করোনায় মুছে গেছে মৃৎ শিল্পীদের হাসি

Lalmonirhat_Potter
করোনার কারণে বসছে না চৈত্র-বৈশাখ মাসের মেলা। মাটির জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৃৎ শিল্পীরা। ছবি: স্টার

চৈত্র ও বৈশাখ মাসে গ্রামে-গঞ্জে বসে জমজমাট মেলা। চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে হয় সবচেয়ে বড় আয়োজন। এ সময় জমে ওঠে মৃৎ শিল্পীদের ব্যবসা। মাটির তৈরি খেলনা ও তৈজসপত্র বিক্রি বেড়ে যায়। মূলত এই দুই মাসে যা আয় হয়, তা দিয়েই বছরের বাকি সময় চলেন কুমারপাড়ার মৃৎ শিল্পীরা।

এবারও মেলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের অর্ধশত কুমারপাড়ার দুই হাজারের বেশি মৃৎ শিল্পী। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামের মৃৎ শিল্পী ধীরেন চন্দ্র পাল (৫৩) বলেন, ‘বছরে প্রায় ১০ মাস কোনো ব্যবসা হয় না। আমরা চৈত্র ও বৈশাখ মাসের অপেক্ষা করি। এই দুই মাসে গ্রামে অনেক মেলা বসে। এসব মেলায় বিক্রি হয় মাটির তৈরি জিনিসপত্র, খেলনা।’

‘আমরা তিন-চার মাস আগে মাটির জিনিসপত্র ও খেলনা তৈরি করে মেলার প্রস্তুতি নিই। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর কোথাও মেলা বসছে না। মাটির জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা’— বলেন ধীরেন চন্দ্র পাল।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ি পালপাড়ার রঞ্জিত চন্দ্র পাল (৪৮) বলেন, ‘প্রতিবছর চৈত্র ও বৈশাখ মাসে ২৩ থেকে ২৫টি গ্রাম্য মেলায় অংশ নিই আমরা। এতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ব্যবসা হয়। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকার বেশি লাভ থাকে। সেই টাকায় আমরা সারা বছরের সংসারের খরচ চালাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুঁজি লাগিয়ে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে ঘরে ফেলে রেখেছি। কোথাও কোনো মেলা নেই। এই ক্ষতির ঘানি আমাদের অনেক বছর টানতে হবে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম কুমারটারীর সুরেশ চন্দ্র পাল (৭৫) বলেন, ‘লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ৫০টির বেশি পালপাড়া আছে। আর এসব পাড়ায় ১০ হাজারের বেশি পরিবার বাস করে। অধিকাংশ পরিবারই পৈতৃক এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে। এখন দুই হাজারের কিছু বেশি মৃৎ শিল্পী পুরনো পেশা ধরে রেখেছেন।’

‘চৈত্র ও বৈশাখ মাসের আয়ের ওপর অনেকের বাড়ি-ঘর মেরামত, মেয়ের বিয়ে দেওয়াসহ নানা রকম কাজ নির্ভর করে। অথচ এ বছর আমাদের পুঁজি হারাতে হচ্ছে’, বলেন তিনি।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কুমারপাড়ার মৃৎ শিল্পী শোভা রানী পাল (৫২) এ বছর প্রায় এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। তাতে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় হওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘মাটির জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে না। কারণ গ্রামে কোনো মেলা নেই। করোনার কারণে আমরা আরও বেশি দরিদ্র হয়ে গেলাম।’

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

12h ago