হাসপাতালবিহীন রাঙ্গাবালী উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও তালাবন্ধ

পটুয়াখালীর নবগঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা কোনো হাসপাতাল নেই। আছে শুধুমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক। নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক। যারা আছেন তারাও করোনাভাইরাসের ভয়ে অফিস করছেন না। কোনো উপায় না দেখে রোগীরা ছুঁটছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে। কিন্তু, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও ঝুলছে তালা।
Kazirhawla community clinic
পটুয়াখালীর নবগঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলার বন্ধ কাজিরহাওলা কমিউনিটি ক্লিনিক। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর নবগঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা কোনো হাসপাতাল নেই। আছে শুধুমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক। নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক। যারা আছেন তারাও করোনাভাইরাসের ভয়ে অফিস করছেন না। কোনো উপায় না দেখে রোগীরা ছুঁটছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে। কিন্তু, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও ঝুলছে তালা।

রোগীরা এক এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে যাচ্ছেন অন্য এলাকায়। সেখানে গিয়েও দেখছেন একই অবস্থা। এভাবে হয়রানির শিকার হয়ে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। রোগ নিয়ে ঘরেই কাতরাচ্ছে অনেকে রোগী। এমন চিত্র পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায়।

গতকাল শনিবার বেলা ১০টা ২৫ মিনিটে গন্ডাদুলা কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ দেখা গেছে। সামনের দরজায় ছিল তালা। বাইরের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিল অনেকদিন ধরে ক্লিনিকটি খোলা হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, করোনাভাইরাসের আগে সপ্তাহে দু-একদিন ক্লিনিকটি খোলা থাকতো। করোনার প্রাদুর্ভব শুরু হওয়ার পর থেকে ক্লিনিকটি খুলতে দেখা যায়নি। রোগীরা এসে ঘুরে যাচ্ছেন। এখানে যারা চাকরি করেন তাদের কাউকে আসতে দেখা যায় না বলেও জানান তারা।

পার্শ্ববর্তী কাজিরহাওলা কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১০টা ৪৫ মিনিট। আশেপাশের লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এখানকার কর্মচারীরা প্রতিদিন আসেন না। মাঝে-মধ্যে আসেন।

এছাড়াও, বেলা সোয়া ১১টায় নেতাবাজারের কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেটি বন্ধ দেখা যায়। সামনের দরজার ভিতর দিক থেকে তালা ঝুলানো আছে। স্থানীয়রা জানান, অনেক দিন আগে থেকেই ক্লিনিকটি বন্ধ রয়েছে। রোগরীরা এসে ফিরে যান। এখানে যারা চাকরি করেন তাদেরকে আসতে দেখা যাচ্ছে না।

বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে একই অবস্থা দেখা যায় ফুলখালী কমিউনিটি ক্লিনিকে।

স্থানীয়রা আরও জানান, গত বুধবার রিয়ামনি নামের এক গর্ভবতী নারী চিকিৎসা নিতে যান গন্ডাদুলা কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে গিয়ে সকাল থেকে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু, চিকিৎসক তো দূরের কথা, ওখানকার সংশ্লিষ্ট কাউকে তিনি পাননি। ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ থাকায় বাইরে বসে আপেক্ষা করছিলেন তিনি। পরে কাউকে না পেয়ে  দুপুর ২ পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

রিয়ামনির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি গর্ভবতী। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার জন্য ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। সারাদিন অপেক্ষা করে আবার ফিরে এসেছি। কাউকে পাইনি। ক্লিনিক তালা দেওয়া ছিল। তাই ভিতরে ঢুকতে পারিনি। বাইরেই বসেছিলাম।’

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার জুগিরহাওলা গ্রামের শারমিন বেগম জ্বরের কারণে কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়েছিলেন। ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় তিনি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে অসেন। পরে ইউনিক ডায়াগনস্টিক নামের একটি প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নেন। তার টাইফয়েড ধরা পড়লে সেখানকার চিকিৎসক ডা. তাজুন নাহার তার চিকিৎসা দেন।

নেতা গ্রামের খোদেজা বেগম বলেন, ‘নেতা কমিউনিটি ক্লিনিকটি আগে মাঝে-মধ্যে বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ সময় খোলা থাকতো। তবে করোনাভাইরাস আসার পর প্রায় এক মাস ক্লিনিকটি বন্ধ আছে। এখানে কেউ আসেন না। রোগীরা এসে আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন ডাক্তার আছে কিনা।’

‘আমরা ফোনে যোগাযোগ করেও ডাক্তারদের পাই না,’ যোগ করেন তিনি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে করোনাভাইরাসের এই সময়ে সরকারি ছুটি থাকায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২ পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্লিনিক বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘রাঙ্গাবালীতে যেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। সেহেতু এখানকার মানুষ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর নির্ভরশীল। তাই এগুলো বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

Comments

The Daily Star  | English
BTCL Logo

BTCL’s Tk 463Cr 5G Project: Huawei’s win marred by controversy

It is often said that government files move at a snail’s pace in Bangladesh, slowing down the speed of project implementation.

11h ago