‘এন-৯৫ মাস্ক পাওয়া বা আনা তো খুব কঠিন কিছু না’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ডাক্তারের ভিডিও কনফারেন্সে মাস্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ডাক্তাররা অভিযোগ করেছিলেন, তাদের অত্যন্ত নিম্নমানের মাস্ক দেওয়া হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় এন-৯৫ মাস্ক পাননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছিলেন, এন-৯৫ মাস্ক আমেরিকা তৈরি করে এবং তারা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে চীন থেকে এন-৯৫ মাস্কসহ পিপিই, কিট এনেছেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ডাক্তারের ভিডিও কনফারেন্সে মাস্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ডাক্তাররা অভিযোগ করেছিলেন, তাদের অত্যন্ত নিম্নমানের মাস্ক দেওয়া হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় এন-৯৫ মাস্ক পাননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছিলেন, এন-৯৫ মাস্ক আমেরিকা তৈরি করে এবং তারা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না।

তারপর থেকেই আলোচনা হচ্ছে, এন-৯৫ একটি স্ট্যান্ডার্ড। আমেরিকা ছাড়াও এই মানের মাস্ক পৃথিবীর আরও বেশ কয়েকটি দেশ তৈরি করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডাক্তারদের এই মাস্ক দিতে পারছে না। কিন্তু, জানা গেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম চীন থেকে এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে এসেছেন।

ব্যক্তিগত উদ্যোগেই পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, থার্মোমিটার ও দ্রুত শনাক্তকরণ কিট এনেছেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এসব জিনিস কী পরিমাণে এনেছেন, কীভাবে এনেছেন, অনুমতি নিয়ে এনেছেন কি না, এসব নিয়ে আজ রোববার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

এখন পর্যন্ত কী কী এনেছেন?

আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিট, পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, থার্মোমিটার এগুলো আনা শুরু করেছি। আজকে ২০ হাজার এন-৯৫ মাস্ক এনেছি। আগেও ১৮-২০ হাজারেরও মতো এনেছি। পিপিই যেটা চীনের চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন, চার বারে সেটা প্রায় ৪০ হাজারের মতো এনেছি। এর মধ্যে আজকে এনেছি প্রায় সাত-আট হাজার। ডিজিটাল থার্মোমিটার এনেছি আট হাজারের মতো। সার্জিক্যাল মাস্ক এনেছি এখন পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি। এ ছাড়া, দ্রুত শনাক্তকরণ কিট, যেটা দিয়ে ১৫ মিনিটে করোনা পরীক্ষা করা যাবে, সেটা এনেছি ৭০-৮০ হাজারের মতো।

এত কিট এনেছেন?

আমার কাছে ৭০-৮০ হাজারের মতো কিট আছে। আমি নিজ উদ্যোগে এগুলো আনিয়েছি। যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন হয় বা অন্যান্য মেডিকেলে কারো প্রয়োজন হয় বা কারো যদি প্রয়োজন হয়, নাগরিক সেবার স্বার্থে এগুলো ব্যবহার করবে, তাহলে আমার কাছ থেকে নিতে পারবে। প্রাইভেট মেডিকেলের অনেকে না বলার শর্তে এগুলো নিচ্ছে এবং ফলাফলও পাচ্ছে। এই কিটগুলো দিয়ে ১৫-১৭ মিনিটেই ফলাফল জানা যায়।

কিটগুলোর দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমাকে উপহার হিসেবে দিয়েছে। চীনের কুনমিং শহরের মেয়র ও আমার সেখানকার বন্ধুরা আমাকে প্রথম পর্যায়ে উপহার হিসেবে এগুলো দিয়েছিলেন।’

এগুলো কি চীন থেকে এনেছেন?

সবকিছুই চীন থেকে এনেছি। ওখানকার কয়েকটি শহরের মেয়র ও গভর্নর আছে পরিচিত, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ ছাড়া, আমার বন্ধুরা রয়েছেন সেখানে, তাদের মাধ্যমে আমি এগুলো এনেছি। এ ছাড়া, সিঙ্গাপুর থেকেও কিছু থার্মোমিটার এনেছি। যেগুলো স্ক্যানারের মতো। সেগুলো বাসা-অফিসের সামনে রাখলে, সেখান দিয়ে কেউ গেলে স্ক্যান করে শরীরের তাপমাত্রা অটোমেটিক উঠে যাবে।

চীন থেকে কারা এগুলো পাঠাচ্ছেন এবং এগুলো আনতে কতদিন লাগে?

চীনের কুনমিং, বেইজিং, গুয়াংজো, সাংহাইসহ কয়েকটি শহরে বন্ধুরা আছে। তাদের বললে তারা সংগ্রহ করে এগুলো পাঠায়। তারা মূলত, বিভিন্ন জায়গা থেকে এগুলো সংগ্রহ করে দেয়। এ ছাড়া, চীনের কুনমিং শহরের মেয়রও অনেক সহায়তা করছেন।

সময়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আমি যেদিন বলছি, এর দুই থেকে তিন দিনে মধ্যেই তারা পাঠাচ্ছেন। অর্থাৎ, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই এগুলো নিয়ে আসা যাচ্ছে।

পরিমাণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার যা লাগবে, আমি বলি। তারা দেখা গেছে, কাছাকাছি পরিমাণই দেয়। একটু কম-বেশি।’

এগুলো পরিবহণের ব্যাপারে…

কার্গো প্লেন ভাড়া করে আনা যায়। আবার যাত্রীবাহী প্লেনেও ভাড়া দিয়ে আনা যায়। আমি দুইভাবেই এনেছি। যেমন: আজকের প্লেনে পাঁচ জন যাত্রী ছিলেন। বাকি সিটের ভাড়া আমি দিয়ে এনেছি। আজকে পর্যন্ত চার বার আনিয়েছি।

চীনে পিপিই বা মাস্ক অ্যাভেইলেবল কি না?

এন-৯৫ মাস্ক অতটা অ্যাভেইলেবল না। কিন্তু, আমি তাদের অনুরোধ করেছি যে, আমাদের যেহেতু বিপদ, সাহায্য করতে। তাই তারা সংগ্রহ করে দিয়েছে। এ ছাড়া, অন্যগুলো হয়তো অ্যাভেইলেবল পাওয়া যাচ্ছে। তবে, এ ধরনের জিনিসের দাম এখন সেখানে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এগুলো কিনতে খরচ কেমন পড়ে?

আসলে খরচের ব্যাপারটা বলা কঠিন। কারণ দেখা গেছে, সেখানে বন্ধু-বান্ধব আছে। আমি প্রথম যখন তাদের বলেছি, তারা পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি কিছু টাকা দিয়েছি। যেহেতু আমাদের বন্ধুত্ব আছে, তাদের বললেই তারা পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমি হয়তো কিছু টাকা দেই। বাকি রাখি, আবার দেবো, এমন। তবে, এখনো কোনো চূড়ান্ত হিসাব করি নাই। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত হয়তো ৮-১০ কোটি টাকার মতো দিয়েছি। আরও দেবো। বলছি, তারা পাঠাচ্ছে।

দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বিশ্বব্যাপী এন-৯৫ মাস্কের সংকট রয়েছে। কিন্তু, আপনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঠিকই আনতে পারছেন।

এখন এ ব্যাপারে আমি তো কিছু বলতে পারবো না যে উনারা কোনভাবে কোন প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করছেন। উনারা যদি আমার সহযোগিতা চায়, যেহেতু দেশে ক্রাইসিস চলছে, আমি যতটুকু চিনি বা জানি আমি সাহায্য করতে পারবো। মূল কথা, মানুষকে রক্ষায় যা যা করা দরকার, আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করলে সেগুলো দ্রুত করতে পারবো। উনারা কার মাধ্যমে এগুলো আনতে চেষ্টা করছেন জানি না। যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, অবশ্যই বড় কারো মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে। অবশ্যই পাওয়া যাবে। এগুলো পাওয়া বা আনা তো খুব কঠিন কিছু না। সঠিক প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করলে অবশ্যই পাওয়া যাবে।

এগুলোর জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না?

অনেকে বলছেন এগুলো অনুমোদন ছাড়াই আনা হচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে আমি যদি মেয়র হিসেবে অনুমোদন নিয়ে এগুলো আনতে যাই, তাহলে ছয় মাসের মতো সময় লাগবে। এখন এর মধ্যে যদি এই রোগে আমার এলাকার মানুষ মারা যায়, তাহলে এগুলো এনে কী করবো? আইন তো হচ্ছে মানুষের জন্য। মানুষের প্রয়োজনে আমরা এ জিনিসটা করি। এখন কেউ যদি অন্য উদ্দেশ্য চিন্তা করে, তাহলে তো আমার জন্য বলা কঠিন। সিটি করপোরেশন বা সরকারের নয়, নিজ টাকায় মানবিক কারণে চীন থেকে এগুলো আমি সংগ্রহ করে এনেছি। আমাদের হাসপাতাল বা আমাদের আশপাশের হাসপাতালে এগুলো ব্যবহার করছি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago