করোনাভাইরাস: যেভাবে সফল হলো নিউজিল্যান্ড

Jacinda Ardern
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা অ্যার্ডেন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস মহামারিতে ইউরোপজুড়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণের হার। এর মধ্যেই করোনা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড। গত চারদিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে দেশটিতে।

গতকাল বৃহস্পতিবার, দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ জন।

এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২৩৯, মারা গেছেন একজন। অন্যদিকে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১৭ জন।

সিএনএন জানিয়েছে, প্রায় ৫০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটিতে করোনা ঠেকাতে এক মাসের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১৫ দিন লকডাউনে থাকার পরই এর সুফল পেতে শুরু করেছে দেশটি।

গতকাল দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা অ্যার্ডেন বলেন, ‘ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো নয়। আমাদের লক্ষ্য শূন্যে নিয়ে আসা। করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি নির্মূল করা।’

জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাইরাসটিকে কোণঠাসা করতে পেরেছি। আপনাদের সহযোগিতার কারণেই আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা কাজে লেগেছে।’

টানা চার দিনের মতো আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলে অন্য কোনো দেশ হয়তো লকডাউন স্থগিতের ব্যাপারে ভাবতো। যেমন, ডেনমার্ক ইতোমধ্যেই জানিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলে আগামী সপ্তাহে লকডাউন স্থগিত হতে পারে। ডেনমার্কে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৯৭, মারা গেছেন ২১৮ জন।

তবে, ব্যতিক্রম নিউজিল্যান্ড। অ্যার্ডেন জানান, দেশটির সীমান্ত চলাচলে কঠোর সর্তকতা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো বিদেশি যাত্রী দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেবল নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা দেশে ফিরতে পারবেন। ফেরার পর বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউনে অর্ধেক মাস পর আমার এটা বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, গত দুই সপ্তাহে নিউজল্যান্ডবাসী যা করেছে তা বিশাল। আপনারাই আমাদেরকে দেখিয়েছেন যে, একসঙ্গে আমরা একে অপরকে রক্ষা করতে পারবো এবং আপনারা রক্ষা করেছেন। আপনারা জীবন বাঁচিয়েছেন। তবে... এটা সবে শুরু। আরও অনেকদিন এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ড দুই ধরনের সুবিধা পেয়েছে— ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এক মাস পর গত ২৯ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

করোনা প্রতিরোধে নিউজিল্যান্ড সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল বেকার। তিনি বলেন ‘আমার ধারণা, আমরা চীন থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য হাতে কিছুটা সময় পেয়েছিলাম। সেটাকেই কাজে লাগিয়েছি।’

তিনি জানান, নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের পেছনে মূল কারণ হলো উন্নত বিজ্ঞান ও দক্ষ নেতৃত্ব। এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড ৫১ হাজার ১৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করেছে। যেখানে ১৩ গুণ বেশি জনসংখ্যার যুক্তরাজ্যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখের কিছু বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো শক্তিশালী, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশও করোনা ঠেকাতে যথেষ্ট নেতৃত্ব দিতে পারেনি উল্লেখ করে হতাশা ব্যক্ত করেন বেকার।

তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস সম্পর্কে সবাই যা জানতো, আমরাও তাই জানতাম। সবাই জানতো সুনামির মতো দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি বদলায়নি, একইরকম শক্তিশালী আছে। আর সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’

অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট জিওএক্সসি উইলস বলেন, ‘দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় অন্য দেশ থেকে দূরত্বে থাকার কারণে সীমান্ত চলাচলে কঠোর নির্দেশনাও সহজে জারি করা গেছে। কোনো প্রকার ফাঁকফোকরের সুযোগ ছিল না।’

সুজি ওয়ালস বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যখন “প্রিয়জনকে হারানোর জন্য প্রস্তুত হন” বলে নাগরিকদের সতর্ক করেছেন তখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অ্যার্ডেন স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি কেবল মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করবেন, অর্থনীতি নিয়ে নয়।’

গত ১৪ মার্চ নিউজিল্যান্ডের প্রবেশ করা মাত্রই ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যার্ডেন। সেসময় দেশটিতে ছয় জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

১৯ মার্চ ২৮ জন আক্রান্তের সংবাদের পর বিদেশি যাত্রীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। ২৩ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা ১০২ এ পৌঁছালে সারা দেশে এক মাস লকডাউন জারি ঘোষণা দেওয়া হয়।

ওয়ালস বলেন, ‘অন্য দেশের তুলনায় আমাদের এখানে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা কম। এজন্যই তিনি (অ্যার্ডেন) খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন।’

সুজি ওয়ালস ও মাইকেল বেকার উভয়েরই মত, প্রাথমিকভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় নিউজিল্যান্ড করোনা ঠেকাতে সফল হয়েছে বলা যায়। কিন্তু, এটা ভেবে স্বস্তি পাওয়ার কিছু নেই। এখনো অনেক দূর পথ পাড়ি দিতে হবে।

এদিকে, নিউজিল্যান্ডে আপাতত লকডাউন স্থগিতের কোনো পরিকল্পনা নেই, বরং বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যার্ডেন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের রাতারাতি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়া ঠিক হবে না। তাতে যতদূর সামনে এগিয়েছি তার থেকে অনেক গুণ বেশি পিছনে চলে যাবো।’

মাইকেল বেকার বলেন, ‘আমাদের প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে করোনাভাইরাস নির্মূল করা আর দ্বিতীয় পরিকল্পনা হলো অনেক মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এই দুই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা কাজ করছি। অন্য সবার মতো আমরাও ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় আছি। অন্যান্য দেশের মতো আমরাও কয়েক মাস লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

1h ago