করোনাভাইরাস

চীনের স্বাস্থ্য খাতে আসছে বড় পরিবর্তন

করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা হয়েছে চীনের। স্বাস্থ্য সেবায় বেসরকারি এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা তাদের সাফল্যের বড় চাবিকাঠি। তাই, ভবিষ্যতে এধরনের প্রাদুর্ভাব এড়াতে নিজেদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দেশটি।
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা হয়েছে চীনের। স্বাস্থ্য সেবায় বেসরকারি এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা তাদের সাফল্যের বড় চাবিকাঠি। তাই, ভবিষ্যতে এধরনের প্রাদুর্ভাব এড়াতে নিজেদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দেশটি।

২০৩০ সালের মধ্যে চীনে এই খাতে সম্পূর্ণভাবে নতুন ব্যবস্থা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। এতে বড় ভূমিকা পালন করবেন পারিবারিক চিকিৎসক, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা।

করোনা প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই চীনের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা চলছিল। ২০১৯ সালের মার্চে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এক কোটিরও বেশি মানুষের আবাস উহান শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হেনান প্রদেশে একটি কনফারেন্স হয় বলে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। এই কনফারেন্স হয় ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ফ্যামিলি ডক্টরসের সহায়তায়।

সংস্থাটির সভাপতি ডোনাল্ড লি কউক-টাং বলেন, ‘উহানের প্রাথমিক চিকিৎসা অবকাঠামোগুলো তুলনামূলকভাবে মানসম্পন্ন ছিল না, এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতাও ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। হাসপাতালে ছুটে আসা রোগীদের ভিড়ে উহান ও এর আশেপাশের শহরগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রচণ্ড চাপে পড়ে যায় এবং সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়াতে ভূমিকা রাখে।’

বেইজিং প্রায় এক দশক আগে স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার করেছিল। তখন দেশটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা এবং চলতি বছরের মধ্যে সবার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। করোনা প্রাদুর্ভাব এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে ডিজিটাল সেবা।

পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ জি) ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসার সেবায় পরিবর্তন আনতে কাজ করছে চীন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে চিকিৎসা, রোগ নির্ণয় এবং টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে চীনের বড় সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরতা এবং চিকিৎসকদের অভাব কিছুটা মেটাবে বলে প্রত্যাশা করছে তারা।

হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমাতে ডিজিটাল ও পারিবারিক ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে ডোনাল্ড লি বলেন, ‘যদি পারিবারিক চিকিৎসক রোগীদের বলেন যে তারা বেশি অসুস্থ নন এবং হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তখন রোগীরা আশ্বস্ত হবেন। এটা সম্পদ বাঁচাতে ও সরকারি হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় চাপ কমাতে সাহায্য করবে।’

তিনি অনলাইনে চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলেন, ‘পারিবারিক চিকিৎসকরা অনলাইন চিকিৎসা সেবায় অংশ নিতে পারেন। তারা ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরামর্শ দিতে পারেন। রোগীদের সঙ্গে তাদের বিশ্বস্ত সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে সেবা দিয়ে যেতে হবে। ছোটখাটো অসুস্থতায় রোগীরা অনলাইন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবেন। বিশেষত যখন তারা মহামারির সময় বিভিন্ন কারণে হাসপাতালে যেতে পারবেন না।’

করোনা সংক্রমণের কারণে দেশটিতে অনলাইন মেডিকেল প্ল্যাটফর্মগুলোর দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে।

চীনে তিন স্তর বিশিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় এবং বাকী দুটি স্তরে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। রোগী চাইলে কোন স্তরের সেবা নিবেন তা নির্ধারণ করতে পারবেন। যার কারণে বড় এবং উন্নত হাসপাতালগুলোতে দেশটির প্রায় অর্ধেক রোগী ভিড় করেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফটওয়্যার নির্মাতা চেন কৌন বলেন, ‘মূল সমস্যা হলো প্রাথমিক রোগে সেবা দেওয়ার জন্য এক দশমিক চার বিলিয়ন জনসংখ্যার তুলনায় কম সংখ্যক ডাক্তার। এই জায়গাতে প্রযুক্তি একটি বড় ভূমিকা নিতে পারে, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। পরবর্তী পাঁচ থেকে দশ বছরে এটা সর্বব্যাপী হয়ে উঠবে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বাড়াতে জোরদার ভূমিকা পালন করবে।’

এছাড়াও স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমি অব মেডিসিন প্রতিষ্ঠা করতে চাইনিজ মেডিকেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ করছে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ফ্যামিলি ডক্টরস। তারা চীনে হংকংয়ের মেডিকেল কাউন্সিলের মতো একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠায়ও সহায়তা করার পরিকল্পনা করেছে।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন করা হবে চীনের সরকারি হাসপাতালগুলোতে। কাইমিং ভেনচার পার্টনার্সের ম্যানেজিং পার্টনার নিসা লেইং বলেন, ‘দেশে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের অভাব নেই। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর খ্যাতির অভাব আছে। যার কারণেই রোগীরা বিখ্যাত সরকারি হাসপাতালগুলোতে ছুটে আসেন।’

দুবছর আগে প্রতিষ্ঠিত জিয়াহি ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী জি ফেং বলেন, ‘খ্যাতি একটি বড় বিষয়। চীনের সরকারি হাসপাতালগুলো অনেক বড় প্রতিপক্ষ।’

২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে ১২ হাজার ৩২টি সরকারি হাসপাতাল ও ২০ হাজার ৯৭৭টি বেসরকারি হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৪২টি বড় সরকারি হাসপাতালে রোগীদের সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে।

নিসা লেইংয়ের মতে, কোনা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি তৈরি করতে অন্তত ১০ বছর তো লাগবেই। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের স্বাস্থ্য খাতে এই পরিবর্তন আনা অনেক বড় একটি কাজ।

Comments

The Daily Star  | English
Sheikh Hasina's Sylhet rally on December 20

Hasina likely to kick off AL campaign with Sylhet rally on Dec 20: Quader

Prime Minister Sheikh Hasina, also the president of the ruling Awami League, will formally kick off the election campaign of the ruling party from a rally in Sylhet likely to be held on December 20.

2h ago