পরীক্ষার সব ধাপ সম্পন্নের আগেই করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন নিয়ে আলোচনা

পরীক্ষার কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছে নরওয়ের অসলোভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই)।
Corona vaccine
ছবি: রয়টার্স

পরীক্ষার কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছে নরওয়ের অসলোভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই)।

ভ্যাকসিন গবেষণায় কাজের গতি বাড়াতে এই প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিইপিআই-এর প্রধান নির্বাহী রিচার্ড হ্যাটশেট গতকাল শনিবার জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন মানবদেহে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে আছে। এখনো আরও দুটি ধাপ বাকি। তারপরও এর উৎপাদন শুরু করা যেত। শুধুমাত্র মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই ভ্যাকসিনগুলো ডিজাইন করা হয়েছে।

ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস কোভিড-১৯ আপডেট ওয়েবকাস্টে রিচার্ড হ্যাটশেট বলেছেন, ভ্যাকসিন উৎপাদনের এই চিন্তা সবার সময় বাঁচাতে পারে। এতে কারো কোনো ক্ষতি বা নিরাপত্তাহানির সম্ভাবনা নেই।

তিনি মনে করেন, পুরোপুরি পরীক্ষা অর্থাৎ মানবদেহে তিন ধাপে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার আগেই ভ্যাকসিন ব্যাপকহারে উৎপাদনে যাওয়ার দরকার নেই। পরীক্ষার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিইপিআই তাদের এমন পরিকল্পনার কথা দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসেন-এ প্রথম প্রকাশ করে গত মাসে।

‘এভাবে সবকিছু চলতে থাকলে তা আরও ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে’ উল্লেখ করে হ্যাটশেট বলেন, ‘আমরা যদি অল্প সংখ্যায় ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে চাই… সাধারণত আমাদের লক্ষ্য থাকে ভ্যাকসিনের কাজ শুরুর ১২ মাস থেকে ১৮ মাসের মধ্যে তা বাজারে আনার। আমরা এতটুকু ঝুঁকি নেওয়ার মতো অবস্থায় আছি।’

তার মতে, আগামী কয়েক বছরে ভ্যাকসিন সরবরাহের কাজে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে।

‘যদি আমরা করোনার প্রাদুর্ভাব এক মাসও কমিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমরা শত শত বিলিয়ন ডলার বাঁচাতে পারবো। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এই হিসাব বিবেচনায় নিতে হবে,’ যোগ করেন হ্যাটশেট।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে তিনটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে সেগুলোসহ কোভিড-১৯ গবেষণাকাজে তহবিল দিয়েছে সিইপিআই।

মার্কিন ওষুধপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডের্না ও ইনোভিও কোভিড-১৯ এর দুটি ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এছাড়াও, চীনের ক্যানসিনো বায়োর ভ্যাকসিনটি চলতি মাসের শুরুতে দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শেষ করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মডের্না ইতোমধ্যে এক বার্তায় তাদের ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ সহায়তা চেয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

চীনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১১ জন

নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর উৎসস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনার পরও সেখানে গতকাল নতুন ১১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

আজ রবিবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে।

আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ছয় জন স্থানীয় অধিবাসী উল্লেখ করে কমিশন জানায়, একজন ছাড়া বাকি সবাই চীনের উত্তরপূর্ব রুশ সীমান্ত সংলগ্ন হেইলংজিয়াং প্রদেশের।

সিএনএন জানিয়েছেন, চীন-রাশিয়া সীমান্তে নতুন এই আক্রান্তের সংবাদ মহাপ্রাচীরের দেশে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। চীনের অধিকাংশ অঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আসলেও দেশটির উত্তরাঞ্চলে তা আবার নতুন করে ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের হিসাব মতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৮২৭ জন। মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩২ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৯ লাখ, মৃত্যু ৫৩ হাজারের বেশি

পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনার প্রাদুর্ভাব এতোটাই ছড়িয়েছে যে স্থানীয় সময় (ইস্টার্ন টাইম) গতকাল শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত নয় লাখ ৩৮ হাজার ৭২ জন। মারা গেছেন অন্তত ৫৩ হাজার ৭৫১ জন।

আক্রান্ত ও মৃতের এ তথ্য উল্লেখ করে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ রাজ্যেই করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মতে, কারোনায় আক্রান্ত হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী, জেলখানা ও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল।

আরও পড়ুন:

করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়াল

Comments