করোনাভাইরাস: ইদলিবের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা
সিরিয়ার ইদলিবে ৩০ লাখ মানুষের বাস। সেখানে নেই পানি, সাবান, স্যানিটাইজার। আবার একটি তাবু ভাগ করে কয়েকটি পরিবারকে থাকতে হয়। তাই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাও তাদের জন্য অনেক কঠিন।
ফলে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখানের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইদলিবে নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকেন ফাতেমা উম আলী। কিন্তু, করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে যা প্রয়োজন সেগুলো ফাতেমাদের নাগালের বাইরে। সেখানে পানির অভাব, সাবানও ব্যয়বহুল, আর স্যানিটাইজার মানে অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা।
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে তিনটি তাবু ভাগ করে ১৫টি পরিবার থাকে। ফাতেমার পরিবারও তাদের একটি। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়টি তিনি ভাবতেও পারেন না।
ফাতেমা সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সীমিত সুযোগ। তবুও আমরা পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করছি। আপনারা যেসব স্যানিটাইজার ও উপকরণের কথা বলছেন সেগুলো আমরা পাই না।’
সিরিয়ার নয় বছর ধরে চলমান যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে এই অঞ্চলে পালিয়ে এসেছে ফাতেমা উম আলীর পরিবার। কিন্তু, এখানে পানি ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নেই। এমন পরিস্থিতিতে এবার যুদ্ধ করতে হচ্ছে করোনা থেকে নিজেদের বাঁচাতে।
সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে পালাতে পারলেও এই মহামারি থেকে তারা পালাতে পারবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘করোনাভাইরাস এই যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ধীরে ধীরে সুনামির মতো এগিয়ে আসছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখানের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।’
ইদলিবে ৩০ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে চরম ওষুধ ঘাটতির মুখে পড়েছে। এখানে ভাইরাস প্রতিরোধের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এটিকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত ইদলিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (আইএইচডি) সদস্য ডা. মুনথার খলিল বলেছেন, ‘সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। সেখানে কেউ আক্রান্ত কিনা আমরা নিশ্চিত নই। এখানের চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। তাই চিকিৎসার অভাবে অনেক মৃত্যুর আশঙ্কা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু, যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির জন্য এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই কঠিন। এখানে বোমা মারা হয়েছে, রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছে। তারা মৃত্যু দেখে পাথর হয়ে গেছে। তাই আগে থেকেই মৃত্যুর কাছে পরাজিত তারা।’
আইএইচডির তথ্য অনুযায়ী, ইদলিবে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র ১ দশমিক ৪ জন চিকিৎসক আছেন। হাসপাতালগুলোও ইতোমধ্যে মানুষে ভরে আছে। সেখানে মাত্র ১০০ ভেন্টিলেটর আছে। এছাড়া ইদলিব ও এর আশেপাশের প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে ২০০টিরও কম আইসিইউ বেড আছে।
ডা. খলিলের মতে, এখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েল এক লাখেরও বেশি মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দ্য আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড অ্যালার্ট রেসপন্স নেটওয়ার্ক (ইওআরএন) বলছে, বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের হার অনুযায়ী এখানকার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ, ইদলিবের কমপক্ষে ১২ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন।
Comments