বাংলাদেশে করোনায় সুস্থ হওয়ার চেয়ে মৃত্যুর হার বেশি
বিশ্বে হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ হওয়ার থেকে মৃত্যুর হার বেশি, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে সারা দেশে মোট সনাক্ত চার হাজার ৯৯৮ জনের মধ্যে ১৪০ জন মারা গেছেন এবং ১১৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করছেন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জড়িত করতে না পারার বিষয়টিকে।
বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম নভেল করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এই সংখ্যা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ এপ্রিল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ৪২ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৩৯ জন। এদিন মোট ৭২২ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পরের দিন, মৃতের সংখ্যা ৪৬ এ দাঁড়ালেও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা থেকে যায় আগের দিনের সমানই, অর্থাৎ ৪২ জন।
এরপর থেকেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল মৃত্যুর হার ছিল দুই দশমিক আট শতাংশ এবং সুস্থ হওয়ার হার ছিল দুই দশমিক দুই শতাংশ।
বাংলাদেশে সংক্রমণ শুরু থেকে নিয়ে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ছিল ৪৮তম দিন।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে প্রথম ৪৮ দিনে সুস্থ হওয়ার হার ছিল যথাক্রমে সাত দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২৩ দশমিক ছয় শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানে সংক্রমণ শুরু হয় যথাক্রমে ৩০ জানুয়ারি ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ৪৯তম দিনে এই দুই রাষ্ট্রে মৃত্যু হার ছিল যথাক্রমে দুই দশমিক শূণ্য ছয় শতাংশ এবং এক দশমিক ৬৪ শতাংশ।
একইভাবে ৪৮তম দিনে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, তুরস্ক ও ফ্রান্সে সুস্থ হওয়ার হার যথাক্রমে এক দশমিক দুই শতাংশ, ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ, ছয় দশমিক ১৬ শতাংশ, ২০ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।
উল্লেখযোগ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ে যথাক্রমে ২২ ও ২৪ জানুয়ারি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ৪২তম দিনে এবং ফ্রান্সে ৩৭তম দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ পার করে।
সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করেছে ৩০ দিনে।
গতকাল শনিবার প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে সুস্থ হওয়ার হার ছিল যথাক্রমে ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ২৩ দশমিক এক শতাংশ। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, তুরস্ক ও ফ্রান্সে সুস্থ হওয়ার হার যথাক্রমে ১১ দশমিক নয়, ৩১ দশমিক তিন, ৪২, ২০ দশমিক সাত এবং ২৭ দশমিক দুই শতাংশ। Covid.geobd.com এ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই পাঁচটি দেশ করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু দেখেছে।
বাংলাদেশ গতকাল আরও দুটি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এনিয়ে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬০টি জেলায় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লো।
গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটায় নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ এ মারা গেছেন আরও নয় জন। এনিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪০ জনে।
২৪ ঘণ্টায় মোট ৩০৯ জন নতুন রোগী সনাক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান সংবাদ সম্মেলনে। এনিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় চার হাজার ৯৯৮ জনে।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা যোগ করেন, এই ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট তিন হাজার ৩৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এছাড়াও, সাভার ও কুষ্টিয়ায় আরও দুটি পরীক্ষাগার কোভিড-১৯ এর নমুনার পরীক্ষা শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
Covid.geobd.com এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৩০ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে মতামত নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বে-নজির আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, সরকার প্রথম থেকেই গুছিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেনি।
তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই যদি সুসংহত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো, তাহলে সুস্থ হওয়া রোগীর হার আরও অনেক বেশি হতো।’
করোনা রোগীদের জন্য সরকার বিশেষ হাসপাতালে মাঝারি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন বলে উল্লেখ করে বে-নজির আহমেদ জানান, এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা জরুরি ছিল।
তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের জন্য আরও ভালো পরামর্শ দিতে পারতেন। এতে করে মৃত্যুর হার কমানো যেত।’
তিনি জানান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও তাদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
Comments