জার্মানিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত এক বাংলাদেশির অভিজ্ঞতা

​বাংলাদেশের ইমরান হোসেন জার্মানির বার্লিনে পেডারবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তরের ছাত্র। গত মার্চের শুরুর দিকের কথা। জার্মানিতে তখনও জেঁকে বসেনি করোনাভাইরাস। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি কোম্পানিতে লজিস্টিকস বিভাগে শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করেন।
জার্মানির ড্রেসডেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধের বার্তা। ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশের ইমরান হোসেন জার্মানির বার্লিনে পেডারবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তরের ছাত্র। গত মার্চের শুরুর দিকের কথা। জার্মানিতে তখনও জেঁকে বসেনি করোনাভাইরাস। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি কোম্পানিতে লজিস্টিকস বিভাগে শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করেন। এই কাজের প্রয়োজনে ৫ মার্চ ডর্টমুন্ড যেতে হয়। সেখান থেকে ফিরে শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেন। জানতে পারেন ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে করোনা। দুই সপ্তাহের বেশি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভোগার পর করোনা হার মেনেছে তার কাছে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানিয়েছেন কষ্টকর সেই লড়াইয়ের কথা।

ইমরান জানান, ডর্টমুন্ড থেকে ফিরে আসার পর থেকে অল্প কাজেই দুর্বল লাগা শুরু হয়। মাঝে মাঝে মনে হতো জ্বর আসবে। এর মধ্যেই ১৫ তারিখ থেকে ইউনিভার্সিটির সঙ্গে চাকরি থেকেও জানানো হলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব বন্ধ। তখন থেকেই আমি ঘরবন্দি। তার ভেতর বাজার আর ওষুধের প্রয়োজনে দুবার বের হয়েছি।

১৮ তারিখ জ্বরের মাত্রা বেড়ে যায়। শুকনো কাশির সঙ্গে শরীরে ব্যথা শুরু হয়। পরদিনও এর হেরফের হয়নি। করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ২০ মার্চ জরুরি সাহায্যের নম্বরে ফোন দেই। সেই রাত থেকেই শ্বাস নিতে সমস্যা শুরু হয় আর খাবারের রুচি চলে যায়। কোনো খাবারের স্বাদ পাচ্ছিলাম না। এমনকি লবণ, ঝাল কম-বেশি কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। কাশির সঙ্গে রক্তের মতো কিছু আসা শুরু করে। সেই সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।

২১ মার্চ সকালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর জন্য যাই। তিন দিন পর অনলাইনে জানানো হয় কোভিড-১৯ পজিটিভ। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত অবস্থা খুব খারাপ ছিল। রাতে ঘুমের মধ্যেও শরীর ভীষণভাবে ঘেমে যেত।

২৬ মার্চ সকালে চিঠিতে জানানো হয়, আমার ফ্ল্যাটের সবাইকে লকডাউন করে আমাকে ঘরের মধ্যেই আইসোলেশনে থাকতে হবে। ফোনের মাধ্যমে সবসময় ডাক্তার যোগাযোগ রাখেন। ফ্ল্যাটের সবাইকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত গতিবিধি সীমিত করতে বলা হয়।

২৭ তারিখে আমার অবস্থার উন্নতি হয়। শরীরে ভাইরাস আর রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে যে লড়াই চলছে সেটা তখন টের পাওয়া যাচ্ছিল। তার মধ্যেও হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। পরদিন থেকে জ্বর কমে যায়। কিন্তু কাশিটা ২ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল।

এখন সর্দি-কাশি নেই কিন্তু হঠাৎ জ্বর আসে আর দুর্বল হয়ে যায় শরীর।

চিকিৎসা আর খাদ্যাভ্যাস

তিন বেলা রোজকার খাবারে কোনো পরিবর্তন করিনি। যার যেমন খাদ্যাভ্যাস সে সেরকম খাবারই খেতে পারেন। তবে কোনো খাবারের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে তা বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার।

খাবারে আদা, রসুন, কালোজিরা, মধু, দুধ, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল আর মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট যার যেটা ভালো লাগে মাত্রা অনুযায়ী খেতে বলেছেন। নিয়ম করে তিন বেলা খেয়েছি লেবু চা। মোট কথা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে হবে। রক্তচাপে সমস্যা থাকলে খাবার বেছে খেতে বলা হয়েছে। আমি আদা, রসুন, মধু, লবণ দিয়ে শরবতের মতো করে খেয়ে ফেলতাম। কাশি হলে এলাচের ভিতরের দানা, লবঙ্গ আর আদা কুচি লবণ দিয়ে মুখে রাখতাম।

প্রচুর পরিমাণে মৃদু গরম পানি খেয়েছি। সেই সঙ্গে ঘরের মধ্যেই হাঁটাহাঁটি আর শরীরটাকে সচল রেখেছি।

হালকা গরম পানিতে গোসল করতে বলেছিলেন ডাক্তার। ঘর বদ্ধ না রেখে আলো বাতাস চলাচল করতে দিতে বলা হয়েছে। বার্লিনে গত সপ্তাহেও তুষার পড়েছে। এর মধ্যেও ঘরের জানালা খুলে রাখতে হয়েছে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা। অবশ্য ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা থাকায় সমস্যা হয়নি।

মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করেছি। বাইরে যাওয়ার আগে সবাইকে জানিয়েছি। এ সময়টায় ওয়াশ রুম ও রান্নাঘর যতটা কম ব্যবহার করা যায় ভালো। তবে ব্যবহার করার পর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন ২০ মিনিটের মধ্যে কেউ সেখানে না যায়। নিজের ব্যবহার্য সবকিছু নিজেকেই পরিষ্কার রাখতে হবে।

চিকিৎসায় কোনো ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়নি। জ্বরের জন্যে প্যারাসিটামল বা সর্দি-কাশির সিরাপ খেতে বাধা নেই। দরকারে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েছি।

আগামী ১২ এপ্রিলের আগে আমাদের ফ্ল্যাটের সবার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুবার পরীক্ষা করা হবে। দুই পরীক্ষাতেই কোভিড-১৯ নেগেটিভ পাওয়া গেলে আমরা সবাই লকডাউন থেকে বের হতে পারব।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

13m ago