ঢাকা মেডিকেলের নার্সের করোনা অভিজ্ঞতা: ‘এই যন্ত্রণার কথা বলে বোঝানো সম্ভব না’

‘একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য কি ভীষণ যন্ত্রণা সইতে হয় এটা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারবে না।.... এই কষ্টের কথা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমার মনে হচ্ছে, আমি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছি।’

‘একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য কি ভীষণ যন্ত্রণা সইতে হয় এটা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারবে না।.... এই কষ্টের কথা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমার মনে হচ্ছে, আমি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছি।’

এভাবেই করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। করোনা শনাক্তের পর সেরে উঠতে তাকে এক কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘এই যন্ত্রণার কথা যদি সবাই জানতে পারত তাহলে কেউই এই মুহূর্তে বাসা থেকে বের হতে চাইত না। সবাই চাইত তার পরিবার যেন এই ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকে।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মাথায় রেখেই নিয়মিত হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিচ্ছিলেন ৩২ বছরের এই নার্স। গত ২১ মার্চ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর ঠিকঠাক কথা বলতে পারছিলেন না। একসময় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সারারাত তিনি যন্ত্রণায় কাতরান।

এর পরের দুইদিন তিনি স্বামী ও দুই সন্তানের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। তার দুই সন্তানের একজনের বয়স ছয়, অন্যজনের বয়স মাত্র দুই বছর।

শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে আইইডিসিআর থেকে নমুনা সংগ্রহের পর তার দেহে করোনা শনাক্ত হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেওয়ার পর গত ৩১ মার্চ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।

হাসপাতালে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একেকটা দিন আমার কাছে এক বছরের মতো দীর্ঘ মনে হচ্ছিল। আমার মেয়েরা আমাকে ফোন করত। কখন আমি বাড়ি ফিরব জানতে চাইত। পরিবার থেকে এভাবে দূরে থাকাটা ভীষণ যন্ত্রণার। মাঝে মাঝে আমি কাঁদতাম। ভাবতাম, আবার কখন মেয়েদের জড়িয়ে ধরতে পারব, একটু আদর করতে পারব!’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বয়স কম। শ্বাসকষ্টের কোনো রোগও নেই। তবুও আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। একবার ভেবে দেখুন, যাদের বয়স বেশি, শ্বাসকষ্ট আছে তাদেরকে কী পরিমাণ যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।’

শারীরিকভাবে এখনও কিছুটা দুর্বলতা অনুভব করায় তিনি এখন বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমি শিগগিরই হাসপাতালে কাজে ফিরে যাব। রোগীদের, বিশেষত শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের সেবা করব। এখন আমি তাদের কষ্ট বুঝতে পারছি।’

এই সংকটের সময়ে পাশে থাকার জন্য পরিবারের সদস্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনসহ সকল সহকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্স চালক প্রদীপের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩০ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭০, মারা গেছেন ৮ জন।

Comments

The Daily Star  | English

Celebrity politicians: A diverse history

Political parties who have committed to participating in the upcoming 12th parliamentary election are preparing in full swing. The Awami League and Jatiya Party have announced their list of nominees, and interestingly, it includes a handful of celebrities

10m ago