ত্রাণের আশায় মোড়ে মোড়ে অসহায় মানুষের জটলা

ভোরের আলো ফুটতেই ছাপড়া ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন ৬৫ বছরের প্রৌঢ়া আফিয়া বেগম। দুবেলার খাবার জোটানোর দুশ্চিন্তা সবসময় তাড়া করে তাকে। ভিক্ষাবৃত্তিতে দিন চলে যায়। কিন্তু, করোনার কারণে তার দুশ্চিন্তার বলিরেখা আরও গভীর হয়েছে।
ত্রাণের জন্য মানুষের জটলা। ছবি: স্টার

ভোরের আলো ফুটতেই ছাপড়া ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন ৬৫ বছরের প্রৌঢ়া আফিয়া বেগম। দুবেলার খাবার জোটানোর দুশ্চিন্তা সবসময় তাড়া করে তাকে। ভিক্ষাবৃত্তিতে দিন চলে যায়। কিন্তু, করোনার কারণে তার দুশ্চিন্তার বলিরেখা আরও গভীর হয়েছে।

প্রতিবেশীদের দয়ায় খাবার জুটলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে কখনো একবেলা বা কখনো অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

গতকাল দুপুরে জিইসির মোড়ে কথা হয় আফিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার ঘর লালখান বাজারের টাংকির পাহাড় এলাকায়। যেখানে নগরীর অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ গাদাগাদি করে বসবাস করেন।

‘বাবা কেমনে দিন চলব! গায়ে বল নাই। রিলিফ দেয় লোকে দেহি। ঠেলাঠেলি কইরা কেমনে নিব,’ বলেন তিনি।

দুই সপ্তাহ আগেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষা করে দুই থেকে তিনশ টাকা মিলত। যা দিয়ে পেট চলে যেত। কিন্তু, করোনার কারণে সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে আক্ষেপ করেন তিনি।

আফিয়া বেগমের মত ‘দিনে আনে দিয়ে খায়’ এমন অনেকের জটলা দেখা গেছে নগরীর ওয়াসা, জিইসি, দুই নাম্বার গেইট ও কাজীর দেউড়ি এলাকায়। কোথাও কেউ ত্রাণ দিচ্ছে এমন খবর পেলে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন তারা।

একই এলাকার আনোয়ারা বেগম (৫৫) অবশ্য ত্রাণ পেয়েছেন পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর। গত দুদিনে দুবার ত্রাণের প্যাকেট পেয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তিনি।

তবে অধিকাংশের মুখেই ত্রাণ না পাওয়ার কথাই শোনা গেছে। অনেকে অভিযোগ করেন, ত্রাণ দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে কিছু ছবি তুলে বাকিদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জিইসির মোড়ে ত্রাণের জন্য এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছিলেন বাংলাবাজার এলাকার জরিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘এখানে ত্রাণ দিবে শুনে কষ্ট করে হেঁটে আসলাম। পরে শুনেছি যিনি ত্রাণ দিয়েছেন তিনি কয়েকজনকে দিয়ে ছবি তুলে বাকিদের ফিরে যেতে বলেছেন। তাই ফিরে যাচ্ছি।’

জরিনা বেগম অবশ্য ওই ত্রাণদাতার নাম জানাতে পারেননি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন জানান, তারা নগরীতে প্রায় ১০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। বিতরণের জন্য আরও ত্রাণ মজুদ আছে।

না পাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানান, এই সংকটে মানুষের কথা বিশ্বাস করা কঠিন। আমরা স্থানীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় করে সবাই যাতে ত্রাণ পেতে পারে সে ব্যবস্থা করছি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বস্তির উন্নয়নে কাজ করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা সনজিত কুমার দাশ। তিনি জানান, নগরীতে প্রায় দুইশর বেশি বস্তি আছে। যেখানে প্রায় ১০ লাখের বেশি পরিবার আছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, নগরীর মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বস্তিবাসী। সে হিসাবে নগরীতে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago