ডাক্তারদের জন্যে প্রস্তাবিত হোটেল, অনেকগুলোর কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থান অথবা কোয়ারেন্টিনের জন্য রাজধানীর ২০টি হোটেলের নাম প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে এই প্রস্তাবিত হোটেলের তালিকা দেওয়া হয়।
ডাক্তারদের জন্য প্রস্তাবিত একটি হোটেল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থান অথবা কোয়ারেন্টিনের জন্য রাজধানীর ২০টি হোটেলের নাম প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে এই প্রস্তাবিত হোটেলের তালিকা দেওয়া হয়।

গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এই উদ্যোগটির প্রশংসা করেন চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা।

তবে জানা গেছে, প্রস্তাবিত হোটেলের মধ্যে বেশ কয়েকটি করোনা যুদ্ধের এই সম্মুখ যোদ্ধাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এখনও প্রস্তুত না।

প্রস্তাবিত তালিকায় থাকা ২০টির মধ্যে পাঁচটি হোটেলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। পাঁচটি হোটেলের মধ্যে তিনটি হোটেল থেকে জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না এবং তাদের সঙ্গে কেউ এ বিষয়ে আলোচনা করেনি।

অপর দুটি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ থাকায় সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন কাজ বলে তারা জানান।

গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালে সেবাদানকারী ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থান বা কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্যে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওসহ রাজধানীর ২০টি হোটেলে ব্যবস্থা করছে সরকার।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত রোববার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল হাসানের সই করা চিঠি পাঠানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে, হোটেল সালিমার ইন্টারন্যাশনাল থেকে জানানো হয় যে গত ২৬ মার্চ থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ আছে এবং বর্তমানে সেখানে কোনো কর্মচারী নেই।

হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার এম.জে. রহমান জাহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি এটা জেনেছি গণমাধ্যম থেকে। আমাদের সঙ্গে কেউ কোনো আলোচনা করেনি এবং আমাদের কি করনীয় তাও আমরা জানি না।’

প্যাসিফিক লেক ভিউ হোটেল এন্ড রিসোর্ট জানিয়েছে, তারা কিছুই জানতেন না এবং দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালেই এ বিষয়টি জানলেন।

হোটেলটির পরিচালক রাফি হাসান বলেন, ‘মার্চ থেকে আমাদের হোটেল বন্ধ রয়েছে। এই বিষয়ে সরকার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কেউই আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি।’

বন্ধ পাওয়া যায় হোটেল রেনেসাঁ। হোটেলের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই হোটেল বন্ধ আছে। হটলাইন নম্বরটির কল আমার ফোন নম্বরে ফরোয়ার্ড করা থাকায় আমি কলটি রিসিভ করেছি।’

প্রস্তাবিত তালিকায় থাকা একটি হোটেলের কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা কয়েকদিন আগে রুমের সংখ্যা এবং আরও কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের হোটেল ব্যবহার করা হবে, এমন কিছুই জানানো হয়নি। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আমাদের হোটেল কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব কিভাবে এবং হোটেলের ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করব কিভাবে?’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আমিনুল হাসান বলেন, ‘আমরা শুধু হোটেলগুলোর নাম প্রস্তাব করেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়।’

হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কে বলতে পারবে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হোটেলগুলো এখনও রিকুইজিশন করা হয়নি।’

হোটেলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হোটেলগুলোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে।’

যখন বলা হলো যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে এটা মন্ত্রনালয় দেখবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে, তখন তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একজন কর্মকর্তাকে এ কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

কর্মকর্তার নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই মূহূর্তে ঐ কর্মকর্তার নাম মনে করতে পারছি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাদের বলেছিল যে তাদের জন্য কোনো হোটেলই পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম থেকে মানুষ জানছে যে আমাদের জন্য চার তারকা-পাঁচ তারকা মানের হোটেল বরাদ্দ করা হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি অনুযায়ী, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত হোটেল হিসেবে উত্তরার ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের জন্য প্রস্তাবিত হোটেলের মধ্যে রয়েছে মহাখালীর হোটেল অবকাশ, হোটেল জাকারিয়া, হোটেল রেনেসাঁ। এছাড়া ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, প্যাসিফিক লেক ভিউ অ্যান্ড রিসোর্ট এবং লা-মেরিডিয়ান।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের জন্য উত্তরার হোটেল মেফোলিফ ও হোটেল মিলিনা এবং লালকুঠি বাজারের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য মিরপুর-১ এর গ্র্যান্ড প্রিন্স হোটেল, শ্যামলীর হোটেল শ্যামলী এবং মিরপুর-১ এর হোটেল ড্রিমল্যান্ডের নাম প্রস্তাব করা হয়।

কাকরাইলের রাজমনি ঈশা খাঁ, পল্টনের ফারস হোটেল এবং বিজয় নগরের হোটেল ৭১ এর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বাবু বাজারের মহানগর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরতদের জন্য।

কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত হোটেলের নাম রাজারবাগের হোটেল সাগরিকা, হোটেল গ্র্যান্ড সার্কেল ইন এবং কমলাপুরের হোটেল সালিমার।

আরও পড়ুন: চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রস্তাবিত হোটেলের তালিকা

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

7h ago