দেশে আরও ৫ করোনা রোগী শনাক্ত

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও পাঁচ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে, নতুন কেউ মারা যাননি। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয় জন। এ ছাড়া, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬ জন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ফাইল ছবি

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও পাঁচ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে, নতুন কেউ মারা যাননি। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয় জন। এ ছাড়া, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬ জন।

আজ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ‘আমরা পজিটিভ নতুন পাঁচ জন পেয়েছি। মোট পজিটিভ হয়েছেন ৬১ জন এবং কেউ মারা যায়নি। ছয় জন এ পর্যন্ত মারা গেছেন এবং ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।’

‘আপনারা বাসায় থাকার চেষ্টা করবেন এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন। অযথাই ঘোরাফেরা করবেন না। যখন বাজারে যাবেন, তখনও ভালো দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করবেন। কোথাও জটলা পাকাবেন না। কারণ জটলা পাকালেই সংক্রমণ বেড়ে যায়। যখন বাইরে যাবেন, মাস্ক পরে বাইরে যাবেন। আমাদের কাছে যথেষ্ট পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) রয়েছে। আমরা সকল হাসপাতালে পিপিই দিয়েছি এবং সবসময়ই পিপিই আমরা পেয়ে যাচ্ছি’, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি বড় বিষয় হলো পরীক্ষা করা। এখন আমাদের প্রায় ১৪-১৫টি জায়গায় পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা করাটা খুবই জরুরি। আমরা আশা করি সকলে পরীক্ষা করার জন্য আসবেন। পরীক্ষা করলে আপনি নিজেও নিরাপদে থাকবেন, জানতে পারবেন আপনার অবস্থাটা। সেই সাথে সাথে আপনার পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। পরীক্ষা করাতে কোনো দোষ নেই। এটাতে সামাজিক কোনো বাধা নেই। কাজেই আপনারা এই জিনিসটি করবেন। পরীক্ষার মাধ্যমেই আমরা করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করে আস্তে আস্তে এটাকে নির্মূল করতে পারবো।’

‘যারা পরীক্ষা করায়  জড়িত আছেন, সর্বস্তরের ব্যক্তিরা, তাদের আহ্বান করবো, পরীক্ষাটি বেশি বেশি করে করেন। আমাদের কিটসের আপাতত কোনো সংকট নাই। কাজেই পরীক্ষা আপনারা চালিয়ে যাবেন। আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারি, আমাদের কতগুলো ব্যক্তি সামাজিকভাবে সংক্রামিত হয়েছে। এটা খুব জরুরি,’ বলেন তিনি। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নার্স ও ডাক্তার ভাইদের বলি, আপনারা অনেক কাজ করছেন। আপনারাই সৈনিক, আপনারাই এই সংক্রামকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। কিন্তু, আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল সেখানে কাজ কম হচ্ছে। ক্লিনিক ও চেম্বারগুলো অনেকাংশে বন্ধ আছে। আমরা সামাজিক মাধ্যমে জানতে পারছি। আমরা নিজেরাও দেখতে পাচ্ছি। কাজেই এই সময়ে আপনাদের পিছ পা হওয়াটা যুক্তিসংগত নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষকে সেবা দেন। এটাই সময়। আমরা কিন্তু এটা লক্ষ্য করছি। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে অবশ্যই যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা কিন্তু সে ব্যবস্থা নিতে পিছ পা হবো না। আমাদের প্রত্যেকটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে।  বড় বড় বেশ কয়েকটি হাসপাতাল করোনাভাইরাসের জন্যই শুধু ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনো রোগী যাদের হাঁচি-কাশি আসে, ওই ধরনের রোগীরে বেশি ওই সব হাসপাতালে যাবেন। সেখানে চিকিৎসা পাবেন। ওইসব হাসপাতালে সব ব্যবস্থা আমরা করেছি। সেখানে অনেক ভেন্টিলেটর লাগানো আছে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আছে।’

ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা.আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিয়েছিল যাতে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যাদের পরীক্ষা প্রয়োজন, তাদের যেন দ্রুততম সময়ে আমরা পরীক্ষা করতে পারি। সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানেই আমরা আমাদের ল্যাবরেটরি সম্প্রসারণ করছি এবং এই সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ঢাকার মধ্যে নয়টি পিসিআর ল্যাবরেটরি, তারা পরীক্ষার জন্য সম্পন্ন প্রস্তুত এবং পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। ঢাকার বাইরে আরও পাঁচটি ল্যাবেরেটরি ইতোমধ্যে পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। আমরা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেকটি বিভাগে পিসিআর মেশিন বসানো এবং সেগুলো দিয়ে পরীক্ষার কাজ শুরু করবো। ক্রমান্বয়ে আমরা মনে করি, এপ্রিলের মধ্যে অথবা তারও আগেই অন্তত ২৮টি প্রতিষ্ঠানে পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। মানে সর্বমোট ২৮টি প্রতিষ্ঠানে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে এবং সেগুলোতে পরীক্ষার কাজ শুরু করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত আপনাদের যে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে চাই, সেটা আমরা চেষ্টা করছি প্রথম দিন সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টার মধ্যে (পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে)। কাজেই আমরা বাংলাদেশের সব জেলা থেকে তথ্য এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারি নাই। এখন পর্যন্ত ২০-২২টি জেলার তথ্য আমাদের হাতে নাই। আমরা যে জেলাগুলোর তথ্য পেয়েছি, ৫১৩টি নমুনা সংগ্রহের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। ৫১৩টি নমুনার মধ্যে ১২৬টি আইইসিডিআর করেছে। বাকি জেলাগুলোতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, উপজেলা-জেলা থেকে অথবা অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ৩৮৭টি নমুনা সগ্রহের তথ্য আমরা পেয়েছি। সকাল ৮টার পর আরও কিছু ফোন আমাদের কাছে এসেছে। এগুলো হালনাগাদ হলে এ সংখ্যাটা আরও বেড়ে যাবে।’

‘আপনারা জানেন এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মানে যাদের মধ্যে ভাইরাস পাওয়া গেছে, তাদের সংখ্যা ৬১। গত ২৪ ঘণ্টায় এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে পাঁচটি। আইডিসিআরের বাাইরে যে ল্যাবরেটরিগুলো সেগুলো থেকে আমরা তিনটি পজিটিভ পেয়েছি। সেগুলোকে পজিটিভ মনে করে যে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, তাদের আইসোলেশন, তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং, এ কাজগুলো আমরা শুরু করেছি। কিন্তু, যেহেতু নতুন ল্যাবরেটরি, সেগুলো হয়তো আমরা আরও একটু যাচাই-বাছাই করবো,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের পর্যবেক্ষণে অথবা চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৯ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে আছেন ২২ জন এবং নিজেদের বাড়িতে পূর্ণ পর্যবেক্ষণের মধ্যে আছেন সাত জন। আমরা এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ২৮ হজার ৬০টি পিপিই সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫০টি পিপিই দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানে আমরা বিতরণ করেছি। আমাদের কাছে এই মুহূর্তে মজুদ আছে ৬৫ হাজার ৪১০টি পিপিই। আমরা আগের মতোই যেখানে যখন পিপিই প্রয়োজন বিতরণ এবং পিপিই সংগ্রহ ব্যবস্থা একিভাবে অব্যাহত রেখেছি।’

‘আপনাদের ইতোমধ্যে বলেছি, ঢাকায় নয়টি প্রতিষ্ঠানে এবং ঢাকার বাইরে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে এখন পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে সেখানে পিসিআর কিট সরবরাহ করেনি। এ মুহূর্তে আমাদের হাতে ৭১ হাজার কিট মজুদ রয়েছে। নতুন আরও পিসিআর কিট আসছে। আমরা মনে করছি, অব্যাহতভাবে পিসিআর পরীক্ষা সংখ্যা বাড়াবো। অতিরিক্ত পিসিআর পরীক্ষার জন্য যে কিট প্রয়োজন হবে, সেগুলো সরবরাহে কোনো অসুবিধা হবে না বলে আমরা নিশ্চিত রয়েছি’, যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

Now