‘যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ লাখে পৌঁছতে পারে’

মার্কিন সরকারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা দুই লাখে পৌঁছতে পারে। নিউইয়র্ক, নিউ অরলিন্স ও অন্যান্য বড় শহরগুলোতে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাও বিপর্যের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
New York corona
নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউ। ২৯ মার্চ ২০২০। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন সরকারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা দুই লাখে পৌঁছতে পারে। নিউইয়র্ক, নিউ অরলিন্স ও অন্যান্য বড় শহরগুলোতে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাও বিপর্যের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

গতকাল সিএনএনের বরাত দিয়ে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলজাজিরা।

জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যান্টনি ফাউসি সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এ আশঙ্কার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘করোনা মহামারি যুক্তরাষ্ট্রে এক থেকে দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের করোনভাইরাস টাস্কফোর্সের এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আরও বলেছেন, ‘আমি এটার সঙ্গে থাকতে চাই না… এটি এমন একটি চলমান বিষয় যা মানুষকে খুব সহজেই ভুল বোঝাবে ও বিভ্রান্ত করবে।’

ঝুঁকিতে প্রবীণরা

মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১০ সালের পর ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১২ হাজার থেকে ৬১ হাজার মানুষ মারা গেছেন। সিডিসির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ১৯১৮-১৯ সালের ফ্লু মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

কিন্তু, কোভিড-১৯ রোগের পরীক্ষার নিয়ে ফাউসি কিছুটা আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কয়েক সপ্তাহ আগে কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় আছি। যদি এ দুটির তুলনা করি, তাহলে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি পরীক্ষা করেছি।’

এতো বেশি সংক্রমণের পরেও ভ্রমণ ও কাজের সীমাবদ্ধতা কিভাবে সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে ফাউসি বলেছেন, ‘এটি কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার। এটা আগামীকাল বা আগামী সপ্তাহেও সম্ভব হবে না। বরং এখনকার চেয়ে আরও বাড়তে পারে।’

ভেন্টিলেটরের ঘাটতি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে এবং কয়েকটি বড় শহরে ভেন্টিলেটরের সংকট দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনের তুলনায় এই সংকট দ্বিগুণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ কোভিড-২৯ এ আক্রান্ত। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।

গত রবিবার নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটিতে আরও কয়েক শ ভেন্টিলেটর দরকার হবে। এছাড়া, আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে আরও মাস্ক, গাউন ও মেডিকেল সাপ্লাই প্রয়োজন হবে।

নিউ অরলিন্সের গভর্নর জানিয়েছেন, আগামী ৪ এপ্রিলের দিকে শহরটির ভেন্টিলেটর শেষ হয়ে যাবে। জাতীয় মজুদ থেকে তারা কোনও ভেন্টিলেটর পাবেন কিনা লুসিয়ানার কর্মকর্তারা তা এখনো জানেন না।

গভর্নর জন বেল এডওয়ার্ডস সিবিএসের ফেস দ্য নেশনে বলেছেন, লুসিয়ানা কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১২ হাজার ভেন্টিলেটর সংগ্রহের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে তারা ১৯২টি ভেন্টিলেটর হাতে পেয়েছেন।

এডওয়ার্ডস আরও বলেছেন, ‘জাতীয় মজুদ থেকে এখনও আমাদের ভেন্টিলেটরের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে, আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, কিছু হলেও পাব।’

চিকিৎসকরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, যারা নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের চিকিৎসায় এগুলো জরুরি প্রয়োজন।

‘আমরা আতঙ্কিত’

ব্রুনেক্সের ব্রুকডেল ও সেন্ট বার্নাবাস হাসপাতালের মেডিসিন চিকিত্সক আরাবিয়া মোললেট হাসপাতালে যাওয়ার পথে ক্যাফেতে বসে প্রার্থনা করেন। তিনি হাসপাতালকে ‘মেডিকেল যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শিফটের জন্য নির্ধারিত ১২ ঘণ্টার চেয়ে অধিক সময় দিতে হয় তাকে। সেখানে কখনো কখনো নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না তিনি।

মোললেট বলেন, ‘আমরা নিজেদের মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করি। তবে আমরা আতঙ্কিত। সবার জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই করছি। এমনকি, নিজেদের জীবন বাঁচাতেও লড়াই করতে হচ্ছে আমাদের।’

গত শনিবার, ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনস (সিডিসি) নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট ও নিউ জার্সির বাসিন্দাদের ১৪ দিনের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ না করার নির্দেশ দিয়েছে।

গত জানুয়ারির শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ভাইরাস শনাক্ত হয়। কিন্তু, এর সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago