করোনাভাইরাস

কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের উৎস জানে না আইইডিসিআর

সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইইডিসিআর একটি ক্লাস্টারের প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছে। এমন রোগীকে বলা হয় ‘পেশেন্ট জিরো’। তবে তিনি কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইইডিসিআর একটি ক্লাস্টারের প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছে। এমন রোগীকে বলা হয় ‘পেশেন্ট জিরো’। তবে তিনি কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি ক্লাস্টারে তিন থেকে ৩০ জন রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ড. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ক্লাস্টারগুলো এবং কীভাবে ভাইরাসটি কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে তা চিহ্নিত করেছি। কিন্তু ক্লাস্টারের প্রথম রোগী কীভাবে সংক্রমিত হয়েছিল তা সনাক্ত করতে পারিনি। এটি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়া হলো এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করার মূল চাবিকাঠি এবং যদি উৎস পাওয়া না যায় তাহলে সংক্রমণ বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ হবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজিস্ট এবং সহকারী অধ্যাপক জাহিদুর রহমান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়া) শুরু হয়েছে আর আমরা এখন আছি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরার চতুর্থ পর্যায়ে, যার অর্থ মহামারি।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘উদ্বেগের ব্যাপার হলো, আমরা যদি উৎস খুঁজে না পাই তাহলে কীভাবে এর ছড়িয়ে পরা বন্ধ করব?’

এই ভাইরোলজিস্ট আরও বলেন, ‘আমাদের লকডাউন আরও কঠোর করতে হবে। লকডাউন করা এলাকায় লক্ষণযুক্ত ও লক্ষণ ছাড়া সবাইকে পরীক্ষা করতে হবে।’

বর্তমানে সারা দেশে শহর এবং গ্রামের প্রায় প্রতিটা কোণে মানুষ সংক্রমিত হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক ফ্লোরা  জানান, সবাই যদি কঠোর ভাবে সামাজিক দূরত্ব বিষয়ক গাইডলাইন না মানে তাহলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির আকার নেবে।

দেশব্যাপী অফিস ও গণপরিবহন বন্ধের মধ্যেই ৪ এপ্রিল থেকে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে এই ভাইরাসে সংক্রমিতের সংখ্যা। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে প্রায় ৪০টিতে নিশ্চিত কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে।

গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় প্রাপ্ত পরীক্ষার ফলাফলে ১৮২ জনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে সংক্রমিতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৩ এ এবং মোট মৃতের সংখ্যা ৩৯।

উপচে পড়া ভিড়ের শহর ঢাকা এই রোগের কেন্দ্রস্থল হবে তা আশ্চর্য হওয়ার কিছু নয়। গত রোববার পর্যন্ত চিহ্নিত কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর ৫২ শতাংশই রয়েছেন এই রাজধানী শহরে।

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমিতরা ঢাকা হয়েই যাতায়াত করেছেন এবং এখানে লকডাউন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়নি। দেশের বাইরে থেকে আসা অনেকেই জানিয়েছিলেন তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে থাকবেন। তবে আমরা পরে দেখতে পেলাম যে তারা ঢাকায় থাকছেন।’

টোলারবাগে কোথায় সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা শনাক্ত করতে পেরেছে আইইডিসিআর। তবে প্রথম রোগী কীভাবে সংক্রমিত হয়েছিল তা সনাক্ত করতে পারেনি। একই অবস্থা বাসাবোর ক্ষেত্রেও। সেখানেও পাওয়া যায়নি প্রথম রোগীর সংক্রমণের উৎস।

ঢাকার পর বেশি সংক্রমিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। গত রোববার পর্যন্ত এই জেলায় করোনা সংক্রমিত ১০৭ জন নিশ্চিত রোগী পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় জনসমাগম বেশি হওয়ার কারণে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। কিন্তু প্রথম রোগী কীভাবে সংক্রমিত হয়েছিল তা তারা সনাক্ত করতে পারেনি।

অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, নারায়ণগঞ্জে জনসমাগম এবং বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সংক্রমণ ছড়ানোর সব ধরনের কারণই উপস্থিত ছিল।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীরকে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার উৎস পাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা জানি না এবং আমরা এটা নিয়ে কাজও করছি না।’ তিনি জানান, তারা এখন রোগীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসা করার দিকে মনোযোগী।’

রাজধানীর বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা ৮ এপ্রিল থেকে লকডাউন করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মানুষ এখনও রাস্তায় চলাফেরা করছেন। যার ফলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পরার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশ সংক্রমণের চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চতুর্থ পর্যায়ের অর্থ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পরছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এবং সারা দেশে সংক্রমিত অনেক বড় ক্লাস্টার রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মোজাহেরুল হক বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি নেই যে আমরা চতুর্থ পর্যায়ে আছি এবং পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করেছে।’

তিনি জানান, সরকার যদি উপযুক্ত কৌশলের মাধ্যমে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নির্ধারণ করে তাহলে ভাইরাসটি মোকাবিলা করা এবং সঙ্কট কাটিয়ে উঠা সহজ হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বলেছিলেন, ‘আমাদের ইতোমধ্যেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। সেটা যাতে না বাড়ে, সেদিকে আমাদের খেয়াল করতে হবে।’

ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকতে এবং নির্দেশনা মেনে চলতে আহ্বান জানান মন্ত্রী।

Comments