‘ঘরোত খাবার নাই মুই এ্যালা কী করং’

'ঘরোত খাবার নাই মুই এ্যালা কী করং’ আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক উকিল চন্দ্র রায় (৪৬)।
লালমনিরহাটের সদর উপজেলার উত্তর সান্টানা গ্রামের দিন এনে, দিন খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। ছবি: এস দিলীপ রায়

'ঘরোত খাবার নাই মুই এ্যালা কী করং’ আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক উকিল চন্দ্র রায় (৪৬)।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রামের এই ভ্যান চালক আরো বলেন, ‘কয়দিন থাকি বাড়িত বসি আছং কোন কাজ-কামাই নাই। ভ্যানখান বাড়ি আছে। কোনোটে কোন কাজ-কাম নাই। বাড়িত থাকি বেরবারও পাবার নাগছোং না।'

‘কোটে থাকি খাবার আনিম। হাতোও পাইসাও নাই, যে মুই খরচ করিম,’ বাড়িতে থাকা ভ্যানের ওপর বসে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বলছিলেন এসব কথা।

দিন এনে দিন খাওয়া এই ভ্যানচালকের নেই নিজের জমি। থাকেন অন্যের জমিতে। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালানো ও তিন সন্তানের পড়ালেখার খরচ যোগাতে এমনিতেই হিমশিম। রয়েছে এনজিওর ঋণ। আর এখন করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পুরো দিশেহারা অবস্থা।  

সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সাহায্য জোটেনি এখনও। নিরুপায় এই ভ্যান চালক প্রস্তুতি নিয়েছেন তার ভ্যানটি বিক্রি করে দেয়ার।

উকিল চন্দ্রের মতোই ফুলগাছ গ্রামের ভ্যানচালক জয়নাল মিয়া (৪৫) জানালেন, তারা গরিব মানুষ। দিন আনি, দিন খরচ করে সংসার চালায়। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। তার ওপর করোনার কারণে অবস্থা হয়েছে আরও খারাপ।

‘এমনিতেই আমরা গরিব মানুষ। এখন আরো বেশি গরিব হচ্ছি। কাজ নেই, জানি না কতদিন এমন চলবে,’ বলেন তিনি।

তিনি জানান, বাড়িতেই থাকছেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাননি।

তিন সন্তান স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভ্যান চালক জয়নালের সংসার চলছে অর্ধাহারে-অনাহারে। বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে বাইরে গেলেও লকডাউনের কারণে কোথাও কোন কাজ নেই।

জেলা ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রমনীকান্ত বর্মন বলেন, জেলায় সাড়ে ১০ হাজার ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানচালক রয়েছেন আর তাদের সবাই এখন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসে আছেন।

‘এমন অবস্থায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। কোথাও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। মহাজনদের কাছে গেলেও মিলছে না কোন সাড়া,’ তিনি জানান।

তবে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানিয়েছেন, জেলার ৫টি উপজেলায় বাড়িতে থাকা খেটে খাওয়া দিনমজুর ও শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ চলছে। কোন মানুষকে যেন অভুক্ত থাকতে না হয় সেজন্য কেউ তার মোবাইলে ফোন অথবা এসএমএস করলে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী।

Comments