প্রবাসের চিঠি

বাংলাদেশে আটকে পড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ানরা ফিরতে পারছেন না

করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার পর সারা পৃথিবী দুর্গম এক গিরিপথে পরিণত হয়েছে। যার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধুই অন্ধকার। এক একটি দেশ পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন এক একটি নির্জন দ্বীপে। অধিকাংশ দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজ অবতরণের উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাই বিভিন্ন দেশের ভ্রমণকারীরা আটকে পড়েছেন বিভিন্ন দেশে।
সিডনি হারবার ব্রিজ। ৬ এপ্রিল ২০২০। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার পর সারা পৃথিবী দুর্গম এক গিরিপথে পরিণত হয়েছে। যার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধুই অন্ধকার। এক একটি দেশ পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন এক একটি নির্জন দ্বীপে। অধিকাংশ দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজ অবতরণের উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাই বিভিন্ন দেশের ভ্রমণকারীরা আটকে পড়েছেন বিভিন্ন দেশে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ভ্রমণকারী অস্ট্রেলিয়ানদের দ্রুত ফিরে আসার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু, উড়োজাহাজের স্বল্পতা, অসমাপ্ত অতি প্রয়োজনীয় কাজ ও সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরতি টিকেট না পাওয়ার কারণে ভ্রমণকারী অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের অনেকেই ফিরে আসতে পারেননি। মধ্য মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ভ্রমণকারীর মধ্যে মাত্র দুই লাখ ফিরতে পেরেছেন। বাকিরা আটকে পড়ে আছেন বিভিন্ন দেশে।

‘ডিপার্টমেন্ট অব ফরেইন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড অস্ট্রেলিয়া’ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বিদেশে আটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ান ও তাদের পরিবার থেকে প্রায় ৩০ হাজার টেলিফোন কল এসেছে তাদের কাছে।

যতোদূর জানা গেছে, এদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশ থেকে ফেরার চেষ্টা করছেন।

তাদের অনেকেই আছেন হার্টের রোগী। অনেকে আছেন অন্যান্য রোগে গুরুতর অসুস্থ। এদেরকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশে আটকে আছেন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার অধিবাসী কবি আইভি রহমান। এই প্রতিবেদককে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘আমার স্বামী বহুদিন ধরে হার্টের রোগী। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমি নিজেও ব্লাডপ্রেসারের রোগী। আমাদের দুজনকেই নিয়ম করে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। আমরা প্রায় ২৫ বছর অস্ট্রেলিয়ায় আছি। ওখানের ওষুধ ব্যবহার করে অভ্যস্ত। বাংলাদেশের কোনো ওষুধই কাজে লাগছে না।

অস্ট্রেলিয়া প্রথম থেকেই বিভিন্ন দেশে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অস্ট্রেলিয়া চীনে বিশেষ ফ্লাইট পাঠিয়ে তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সম্প্রতি পেরু থেকে বিশেষ ফ্লাইটে ১০০ অস্ট্রেলিয়ানকে ফেরত এনেছে সরকার। এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী মার্সি পাইন। এছাড়াও, বারবার অনুরোধ করে বিশেষ ব্যবস্থায় উরুগুয়ে থেকেও অস্ট্রেলিয়া তাদের নাগরিকদেরকে ফিরিয়ে এনেছে। বাংলাদেশে যারা আটকে আছেন তাদের দাবি, অন্যান্য দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ান সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনলেও আমাদের ফিরিয়ে নেওবার কোনো উদ্যোগই তারা গ্রহণ করছেন না। আমরাও তো অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।

এদের অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ এখন আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। আগে এখানে প্রবাসীদের যে সম্মান করা হতো এখন তা করা হচ্ছে না। বরং প্রবাসী শুনলেই তাকে ঘরবন্দি করা হচ্ছে। বাড়িতে লাল পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, অনেক দোকানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখা হয়েছে— ‘প্রবাসীদের প্রবেশ নিষেধ’। এখানে করোনাক্রান্ত হলেও চিকিৎসার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে তারা অস্ট্রেলিয়াকেই তাদের জন্য নিরাপদ মনে করছেন।

সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে, বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ানদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় কার্যকর অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে মাল্টি-কালচারাল সোসাইটি অব ক্যাম্বেলটাউন। সংগঠনের সভাপতি এনাম হক ও সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশে  আটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ানদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন, নাগরিকত্ব, অভিবাসী সেবা ও বহুসংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিভাগ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে আটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ানদের তালিকা তৈরি শুরু হয়। গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৭০৪ জন তাদের নাম, পরিচয় ও পাসপোর্ট নম্বরসহ যোগাযোগ করেন।

যাচাই-বাছাই করার পর আটকে পড়াদের প্রাথমিক তালিকা অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করা শুরু করেছে এবং বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। এ ব্যাপারে মাল্টিকালচারাল সোসাইটির সভাপতি এনাম হক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি কয়েক দশক ধরে অস্ট্রেলিয়াতে বাস করলেও এখনও আমি বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে আছি। সেই আবেগ থেকেই আমি বাংলাদেশিদের জন্য আমার সাধ্যমত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

আকিদুল ইসলাম, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

13h ago