ডাক্তার বা করোনাভাইরাস কি বিরোধীদল?

সব কিছুকেই আমরা রাজনৈতিকভাবে দেখি। মোকাবিলাও করতে চাই রাজনীতি দিয়ে। এর একটি কারণ হয়ত এই যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিরোধীদল মোকাবিলায় আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। সেই সক্ষমতায় ‘সুবিধা নেওয়া ও দায় চাপানো’র অতুলনীয় দক্ষতা অর্জন করেছি। করোনাভাইরাসকেও আমরা বিরোধীদলের মর্যাদা দিয়ে মোকাবিলার চেষ্টা করেছি।

সব কিছুকেই আমরা রাজনৈতিকভাবে দেখি। মোকাবিলাও করতে চাই রাজনীতি দিয়ে। এর একটি কারণ হয়ত এই যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিরোধীদল মোকাবিলায় আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। সেই সক্ষমতায় ‘সুবিধা নেওয়া ও দায় চাপানো’র অতুলনীয় দক্ষতা অর্জন করেছি। করোনাভাইরাসকেও আমরা বিরোধীদলের মর্যাদা দিয়ে মোকাবিলার চেষ্টা করেছি।

কয়েকজন ‘রাজডাক্তার’ নেতা ছাড়া, সারাদেশে ডাক্তারদের বিষোদগারের প্রতিযোগিতা চলছে। যেমন আচরণ দৃশ্যমান হয় বিরোধীদের ক্ষেত্রে, এখন তা ডাক্তারদের ক্ষেত্রে। ডাক্তারদের বিরোধীদল বানানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, দেশের মানুষের একটা ক্ষোভ আছে তাদের বিরুদ্ধে।

ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের অনেকে ‘পালিয়ে’ আছেন। তারা রোগীদের চিকিৎসা করছেন না। তাদের জন্যে কোনো প্রণোদনা তো নয়ই, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডাক্তার-নার্স নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। এমনিতেই আমাদের বিদেশের প্রতি একটি তীব্র মোহ আছে। যা কিছু বিদেশি, তা ভালো- যেকোনো কারণেই হোক এমন ধারণা আমাদের ভেতরে ঢুকে আছে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার প্রতিফলন ঘটে। বিত্তবানরা চাইলে যেতেই পারেন। প্রশ্ন আসে রাষ্ট্রীয় খরচে যাওয়া নিয়ে। যদিও প্রশ্নে কিছু যায় আসে না। দেশে একটি বামরুনগ্রাদ বা মাউন্ট এলিজাবেথ কেন তৈরি না করে বিদেশে চলে যান, সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।

করোনাভাইরাস বিদেশে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এখন চাইলেই বিদেশ থেকে ডাক্তার-নার্স নিয়ে আসার সুযোগ নেই। যদিও বাংলাদেশের ডাক্তাররা বহু বছর আগে থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশের বড় বড় হাসপাতালে কাজ করছেন।

আরও একটি তথ্য দিয়ে রাখি, নিউইয়র্কের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে একাধিক বাংলাদেশি ডাক্তার কাজ করছেন। সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।

বাংলাদেশের একজন ডাক্তার কয়েক মাস আগে চাকরি নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে চলে গেলেন। কারণ বিষয়ে জানলাম, তিনি অ্যানেসথেসিওলজিস্ট। তাকে দেশের এমন একটি হাসপাতালে বদলি করা হয়েছিল যেখানে অপারেশন থিয়েটার নেই।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা’ যা বাংলাদেশে প্রায় অনুপস্থিত। এই অব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ডাক্তার এসে ভালো কিছু করতে পারবেন, তা বলা যায় না।

চীনে থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল আনার চেষ্টা করছে সরকার। সম্ভাবনা আছে ১৫ সদস্যের একটি চীনা বিশেষজ্ঞ দল আসার। এসে কি করবেন তারা? ইতালিতে চীনা প্রতিনিধি দল গিয়ে বলেছে, এই লকডাউন দিয়ে হবে না। চীনের মত লকডাউন করতে হবে। বাংলাদেশে এসেও হয়ত তেমন কিছুই বলবেন। সেটা কি নিজেরা আরও আগেই করতে পারতাম না?

যাই হোক করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভাইরাসটি ছোঁয়াচে এবং ডাক্তারদের আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ইতালিতে প্রায় শতাধিক ডাক্তার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারও আগে ডাক্তার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চীনে। বাংলাদেশে আজকে পর্যন্ত আক্রান্ত ডাক্তারের সংখ্যা ২২ জন। কতজন কোয়ারেন্টিনে আছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানানো হয়নি। গতকাল ঢাকা মেডিকেলের ৯ জন ডাক্তার ৬ জন নার্স ও ১ জন ওয়ার্ডবয় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন। নিজের ফেসবুকের পোস্ট দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. শওকত হোসেন।

একদিনে যদি এত সংখ্যক ডাক্তার-নার্স কোয়ারেন্টিনে যান বা যেতে হয়, চিকিৎসা করবেন কারা?

এ কারণেই বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয় ডাক্তার-নার্সসহ রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্তদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই)। করোনাভাইরাস শুরুতে উহানে অবস্থান করছিল। অল্প সময়ের মধ্যে জাপান, কোরিয়া, ইরান হয়ে ইতালি পৌঁছল। বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে শুরু থেকেই সংশয়-সন্দেহ ছিল। আলোচনা সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে বারবার বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ বা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যে বাংলাদেশ সময় পেয়েছে প্রায় তিন মাস।

কিন্তু প্রস্তুতির প্রয়োগে দেখা গেল, বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার অকেজো। বিমানবন্দরে কর্মরত ডাক্তার-নার্স-কর্মকর্তাদের পিপিই নেই। স্থলবন্দরগুলোতে এসবের কিছুই নেই। কোয়ারেন্টিনের প্রস্তুতি বিষয়ে বিগত তিন মাসে যা জানা গিয়েছিল, আমাদের প্রস্তুতিতে তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। বিদেশে বেড়াতে বা ব্যবসার কাজে গিয়ে ফিরে আসলেন। ফিরে আসলেন পাঁচ ছয় লাখ প্রবাসী। বিদেশ ফেরতরা নিজেদের অজান্তেই সঙ্গে করে নিয়ে আসলেন করোনাভাইরাস। বিমানবন্দরে তাদের স্ক্রিনিংয়ের যে কথা বলা হলো, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল পাওয়া গেল না। ডাটা সংরক্ষণ করা হলো না। তারা সারা দেশে মিশে গেলেন। পুলিশকে বলা হলো এদের খুঁজে বের করতে। পুলিশের পক্ষে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না।

তারপর দেশে সংক্রমণ শুরু হলো। তখন দেখা গেল করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট নেই। ১৬-১৭ কোটি মানুষের পরীক্ষার জায়গা একটি। ডাক্তারদের পিপিই নেই। তিন মাস আগে থেকে ‘প্রস্তুতি’ সম্পন্ন, কিন্তু ডাক্তারদের পিপিই নেই! বলা হলো, সারা পৃথিবীতেই পিপিই’র সঙ্কট চলছে। ডাক্তারদের পিপিই দেওয়া ‘হচ্ছে’ দেওয়া ‘হবে’। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশের চিকিৎসায় আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর অপরিহার্য। দ্য ডেইলি স্টার রিপোর্ট করে জানাল, দেশে আইসিইউ বেড আছে এক লাখ মানুষের জন্যে ০.৭টি। সেভ দ্য চিলড্রেন জানাল, ৯৩ হাজার মানুষের জন্যে ভেন্টিলেটর আছে একটি। বলা হচ্ছে, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কয়টি বাড়াবেন, কোথায় পাবেন? সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে গত কয়েকদিনে চীন ১০ লাখ ভেন্টিলেটরের অর্ডার পেয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ ভেন্টিলেটরের জন্যে তাকিয়ে আছে চীনের দিকে। সেখানে বাংলাদেশ এখন কোথায় পাবে ভেন্টিলেটর? দেশে তৈরির অবাস্তব একটি গল্প প্রচার করা হয়েছে। যার কোনো ভিত্তি নেই।

সিলেটে একজন ডাক্তার রোগী দেখতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলো, প্রয়োজন আইসিইউ বেড। বিভাগীয় শহর সিলেটে তা পাওয়া গেল না। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় এলেন।

করোনা চিকিৎসার জন্যে মাত্র নয় দিনে একটি হাসপাতাল বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল চীন। বাংলাদেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উদ্যোগ নিয়ে আকিজের সহায়তায় ৩০১ শয্যার একটি হাসপাতাল বানানোর উদ্যোগ নিলেন। আগে থেকে ঘোষণা দেননি। ২৫-৩০ দিনের মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণ সম্পন্ন হবে। ১০-১২ দিনে কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেল। কেনা হলো করোনা চিকিৎসার আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম। বিদেশ থেকে আরও কিছু সরঞ্জাম আনার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্যে সরকারের কাছে সহায়তা চাওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করলেন। এর মধ্যে জানাজানি হলো। মিছিল-ভাঙচুর চলল। হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেল। রাজনীতির বিরোধীদলের ক্ষেত্রে যেমন হয়।

এর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ ৫ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরির জায়গা দিতে চাইল। সরকারকে কাজ শুরু করতেও দেখা গেল। তখন জানা গেল, দেশের বড় ছোট বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ খালি হয়ে গেছে। করোনা ঝুঁকিতে মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি নেই, কিট নেই, ডাক্তার-নার্স-কর্মকর্তাদের পিপিই নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, তাদের পিপিই দেওয়া সরকারের দায়িত্ব নয়। বেশ কয়েকটি বড় হাসপাতাল ‘বন্ধ’ লিখে দিল প্রধান ফটকে।

এখানে প্রশ্ন আসে দুটি:

ক. এমন জরুরি সময়ে বেসরকারি হাসপাতাল কেন বন্ধ করে রাখবে?

খ. নতুন হাসপাতাল বানানোর দিকে সরকারের মনোযোগ কেন?

১. প্রশ্ন দুটির উত্তর হলো, নেতৃত্বের ব্যর্থতা-সমন্বয়হীনতা। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি হাসপাতালের মালিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেনি যে, করোনা চিকিৎসায় তাদের দায়িত্ব কী হবে।

২. বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে কী না, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় স্থান পায়নি।

৩. বসুন্ধরার দেওয়া জায়গায় সরকার দু’হাজার শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু দেশে বেসরকারি হাসপাতালের বিশাল অবকাঠামো-লোকবল এই কঠিন সময়ে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নিতে দেখা যায়নি। এখন বলা হচ্ছে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা করবে। এটাও হচ্ছে পরিকল্পনাহীনভাবে।

সরকার শুধু তাদের উপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব সেরেছে। সরকার বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে, প্রণোদনা ও চাপ দিয়ে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেনি।

সরকার নিজে সময়মত কিট ও পিপিই আমদানি করেনি। পিপিই’র কাঁচামাল আমদানি করে দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সম্পৃক্ত করে পিপিই বানানোর উদ্যোগ নেয়নি। তিন মাস সময়ে তা খুব সহজে করার সুযোগ ছিল। দেশেই মাস্ক তৈরির সুযোগ ছিল, তাও করা হয়নি।

৪. করোনাভাইরাসের বিপদ নীতি-নির্ধারকরা অনুধাবন করতে পারেননি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি করোনাভাইরাসকে সাধারণ ফ্লু বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে তিনি ছয় সপ্তাহ সময় অপচয় করে, আমেরিকায় বিপদ ডেকে এনেছেন। বাংলাদেশ কমপক্ষে ১২ সপ্তাহ সময় অপচয় করেছে।

‘করোনাভাইরাস সাধারণ সর্দি-কাশি’ ‘করোনাভাইরাস এ দেশে কিছু করতে পারবে না’ ‘আমরা করোনাভাইরাসের চেয়ে বেশি শক্তিশালী’- এসব কথা বলেছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারকরা। বিরোধীদলের উদ্দেশে যেভাবে কথা বলা হয়, করোনাভাইরাস নিয়েও সেভাবেই কথা বলা হয়েছে।

৫. করোনাভাইরাসে যখন ইতালি বিপর্যস্ত তখন নীতি-নির্ধারকদের কথায় প্রবাসীরা মনে করেছেন বাংলাদেশ নিরাপদ। দলে দলে তারা দেশে চলে এসেছেন। তারা কোনো দিক-নির্দেশনা পাননি প্রস্তুতিহীন বিমানবন্দর থেকে।

৬. সরকারের ভাষ্যে সবসময়ই মানুষের সন্দেহ থাকে। করোনার প্রস্তুতি পর্বে যা বলা হয়েছিল, প্রয়োগ পর্যায়ে এসে দেখা গেছে মানুষের সন্দেহ অমূলক ছিল না। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিদিন তথ্য জানাচ্ছেন। ০.১৪ বা ০.২১ শতাংশ মানুষের পরীক্ষা করে বলেছেন, আজ দেশে করোনা আক্রান্ত পাওয়া যায়নি বা তিনজন পাওয়া গেছে। এ তথ্যে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারেনি। এখন পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তাও জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম। পরীক্ষা না করে স্বস্তিতে থাকার একটি অবিশ্বাস্য প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

৭. শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে ঝুঁকিপূর্ণ সময়েও। লকডাউন না করলেও সাধারণ ছুটির পর অঘোষিতভাবে লকডাউন করা হয়েছে। করেনাভাইরাসের আতঙ্কজনক বিস্তারের সময়ও সরকার তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখার সুযোগ দিয়েছে।

লকডাউনের সঙ্গে যে একটি বড় পরিকল্পনা থাকতে হয়, তা করা হয়নি। অপর্যাপ্ত ত্রাণ ও ওএমএসে ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রির করে লকডাউনকালে মানুষকে সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহু মানুষের পক্ষে ত্রাণের লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব নয়, আবার কাজ না থাকায় ১০ টাকা কেজিতে চাল কেনাও সম্ভব নয়। কয়েক কোটি মানুষকে তিন মাস বা ছয় মাস খাদ্য সরবরাহের পরিকল্পনা থাকা দরকার ছিল। দরকার ছিল সরাসরি কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর। ৭২ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজে নানা কৌশল পরিলক্ষিত হলেও, এসব দিক গুরুত্ব পায়নি।

করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্যে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা অপরিহার্য ছিল। নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি।

সরকার ৫০০ সদস্যের কমিটি করেছে। সেই কমিটির প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই অভিযোগ করেছেন, তাকে কিছু জানানো হয় না।

৮. এ কথা ভেবে আমরা পুলকিত হতে পারি যে, অমুক দেশের ডাক্তাররা পিপিই ছাড়াই সেবা দিচ্ছেন। নার্সদের পলিথিন দিয়ে পিপিই বানিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়ার ছবি প্রচার করছেন অনেকে।

পিপিই আর পলিথিন দিয়ে তৈরি গাউন এক বিষয় নয়। পিপিই একটি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যা ছাড়া এই সময়ে ডাক্তারি করা আর করোনাভাইরাস বা মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানো একই কথা।

যারা বিদেশের মহিমা প্রচার করছেন, তারা খোঁজ রাখছেন না বাংলাদেশের ডাক্তাররা কতটা প্রতিকূল অবস্থায় এখনো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ব্যতিক্রম আছে, ‘পালিয়ে’ যাওয়াই সার্বজনীন চিত্র নয়। একবার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তারদের খবর নিয়ে দেখেন, কীভাবে জীবন-বাজি রেখেছেন তারা!

করোনা এ দেশে এসেছে বিদেশফেরতদের মাধ্যমে। সেখানে ডাক্তারদের কোনো দায়িত্ব ছিল না। দায়িত্ব ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, সরকারের।

পরীক্ষার কিট, পরীক্ষাগার, পিপিই, আইসিইউ শয্যা, ভেন্টিলেটর- এগুলো সংগ্রহ, বৃদ্ধির কোনো দায়িত্বই ডাক্তারদের ছিল না। দায়িত্ব কার ছিল, কে বা কারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি? তাহলে প্রতিপক্ষ বা বিরোধীদল বানিয়ে উপস্থাপন কেন করছেন ডাক্তারদের!

[email protected]

আরও পড়ুন:

গরিব পেটানোর মূলেও আইনের শাসনহীন বিচারহীনতা

১ শতাংশও নয়, ০.১৪ শতাংশের করোনা পরীক্ষা ও মীরজাদির তথ্য

মন ভালো করা ভুটানের চিকিৎসা ব্যবস্থা

ট্রাম্পের ৬ সপ্তাহের গাফিলতি, আমেরিকার অপূরণীয় ক্ষতি

Comments