ইতালিতে কি চাইনিজরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন?

ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে ইতালিতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। এর পরপর ভেনেতো রিজিওনের সরকার প্রধান সিনোর লুকা যাইয়া হুট করে এক বক্তৃতা দিয়ে বসেন। তিনি বলেন, চাইনিজরা জীবিত ইঁদুর খায়।
Italy.jpg
একজন বয়স্ক নাগরিকের মুখে যত্ন করে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন ইতালির এক পুলিশ সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে ইতালিতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। এর পরপর ভেনেতো রিজিওনের সরকার প্রধান সিনোর লুকা যাইয়া হুট করে এক বক্তৃতা দিয়ে বসেন। তিনি বলেন, চাইনিজরা জীবিত ইঁদুর খায়।

লুকা যাইয়ার এ বক্তৃতায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। চীনের রাষ্ট্রদূত প্রতিবাদ জানান। সুশীল সমাজ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেন, কোনো দায়িত্বশীল মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। এতে ইতালিতে বসবাসরত চাইনিজ নাগরিকরা বৈষম্যের শিকার হবেন।

সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই লুকাকে ভর্ৎসনা করেন এবং যারা এর পক্ষে কথা বলেছে তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ করেন। তারা বলেন, কোনো সভ্য সমাজের মানুষ সংকটকালে এমন বৈষম্যমূলক কথা বলতে বা সমর্থন করতে পারে না। ইতালি উদার অভিবাসী বান্ধব দেশ। কোনো বৈশ্বিক সংকটের কারণে তা যেন বিনষ্ট না হয়।

প্রতিক্রিয়ার মুখে লুকা যাইয়া তাৎক্ষণিকভাবে তার কটু মন্তব্য তুলে নেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ ঘটনার অল্প কদিনের মাথায় একজন চাইনিজ নাগরিক হামলার শিকার হন। তিনি স্থানীয় এক খাবারের দোকানে গেলে সেখানে থাকা এক যুবক তাকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল করে এবং বোতল ছুড়ে মারে।

এই ঘটনার পর থেকে ইতালির রাস্তাঘাটে আর কোনো চাইনিজ নাগরিককে দেখা যায়নি। তাদের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে ইতালির প্রশাসন এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা বলেছে, ইতালিতে করোনা সংক্রমণের জন্য চাইনিজদের বা বিশেষ কোনো দেশের মানুষদের দায়ী করা, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা চরম মানবতাবিরোধী কাজ হবে। কেউ এমন কাজে লিপ্ত থাকলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও যদি কেউ এসব কাজে লিপ্ত হয়, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর জুসেপ্পে কোনতে বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ এ সময়ের সব থেকে বড় বৈশ্বিক সংকট। এর জন্য এককভাবে কোনো দেশ বা জাতীকে দায়ী করা ঠিক হবে না। তিনি করোনা সংকট মোকাবিলায় চীনকে বন্ধু দেশ বলে অভিহিত করেন।

ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদ রোমানো প্রোদি বলেছেন, যদিও ইতালিতে প্রথম করোনা সনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা চীন থেকে এসেছিলেন, এর অর্থ এটা নয় যে চীনকে বা চীনা নাগরিককে দায়ী করতে হবে। এদের যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি এটা ইতালির রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এর দায় অন্য কারো ওপর চাপানো সঠিক হবে না।

এ বিষয়ে আমার কথা হয় এনটিভির রোম সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে। তিনি জানান, রোমের কোথাও বৈষম্যমূলক আচরণের খবর তার কাছে নেই। হোম কোয়ারেন্টিনের কারণে সবাই ঘরের মধ্যে রয়েছে। সামান্য কিছু মানুষ বিশেষ প্রয়োজনে বের হলেও তাদের মধ্যে চাইনিজদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, রোমের বাংলাদেশি কমিউনিটি ভালো আছে, তুলনামূলক নিরাপদ আছে। বাংলাদেশি খাবারের দোকানগুলো খোলা থাকলেও বেচাকেনা খুব কম।

যমুনা টিভির সাংবাদিক জাকির হোসেন সুমন বলেন, তিন দিন আগে পর্যন্ত তিনি কাজ করেছেন। নিয়মিত বাসে করে কর্মস্থলে গিয়েছেন। কোথাও বৈষম্যমূলক চিত্র চোখে পড়েনি। তবে রাস্তাঘাট ফাঁকা। যানবাহন ফাঁকা। বিশেষ দরকারে যারা বাইরে বের হচ্ছে, সবার চোখেমুখে আতঙ্ক লক্ষ করা যাচ্ছে।

তিনি জানান, ভেনিসের বাংলাদেশি কমিউনিটির কেউ কেউ প্রথম দিকে হোম কোয়ারেন্টিন অমান্য করে রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করলেও, এখন সবাই সাবধান হয়ে গেছে। শহরে প্রশাসন ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। গ্রহণযোগ্য কারণ দেখাতে না পারলে মোটা অংকের অর্থদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষ হাজতেও যেতে হচ্ছে।

সুমন বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে, অসম্মান করা হচ্ছে, মারপিট করা হচ্ছে, এখানের চিত্র ঠিক বিপরীত। কোনো নাগরিক আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কিন্তু কাউকে অসম্মান বা প্রহর করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারে না।

ভিসেনসা শহর থেকে দৈনিক আমাদের সময়ের সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন স্বপন বলেন, ওই শহরে প্রায় ৭/৮ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী বসবাস করেন। তারা প্রায় সবাই সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ফেক নিউজের কারণে মাঝে মধ্যে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।

তিনি জানান, ভিসেনসার চাইনিজ কমিউনিটিকে বা অন্য কোনো অভিবাসী কমিউনিটিকে করোনার জন্য দায়ী করে কাউকে কথা বলতে শোনা যায়নি। বরং সবার চোখে-মুখে সহানুভূতি চকচক করতে দেখা গেছে। সবাই এক সঙ্গে সংকট মোকাবিলার কথা বলছে বারবার।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago