ইতালির করোনা ফান্ডে অর্থদান করছেন সবাই

অনেক দিন থেকে ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্বসহ নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে দেশটি যেন কোনভাবেই পেরে উঠছে না।
একতার বাণী নিয়ে করোনা মোকাবিলা করছেন ইতালীয়রা। ২৫ মার্চ ২০২০। ছবি: রয়টার্স

অনেক দিন থেকে ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্বসহ নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে দেশটি যেন কোনভাবেই পেরে উঠছে না।

মূলত বেরলুসকোনি সরকারের সময় থেকে ইতালি ব্যাপক মাত্রায় ঋণের জালে জড়িয়ে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঋণের বোঝা টানতে টানতে দেশটা হাঁপিয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সরকার পতন হয়েছে অন্তত তিনবার। দিনে দিনে বেকারত্ব বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফসল উৎপাদন কমেছে। বারবার শেয়ার বাজারে দরপতন হয়েছে। দেশের বড় বড় ব্যাবসায়ীরা বিনিয়োগ অন্যদেশে সরিয়ে নিয়েছে। দূর্নীতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতালি এমনিতেই এক অস্থির সময় পার করছিল। এর মধ্যে আবির্ভাব ঘটলো মরণভাইরাস করোনার। যা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে।

ইতালির সরকার সার্বিক চেষ্টা করছে করোনা প্রতিরোধের জন্য। এর মধ্যেই সরকার মোটা অঙ্কের থোক বাজেট ঘোষণা করেছে। জনগণকে চাকরিহারা না হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। বাসা ভাড়া, লোনের কিস্তি, বিলসহ প্রতিমাসের খরচ কমাতে সবকিছু স্থগিত করে রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

সরকার বড় অঙ্কের অর্থের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করেছে। এমন একটা মুহূর্তে ইতালির সাধারণ মানুষ, অভিবাসী, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, শিল্পীসহ প্রায় সবাই সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা, খেলোয়াড়রা প্রায় প্রতিযোগিতা করে করোনা ফান্ডে অর্থদান করছে। সাধারণ জনগণ ও অভিবাসীরা সাধ্যমতো করোনা ফান্ডের ব্যাংক হিসাবে অর্থ সহযোগিতা পাঠাচ্ছে।

আফ্রিকার দেশ সেনেগালসহ বেশ কটি অভিবাসী কমিউনিটি চাঁদা তুলে স্থানীয় পৌরসভার করোনা ফান্ডে দান করেছে, যা ইতালির মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইতালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অভিজ্ঞতা, ওষুধ, কিচিৎসক, চিকিৎসা সামগ্রী, প্রযুক্তি, সহানুভূতিসহ সব রকমের সহযোগিতা নিয়ে তারা ইতালিকে সাহস যোগাচ্ছে।

চীন থেকে ইতালির পুলিশের জন্য নতুন প্রযুক্তি আমদানি করা হয়েছে। পুলিশকে বিশেষ হেলমেট সরবরাহ করা হচ্ছে যাতে স্থাপিত কিটের মাধ্যমে রাস্তায় চলাচলরত জনগণের শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হবে।

রাশিয়া উড়োজাহাজ ভার্তি করে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে। অভিজ্ঞ চিকিৎসক দল পাঠিয়েছে। এমনকি, ভারতও ইতালিতে করোনা টেস্টের কিট পাঠিয়েছে। সোমালিয়ার মতো হতদরিদ্র দেশও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে।

জাতিগতভাবে ইতালিয়ানরা বেশ কৃতজ্ঞ। দূর্দিনে যারা তাদের পাশে দাঁড়ায় এ জাতি কোনো দিন তাদের ভুলে না। ইতালির একজন বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, ‘আজ যারা ইতালির পাশে দাঁড়িয়েছে, কাল প্রয়োজন হলে আমরা তাদের পাশে থাকবো উদারভাবে। যোগ্য প্রতিদান ফিরিয়ে দিতে আমরা একটুও কার্পণ্য করবো না।’

ইতালির বাজারে মূল্যছাড়ের সময় হলো জানুয়ারিতে নতুন বর্ষ শুরুর পরে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে। সেই হিসাবে এখন ইতালির কোনো মার্কেটে বড় ধরনের মূল্যছাড় থাকার কথা নয়। কিন্তু করোনা সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আমরা দেখছি, প্রায় সব খাবারের মার্কেটে ব্যাপক অফার দেওয়া হচ্ছে, মূল্যছাড় করা হচ্ছে।

আতঙ্কিত মানুষ বেশি বেশি কেনাকাটা করার ফলে প্রথম কদিন মার্কেটগুলোর খাবারের তাক প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু কেউ এক পয়সা দাম বাড়ায়নি।

হাসপাতালগুলোতে সিট সংকটের কারণে নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করতে হচ্ছে। এর জন্যও বিভিন্ন সংস্থা ও দেশপ্রেমিক মানুষ এগিয়ে আসছেন। আপাতত অব্যবহৃত জায়গাগুলো অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের জন্যে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

মানুষকে বাঁচাতে না পেরে ডাক্তাররা কাঁদছেন। রাজনীতিকরা কাঁদছেন। ধর্মনেতারা কাঁদছেন। জনগণ, অভিবাসী, সিভিল প্রটেকশন, প্রশাসন সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ এক ‘ইলাহি দেশপ্রেম’। অন্যরকম ভালোবাসা। ভিন্নরকম মানবতা। যা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিনোর যুজেপ্পে কোনতে জাতির উদ্দেশ্যে এক আবেগঘন বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা একজন অন্যজন থেকে দুরে থাকবো আগামীতে আরও বেশি কাছাকাছি থাকার জন্য। এখন আমরা থেমে থাকবো আগামীতে দ্বিগুণ গতিতে কাজ করার জন্য। দেশকে, মানুষকে ভালোবাসর জন্য।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

9h ago