করোনাকালের অস্ট্রেলিয়ায় কেমন আছেন বাংলাদেশিরা
দুই কোটি ৫২ হাজার জনসংখ্যার অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩ জন।
সমগ্র অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই করোনাকালে অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের চেয়ে বাংলাদেশিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সব থেকে বেশি।
বহুজাতিক প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে বাস করছেন প্রায় ৭২টি দেশের মানুষ। গ্রিক, চাইনিজ, লেবানিজ, ইন্ডিয়ানসহ অন্যান্যরা অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন শত বছর আগে। এ সমস্ত দেশের প্রবাসীরা অতিক্রম করেছেন কয়েকটি প্রজন্ম। কিন্তু, বাংলাদেশিরা এখানে আগমন করেছেন মাত্র পাঁচ দশক আগে। এখনও এরা আছেন জীবন সংগ্রামের মধ্যে। অধিকাংশ বাংলাদেশির বাড়ি-গাড়ির লোন, সন্তানের শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহ করতেই নাভিশ্বাস ওঠে। বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম এখনো এখানে প্রতিষ্ঠিত নয়। খুব সঙ্গত কারণেই করোনায় অর্থনৈতিক মন্দায় পতিত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। বাংলাদেশিদের বিরাট একটি অংশ এখন চাকুরি হারিয়েছেন। যারা ব্যবসা করতেন তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্র/ছাত্রী। এদের বেশিরভাগই কাজ করতেন রেস্টুরেন্ট, পাব এবং ক্লাবগুলোতে। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ান সরকারের জরুরি ঘোষণায় এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাই এরা সবাই চাকরি হারিয়েছেন। এরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় অনেক বাংলাদেশি বাস করছেন অস্থায়ীভাবে। এদের অধিকাংশই দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে এদেশে আশ্রয় প্রার্থী হিসেবে আছেন। তারাও চাকরি হারিয়েছেন। আর যেহেতু তারা অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা নন তাই করোনাভাইরাসের কারণে চাকরিচ্যূতদের সরকার যে বিশেষ সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সেই সাহায্যের অন্তর্ভুক্ত তারা নন।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সব অস্ট্রেলিয়ানকে আগামী ছয় মাসের বিপজ্জনক অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। এখানের অধিকাংশ বাংলাদেশিই মনে করছেন, ছয় মাস নয় এভাবে সব কিছু লকডাউন থাকলে তাদের অবস্থা দুই মাসের মধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
তবে আশার কথা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বিত্তবান বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা চাকরিচ্যুতদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ছাত্র/ছাত্রীদের দুপুরের ও রাতের খাবার বিনামূল্যে দিচ্ছেন। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কেউ কেউ বাংলাদেশের ডাক্তারদের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে পিপিই পাঠাচ্ছেন।
সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঊদ্যোগ নিয়েছে। যে সমস্ত বাংলাদেশি এখানে ‘রিফিউজি’ হিসেবে বাস করছেন তাদেরকে সাহায্য প্রদান করবে। কারণ এরা সরকার থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছেন না এবং কমিউনিটিতেও অবহেলিত।
আকিদুল ইসলাম: লেখক, সাংবাদিক
Comments