধি না মেনেই। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে এত সংখ্যক মানুষ আসার পরে এত কম সংখ্যক পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অবস্থা বুঝতে পারা সম্ভব না। জানা গেছে, বিদেশফেরতরা আত্মীয়-স্বজন এবং সমাজের বিভিন্ন জনের সঙ্গে দেখা করছেন। তারা যদি সংক্রমিত হয়ে থাকেন, তাহলে এই সাক্ষাৎ কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত, কোভিড-১৯ এ চার জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেছে। তবে মারা যাওয়া দ্বিতীয় রোগী কীভাবে সংক্রমিত হয়েছিলেন তা এখনও জানতে পারেনি আইইডিসিআর।
সরকারের এখন উচিত ভাইরোলজিস্টদের কথায় মনোযোগ দেওয়া। যারা বলছেন, আরও অনেক পরীক্ষা করাতে হবে। একমাত্র করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র আইইডিসিআরে মাত্র ৪৪ জন এপিডেমিওলজিস্ট আছেন নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও গবেষণা এবং কীভাবে সংক্রমিত হয়েছে তা সনাক্ত করার জন্য। জরুরি ভিত্তিতে সারা দেশে এই পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। যেসব হাসপাতালের পরীক্ষার সুবিধা আছে সেখানে এই সক্ষমতা আরও বাড়ানো যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা যেমনটি বলেছেন, সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে কতজন সংক্রমিত হতে পারে, কতজনকে হাসপাতালে রাখতে হতে পারে তার সম্ভাব্য পরিসংখ্যান বের করতে হবে এবং আইসিইউ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রীর পাশাপাশি চিকিৎসাকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে।
Comments