কষ্টে আছেন ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা পাড়ের জেলেরা

করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে গিয়েও মাছের দেখা পাচ্ছেন না তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র পাড়ের জেলারা। নদী থেকে জাল ও নৌকা নিয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। ফলে, অনেক কষ্টে দিন পার করছেন এখানকার কয়েক হাজার জেলে পরিবার। কর্মহীন হয়ে বাড়িতেই অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।
জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে গেলেও মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে গিয়েও মাছের দেখা পাচ্ছেন না তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র পাড়ের জেলারা। নদী থেকে জাল ও নৌকা নিয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। ফলে, অনেক কষ্টে দিন পার করছেন এখানকার কয়েক হাজার জেলে পরিবার। কর্মহীন হয়ে বাড়িতেই অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।

জীবিকার জন্য এসব পরিবারগুলো নদীর উপর নির্ভরশীল। কিন্ত, জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করে কিছু মাছ শিকার করলেও তা দিয়ে চাল কেনার মতো টাকা জুটছে না। তাই জাল শুকিয়ে ঘরে এসে আবার পরের দিন ছুটে যান নদীর বুকে। অনেকেই পৈতৃক পেশা ছেড়ে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের মাঝিপাড়া গ্রামের জেলে সাধন চন্দ্র দাস (৪৬) বলেন, ‘নদীতে জল নেই, তাই মাছও নেই। মাঝ নদীতে গিয়েও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ৪ থেকে ৫ জন একসঙ্গে মিলে নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাল ফেলে মাছ পাই ৪ থেকে ৫ কেজি যা বিক্রি করে সামান্য আয় হয়। তাতে সংসার চলে না। কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরের ৬ থেকে ৭ মাস আমাদের এভাবে চলতে হচ্ছে। বাকি ৫ থেকে ৬ মাস মাছ পাই, কারণ নদীতে জল থাকে।’

একই গ্রামের জেলে বিষ্ণু চন্দ্রদাস (৫৬) বলেন, ‘জালে মাছ ধরা পড়ে না, কিন্তু সংসার চালাতে হবে। তাই স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাই। আমাদের কোনো সঞ্চয় নেই। ঘরগুলোও ঠিকঠাক মতো মেরামত করতে পারি না।’

রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের দাসপাড়ার সুরেন্দ্র নাথ দাস (৫৫) জানান, তাদের কষ্টের শেষ নেই। তবুও পৈতৃক পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। গ্রামের অনেক জেলে তাদের পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিনমজুর কৃষি শ্রমিক ও রিক্সা বা ভ্যান চালায়, আবার কেউ কেউ গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘জাল যার খাল তার- এ নীতি কাগজে কলমে থাকলেও আমরা বঞ্চিত। রাজনৈতিক নেতারা খাল দখল করে রেখেছেন। বাধ্য হয়েই তাদের শ্রমিক হয়ে কাজ করতে হয় আমাদের।’

তিস্তা পাড়ের দাসপাড়া গ্রামের জেলে নিখিল চন্দ্র দাস (৩৮) বলেন, ‘আমি গেল চার বছর ধরে রিক্সা চালিয়ে আয় করছি। পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশা ভালো লাগে না।’

কুড়িগ্রামের উলিপুরের তিস্তা পাড়ের মাঝিপাড়ার জেলে নারায়ণ চন্দ্র দাস (৭০) বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর উপর প্রায় ৮০টি জেলে পল্লীর ১০ হাজার পরিবার নির্ভরশীল। অধিকাংশ জেলে পরিবারের বাড়ি-ঘরের অবস্থা ভালো না। অনেকের নিজের বসতভিটাও নেই। তবুও আমরা বাঁচি নদীকে ঘিরে, যেদিন নদী থাকবে না সেদিন আমাদের ঐতিহ্যবাহী জেলে পল্লীও থাকবে না।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসমত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাজনৈতিক চাপে খালগুলো জেলেদের দখলে নেই, এগুলো চলে গেছে  মৎস্যজীবীদের দখলে। এক্ষেত্রে আমরাও নিরুপায়, তবুও জেলেদের জন্য চেষ্টা করি। জেলে পরিবারগুলো খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন।’  

Comments

The Daily Star  | English
Israel's genocide in Gaza

How the US is arming Israel's genocide in Gaza

US weapons, provided with visible enthusiasm to the Israeli occupation forces, are being used to commit war crimes and genocide in Gaza.

10h ago