কূল-কিনারাহীন করোনাভাইরাস গবেষণা

ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। এরপর হঠাৎই এটি বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভাইরাসটি কোনো বন্যপ্রাণী থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে।

বিশ্বের কয়েকজন শীর্ষ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বলছেন—হঠাৎ করেই নয়, কয়েক বছর আগে থেকেই ভাইরাসটি নীরবে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে আসছিল। এমনকি কয়েক দশক আগে থেকেও এটির সংক্রমণ শুরু হয়ে থাকতে পারে।

ভাইরাসটির রহস্য উদঘাটন করতে বিগত সময়ে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত তথ্য নিয়ে গবেষণা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক। তাদের গবেষণা বলছে, চীনের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের বহু আগেই ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানবদেহে এসেছিল।

যদিও অন্য সম্ভাবনা থাকতে পারে, তবে বিজ্ঞানীদের মতে, করোনাভাইরাস একটি অনন্য মিউটেশন (জিনের কাঠামোগত পরিবর্তন) ঘটেছে, যা সন্দেহভাজন প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায়নি।

আজ সোমবার চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন, স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রিউ র‌্যামবাউট, নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ান লিপকিন, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডওয়ার্ড হোমস ও নিউ অরলিন্সের তুলানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট গ্যারির করা এই গবেষণাটি গত ১৭ মার্চ বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের পরিচালক ড. ফ্রান্সিস কলিন্স বলেন, ‘করোনাভাইরাসটি মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হওয়ার আগেই প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রবেশ করেছিল— গবেষণায় এমন একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে।’

‘পরবর্তীকালে বছরের পর বছর বা সম্ভবত কয়েক দশক ধরে ধীরে ধীরে ক্রমবিকাশের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার এবং প্রাণঘাতী রোগে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে,’ বলেন তিনি।

গত ডিসেম্বরে উহানের চিকিৎসকরা খেয়াল করেন, সেখানকার অনেকেই এক ধরনের রহস্যজনক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফ্লু ও অন্যান্য রোগজীবাণুগুলোর জন্য পরীক্ষা করলেও ধরা যাচ্ছিল না। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, বাদুড় থেকে ভাইরাসটি এসেছে।

সার্স ও মার্স ভাইরাস মানবদেহে রোগ তৈরি করতে পারলেও নতুন এ ভাইরাসটি প্রথমে মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারেনি। সে সক্ষমতা ভাইরাসটির ছিল না। কিন্তু, পরবর্তীতে বনরুইয়ের (প্যাংগোলিন) মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। যা মানবদেহে সংক্রমিত হয়ে রোগ তৈরি করতে সক্ষম।

বেইজিংয়ের প্রাদুর্ভাব দমন নীতি বিষয়ক পরামর্শক ঝং নানশান বলেন, ‘অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন নয়।’

‘উহান থেকে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার মানে এই নয় যে উহানই এটির উৎপত্তিস্থল,’ বলেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, গত বছর বিশ্বের অনেক দেশেই রহস্যজনক নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। সেসব দেশে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে আরও পরীক্ষা চালালে করোনাভাইরাস সম্পর্কে আরও তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যেতে পারে।

যদিও করোনাভাইারস নিয়ে এখনো গবেষকরা কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি, তবে, ওই চিকিৎসকের মতে, অবশ্যই একদিন সব কিছু পরিষ্কার হয়ে আসবে।

জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি এবং মারা গেছেন ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

39m ago