করোনাভাইরাস কি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়
নতুন করোনাভাইরাস খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা এখন আসলে আমাদের সামাজিকতা নিয়ে, আমাদের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে এবং আমাদের ভাবতে হচ্ছে বাইরের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে।
কিন্তু এই ভাইরাস কি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়? এ নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। তবে এখনও সুর্নিদিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি গবেষকেরা। গবেষণাগারের পরিবেশে পাওয়া ফলের সাথে বাস্তব পরিস্থিতি অনেক সময়ই মিলছে না।
আজ বুধবার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আমরা জানি, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মূল মাধ্যম হলো আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশি। একবার কাশি দিলে বাতাসে ৩ হাজারের মতো অনুকণা ছড়ায়, যা হাঁচির ক্ষেত্রে ১০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
এই অনুকণাগুলো বাতাসে ভেসে অন্য ব্যক্তির শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে, অথবা এমন কোনো জায়গায় গিয়ে পড়তে পারে যে জায়গাটি সুস্থ কেউ স্পর্শ করতে পারে। তখন সেই ব্যক্তি তার মুখমণ্ডলে, বিশেষ করে চোখ, নাক বা মুখ সেই হাত দিয়ে স্পর্শ করে তবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
এভাবে সংক্রমণকে ‘ড্রপলেট স্প্রেড’ বলা হয়। এমন ছড়ানোর ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস অল্প সময়ের জন্য বাতাসে ভাসে এবং মাটিতে পড়ার আগপর্যন্ত অল্প দূরত্ব অতিক্রম করে।
আক্রান্তের শরীরের বাইরে গিয়ে ভাইরাসটি কতটা সময় জীবিত থাকে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু গবেষণা কয়েক সেকেন্ডের কথা বলছে, আবার একটি গবেষণা বলছে সময়টি দুই থেকে তিন ঘণ্টা।
বাতাসে অনুকণায় ভর করে যতটা সময়ই ভাইরাসটি জীবিত থাকুক, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির দুই মিটারের মধ্যে কেউ যদি শ্বাস নেয় তাহলে সেও আক্রান্ত হবে। আর কোনও বাধা না পেলে একটি হাঁচির অনুকণা ৬০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে, যদিও অধিকাংশই টিস্যু পেপারে আটকে যায়।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) এবং মার্কিন গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ভাইরাসটি অতি অতি ক্ষুদ্রকণার ওপর ভর করেও বাতাসে ভেসে থাকতে পারে, তবে তার সম্ভাবনা সীমিত।
তবে এগুলো সবই প্রাথমিক গবেষণার তথ্য এবং অনেক গবেষণার ফলের সঙ্গে মেলেও না। কিন্তু যদি এসব সঠিক হয়, তাহলে এত মানুষের একসঙ্গে এত দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
যখন কোনও ভাইরাস বায়ুবাহিত হয়, তখন তাকে ‘অ্যারোসল’ হিসাবে বর্ণনা করা যায়। অর্থাৎ, ভাইরাস বাতাসে পানির অনুকণায় ভর করে ভেসে থাকে। যা হাঁচি ও কাশির কণার চেয়েও ছোট এবং বড় কণাগুলো মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও অনেকটা সময় ধরে ভেসে থাকে।
সবকিছু অনুকূলে থাকলে এসব ক্ষুদ্র কণা কয়েক ঘণ্টা ধরে বাতাসে ভেসে থাকে। এজন্য তার দরকার কম গতির বাতাস, খোলা জায়গা এবং সঠিক তাপমাত্রা।
বায়ুবাহিত ভাইরাসের কথা এলে চিকিৎসকরা হামের প্রসঙ্গ টানেন। কারণ, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে নিঃসরিত হামের ভাইরাস বাতাসে দুই ঘণ্টা ভাসতে পারে।
গবেষণার ফল বলছে করোনাভাইরাসও একইভাবে কাজ করে। অন্তত ল্যাবরেটরিতে পাওয়া ফল তাই বলে। তবে বাস্তব অবস্থায়, যেমন হাসপাতালে সংক্রমিত রোগি আছে এমন কক্ষে এই ঘটনা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত নয়। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে আরো গবেষণার পক্ষে মত দিয়েছেন।
Comments