করোনার সঙ্গে চীনের নাম, দুঃখ প্রকাশ করল ‘নেচার’
করোনাভাইরাস মহামারিতে চীনকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষমা চেয়েছে ব্রিটিশ বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচার।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, বিশ্বব্যাপী মহামারির শুরুর দিকে সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে যথেষ্ট সর্তক না হওয়ার কারণে পরবর্তীতে অনেক গণমাধ্যমেও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। সেসব সংবাদে বর্ণবাদী আচরণ প্রকাশ পেয়েছে বলে জানিয়েছে নেচার।
গত মঙ্গলবার, নেচার প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন নিউমোনিয়া সদৃশ ভাইরাসটির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে “কোভিড ১৯” হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে চীন ও উহানের সঙ্গে জড়িয়ে ভাইরাসটির নাম রেখে সংবাদ পরিবেশন করায় আমরা দুঃখিত। দায়িত্বশীলতার দিক থেকে এরকম একটি ভুলের দায়ভার আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’
নেচার জানায়, ‘এটা স্পষ্ট যে, করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই এশীয়দের উপর বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে। অন্যান্য মহাদেশে এশীয়দের বিচ্ছিন্ন করে রাখার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এর ফলে, তাদের স্বাস্থ্য ও জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
সাধারণত উৎপত্তিস্থলের সঙ্গে মিল রেখে ভাইরাসের নামকরণ করা হয় বলে জানিয়েছে নেচার। উদাহরণ হিসেবে তারা মধ্যপ্রাচ্যের উল্লেখ থাকা ‘মার্স’ (মিডল ইস্ট রেসপিরাটরি সিন্ড্রোম) করোনাভাইরাস ও উগান্ডার জঙ্গলের নামের সঙ্গে মিল রেখে ‘জিকা’ ভাইরাসের নামকরণের কথা জানায়।
২০১৫ সালে জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবাদী আচরণ এড়াতে কোনো দেশ বা জায়গার নামানুসারে ভাইরাসের নামকরণ করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
নেচারের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শুরুতে করোনাভাইরাসের সঙ্গে চীনের নাম যুক্ত করায় ভবিষ্যতে দেশটির শিক্ষার্থীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তারা অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হতে পারেন।’
‘কোভিড-১৯’ এর উৎস এখনো অজানা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই ভাইরাসটির সঙ্গে চীন কিংবা উহানকে যুক্ত করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ‘কোভিড-১৯’র উৎস কী সেটা রাজনীতিবিদদের জানার কথা না। তাই, এর সঙ্গে চীন কিংবা উহানকে জড়িত করা যাবে কিনা সে বিষয়ে কেবল বিজ্ঞানীরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, শুরু থেকেই ‘কোভিড-১৯’র জন্য চীনকে বিদ্রুপ করে আসছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। গণমাধ্যমে তিনি এটিকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে সম্বোধন করেছেন। অন্যদিকে, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের পেছনে চীনের ‘হাত’ আছে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির ছেলে আইনজীবী এদুয়ার্দো বনসোলারো।
২০১৯ সালের শেষের দিকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্বজুড়ে এশীয় বংশোদ্ভুতদের উপর বর্ণবাদী আচরণের ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে টেক্সাসের এক এশীয় পরিবারের ছয় বয়সী শিশুসহ তিন সদস্যকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনাও ঘটে।
নেচার মনে করে, ‘বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস ঠেকাতে গিয়ে এখনো সেই পুরনো, বর্ণবাদী রাজনীতি চলছে। এরকম মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সবার এক হয়ে কাজ করা উচিত। সংকটের সময় কোন জায়গা থেকে ভাইরাসটি এসেছে, কারা দায়ী— এসব নিয়ে আলোচনা করা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ হবে।’
Comments