রুটি-রুজির চিন্তায়ও এই ক্রিকেটাররা

জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকায় দেশের জনজীবন তো স্থবির হতে শুরু করেছেই, আর্থিক শঙ্কায়ও পড়ে গেছেন এক ঝাঁক ক্রিকেটার, যারা নির্ভর করে থাকেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের উপর। কারণ এক রাউন্ড মাঠে গড়িয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগই যে তাদের রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন।
dhaka premier league
ফাইল ছবি

অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ক্রিকেট। অন্তত আগামী ১৫ এপ্রিলের আগে খেলা মাঠে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান। করোনাভাইরাসের প্রভাব অনুসারে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকায় দেশের জনজীবন তো স্থবির হতে শুরু করেছেই, আর্থিক শঙ্কায়ও পড়ে গেছেন এক ঝাঁক ক্রিকেটার, যারা নির্ভর করে থাকেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের উপর। কারণ এক রাউন্ড মাঠে গড়িয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগই যে তাদের রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন।

বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ১৭ ক্রিকেটার। এ ছাড়া জাতীয় লিগে খেলা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের প্রায় ৮০-৯০ জনও বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। এর বাইরে অনেক ক্রিকেটার আছেন, যারা প্রতি বছর এই ঢাকা লিগ খেলেই জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে একমাত্র আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেলে, সামনের সম্ভাব্য কঠিন সময়ের ইঙ্গিতে চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।

উদ্ভূত উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে গেল বৃহস্পতিবার বিসিবি সভাপতি জানান, ‘মনে হয় না আগামী ১৫ এপ্রিলের আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর সম্ভাবনা আছে। বরং এটা (পিছিয়ে যাওয়ার মেয়াদ) বাড়তেও পারে।’

বোর্ড প্রধানের এমন বক্তব্য ও বাস্তবতা মিলিয়ে উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে আছেন বিসিবির যেকোনো ধরনের চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটাররা। কারণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কেবল লিগ মাঠে গড়াবে। কিন্তু সেটা কবে নাগাদ, তা নিশ্চিত করে বলার কোনো উপায় নেই।

ব্রাদার্স ইউনিয়নের অলরাউন্ডার আলাউদ্দিন বাবু আছেন করোনাভাইরাসের প্রভাব কেটে যাওয়ার আশায়, ‘আমি চোটের কারণে গেল দুই বছর জাতীয় লিগ খেলতে পারিনি। তাই প্রথম শ্রেণির চুক্তিতে নেই। প্রিমিয়ার লিগই ছিল ভরসা। এখন এটা মাঠে না গড়ালে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সমস্যায় পড়তে হবে। তবে আশা করছি করোনার প্রভাব কমে আসবে। প্রিমিয়ার লিগ আবার মাঠে গড়াবে।’

একরকম স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন নিজেকে প্রমাণের সুযোগ হারানোর শঙ্কার পাশাপাশি চিন্তিত আর্থিক বিষয়টি নিয়েও, ‘গেল কয়েক বছর তো ঠিকভাবে দলই পাইনি। পেলেও ধরতে গেলে ফ্রিই খেলতে হয়। এবার পারটেক্সে (স্পোর্টিং ক্লাব) যোগ দিয়েছিলাম। খেলার সুযোগ হতো। কিন্তু এর আগেই করোনাভাইরাসের কারণে লিগ বন্ধ হয়ে গেল। নিজেকে প্রমাণের সুযোগও পেলাম না। তার উপর আর্থিক দিক তো আছেই। আমরা যারা জাতীয় দল থেকে বাইরে চলে গেছি, তাদের জন্য বিসিবি যদি কিছু ব্যবস্থা করতো! প্রথম শ্রেণির চুক্তিতে যদি আমাদের রাখা হতো, তাহলে অন্তত একটা দুশ্চিন্তা কমতো।’

ঠিক লিখনের মতোই ভাবছেন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া ধীমান ঘোষ ও তুষার ইমরান। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিসিবিকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছেন দুজনেই। ধীমান বলেছেন, ‘আমি প্রথম শ্রেণির চুক্তিতে আছি। তবে অনেকেই নেই। দেশের এই অবস্থায় অবশ্যই বিসিবির এগিয়ে আসা উচিত, অন্তত বর্তমান অবস্থা চিন্তা করে হলেও।’

আলাউদ্দিনের ক্লাব সতীর্থ ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তুষারও শঙ্কিত, ‘আমি প্রথম শ্রেণির চুক্তিতে আছি। আমার মতো আরও ৮০-৯০ জন খেলোয়াড় আছে। কিন্তু এর বাইরেও দেখবেন আরও ৬০-৭০ জন খেলোয়াড় আছে, যারা প্রতি বছর এই প্রিমিয়ার খেলেই বেঁচে আছে। তাদের কী অবস্থা হবে ভাবুন?’

প্রথম শ্রেণির খেলোয়াড়দের চুক্তির সংখ্যাটা বাড়ানোর জন্য তাই বিসিবির কাছে দাবি তুলেছেন তুষার, ‘জাতীয় লিগে খেলা প্রথম শ্রেণির খেলোয়াড়দের যে চুক্তি, তা এবার আরও বাড়ানো উচিত, অন্তত দুইশ থেকে তিনশ জন। অবশ্য এখন ক্ষতি যে শুধু খেলোয়াড়দের হচ্ছে তা-ও নয়, বিসিবিরও হচ্ছে। কিন্তু বিসিবি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। দেশের সার্বিক অবস্থা চিন্তা করেই চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়ানো উচিত। তাহলে অন্তত ওইসব ক্রিকেটাররা টিকে থাকতে পারবে।’

সমস্যা আছে আরও। এবার প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়িয়েছে মাত্র এক রাউন্ড। কিন্তু অনেক খেলোয়াড়ই অগ্রিম টাকা নিয়েছিলেন ক্লাবগুলোর কাছ থেকে। লিগ যদি শেষ পর্যন্ত না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই বিসিবিকে আগে থেকে সমাধানের পথ খুঁজে রাখতেও আহ্বান জানিয়েছেন তুষার, ‘আমি এ বছর ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলছি। যদিও কোনো অগ্রিম নেইনি। ক্লাবের উপর বিশ্বাস রেখেই খেলছি। কিন্তু অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা ২০-৩০ কিংবা ৫০-৬০ শতাংশ অগ্রিম নিয়েছেন। কিন্তু খেলা হয়েছে মাত্র এক রাউন্ড। ক্লাবগুলো যদি টাকা দাবি করে, সেক্ষেত্রে খেলোয়াড়রা তা ফেরত দিতে বাধ্য। এরও একটা সমাধান করা দরকার। আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হিসেবে বোর্ডের কাছ থেকে আমরা যারা বেতন পাই, তাদের ছয় মাসের বেতন অগ্রিম দেওয়ারও আন্তরিক অনুরোধ করছি।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago